জম্মু-কাশ্মিরের বিশেষ মর্যাদার বিলোপ মোদি সরকারের ‘সাংবিধানিক ক্যু’

জম্মু-কাশ্মিরের বিশেষ মর্যাদার বিলোপ মোদি সরকারের ‘সাংবিধানিক ক্যু’

কাশ্মীর সম্পর্কে ভারতের বর্তমান ক্ষমতাসীন সরকারের গৃহীত সাম্প্রতিক পদক্ষেপে যে উত্তেজনাকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে তাতে সিপিবি নেতৃবৃন্দ গভীর উদ্বেগ ও আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন বাম রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ।

নেতৃবৃন্দ জম্মু-কাশ্মীরের নিপীড়িত মুক্তিকামী জনগণের সাথে সংহতি ও একাত্মতা প্রকাশ করেন। তারা বলেন, ভারতের সংবিধান থেকে জম্মু-কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদার বিলোপ মোদি সরকারের ‘সাংবিধানিক ক্যু’।

সিপিবির সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম এবং সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ শাহ আলম মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে বলেছেন, ভারতের কমিউনিস্ট, প্রগতিশীল ও ণতান্ত্রিক শক্তি এবং ভারতের সাধারণ জনগণ কাশ্মীর ইস্যুতে ভারত সরকারের গৃহীত সাম্প্রতিক পদক্ষেপের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে এবং আন্দোলন গড়ে তুলেছে। সিপিবি তাদের এই ন্যায়সঙ্গত সংগ্রামের সাথে সংহতি জানাচ্ছে।

নেতৃবৃন্দ আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, ভারতের জম্মু ও কাশ্মীর রাজ্যে যে বিরাট সংকটজনক পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে তা বাংলাদেশ এবং গোটা উপমহাদেশের স্থিতিশীলতার জন্য বিরাট হুমকি সৃষ্টি করেছে।

নেতৃবৃন্দ বিবৃতিতে আরো বলেন, এ পরিস্থিতি ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা ও সামরিক শক্তির মহড়া আরো বাড়াবে। একইসাথে এই পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে সাম্রাজ্যবাদ ও সাম্প্রদায়িক শক্তি পরিস্থিতিকে আরও ঘোলাটে করে তুলবে। ফলে পরিস্থিতি আরও উত্তেজনাকর ও জটিল হয়ে যাবে।

সুতরাং, এ অঞ্চলের প্রতিটি দেশের জনগণের শান্তি ও নিরাপত্তার স্বার্থে জম্মু-কাশ্মীরের জনগণের দীর্ঘদিনের সংগ্রাম ও আকাঙ্খার প্রতি সম্মান জানিয়ে জম্মু-কাশ্মীরের জনগণ এবং সংশ্লিষ্ট সকলের সম্মিলিত আলোচনার ভিত্তিতে সমস্যার আশু সমাধান হওয়া জরুরি।

ফলে, জবরদস্তির বদলে অধিকতর গণতন্ত্র নিশ্চিত করে, ভারতের সংবিধান স্বীকৃত ধর্মনিরপেক্ষতার নীতি, কাশ্মীরের চলমান বিশেষ সাংবিধানিক মর্যাদা এবং জাতি গোষ্ঠীর বৈচিত্রের বৈশিষ্ট্য রক্ষা করেই কাশ্মীর সমস্যার সমাধান করতে হবে।

এদিকে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেছেন, ভারতের সংবিধান থেকে জম্মু-কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদার বিলোপ মোদি সরকারের ‘সাংবিধানিক ক্যু’। এই পদক্ষেপকে ভারতের জনগণের জন্যেও আত্মঘাতি।

বুধবার এক বিবৃতিতে তিনি আরো বলেন, কাশ্মীর সংকটের সামরিক সমাধান নেই, সংকট সমাধান করতে হবে রাজনৈতিকভাবে। তিনি ভারতীয় সংবিধানের ৩৭০ ও ৩৫ এ ধারা অনুযায়ী জম্মু-কাশ্মীরের স্বতন্ত্র ও বিশেষ মর্যাদা বাতিল করে রাষ্ট্রপতির শাসনে নিয়ে আসার সিদ্ধান্তে তীব্র ক্ষোভ ও নিন্দা জানান।

তিনি বলেন, ভারতীয় লোকসভায় বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকা সত্ত্বেও লোকসভাকে পুরোপুরি এড়িয়ে চোরাগোপ্তা কায়দায় যেভাবে জম্মু-কাশ্মীরের মুক্তিকামী জনগণের সাংবিধানিক অধিকার কেড়ে নেয়া হল তা উগ্র হিন্দুত্ববাদী ও উগ্র জাতীয়তাবাদী চরম অগণতান্ত্রিক ফ্যাসিবাদী পদক্ষেপেরই বহিঃপ্রকাশ।

এই অধ্যাদেশের মধ্য দিয়ে মোদি সরকার ভারতের সাথে জম্মু ও কাশ্মীরের সংযুক্তির সাংবিধানিক ও ঐতিহাসিক সেতুবন্ধনকে কার্যতঃ ছুড়ে ফেলে দিয়েছে। মোদি সরকারের এই পদক্ষেপ আগুনে ঘি ঢেলে দেবার সামিল। এই পদক্ষেপের মধ্য দিয়ে জম্মু কাশ্মীরের জনগণের আত্মনিয়ন্ত্রণের প্রশ্নের রাজনৈতিক সমাধানের পথ পুরোপুরি বন্ধ করে দিয়ে জম্মু-কাশ্মীরের বিজেপি নেতৃত্বাধীন ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের নিরঙ্কুশ সামরিক দখলদারিত্ব পাকাপোক্ত করার রাস্তা প্রশস্ত করা হল। উপত্যকায় জঙ্গিবাদী তৎপরতা বিস্তৃত হবার রাস্তাও খুলে দেয়া হল।

বিবৃতিতে তিনি বলেন, কাশ্মীরের ভারতভুক্তির চুক্তিসমূহ বিলুপ্ত হলে ভারতভুক্তির চুক্তিরও কোন বৈধতা থাকবে না। ৩৭০ ধারা বিলুপ্তির অর্থ কাশ্মীরের ভারতভুক্তির চুক্তিরও বিলোপ সাধন। এই অবস্থায় জম্মু-কাশ্মীরের জনগণ নিজেদের আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য ভারত, পাকিস্তান ও চীনের রাজনৈতিক ও সামরিক খবরদারির বাইরে কি পথ বেছে নেবে একান্তভাবে তা কাশ্মীরের জনগণকেই নির্ধারণ করতে হবে। আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকারের প্রশ্নে কাশ্মীরের জনগণের প্রতি উপমহাদেশের শান্তিকামী জনগণসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমর্থন অব্যাহত থাকবে এটাই প্রত্যাশিত।

এমআই