খালেদা জিয়ার অসুস্থতা নিয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বক্তব্য ষড়যন্ত্রের অংশ: মির্জা আলমগীর

খালেদা জিয়ার অসুস্থতা নিয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বক্তব্য ষড়যন্ত্রের অংশ: মির্জা আলমগীর

বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে দুই দিনের মানববন্ধন কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বিএনপি। রবিবার সকালে এক সংবাদ সম্মেলনে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এই কর্মসূচি ঘোষণা করেন। সংবাদ সম্মেলনে তিনি অভিযোগ করেন, বেগম খালেদা জিয়ার শারিরীক অবস্থা নিয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বক্তব্য ষড়যন্ত্রের অংশ।

তিনি বলেন, আমরা দেশনেত্রীর মুক্তির দাবির পক্ষে কেন্দ্রীয়ভাবে আগামী ১১ সেপ্টেম্বর ঢাকা মহানগরে মানববন্ধন এবং ১২ সেপ্টেম্বর সারাদেশে মানববন্ধন কর্মসূচি ঘোষণা করছি। এরপরে আমাদের অঙ্গসংগঠনগুলো এই ধরনের মানববন্ধন ও সমাবেশের কর্মসূচি পরপর দিয়ে আসতে থাকবে।

মির্জা আলমগীর বলেন, আমরা পরিস্কার ভাষায় সরকাররের কাছে বলতে চাই, অবিলম্বে আইনগতভাবে প্রাপ্য তার যে জামিন, সেই জামিন তাকে দেয়া হোকে এবং মুক্ত করা হোক। অন্যথায় দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের যেকোনো অবণতি, যেকোনো পরিণতির জন্যে সম্পূর্ণভাবে এই অনির্বাচিত সরকারই দায়ী থাকবে।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, এই কর্মসূচির সঙ্গে আরো কর্মসূচি যুক্ত হবে সেটা হলো: আমরা যে বিভাগীয় শহরে জনসভা করছিলাম -এটা কনটিনিউ করবো। আগামী ২৬ সেপ্টেম্বর ময়মনসিংহে দেশনেত্রীর মুক্তির দাবিতে সমাবেশ হবে, ২৯ সেপ্টেম্বর হবে রাজশাহীতে এবং আমরা আশা করছি সিলেটে ২১ তারিখ সমাবেশের সম্ভাবনা আছে। রংপুরেও হবে তারপরে। আমরা যে পরিবেশে বাস করছি, যে পরিস্থিতিতে বাস করছি তার মধ্যে যা কিছু করা সম্ভব গণতান্ত্রিক ন্যুনতম যে স্পসটুকু পাচ্ছি সেগুলোকে আমরা কাজ লাগানোর চেষ্টা করব।

বেগম খালেদা জিয়ার জন্য প্যারোলে মুক্তির আবেদন করবেন কিনা প্রশ্ন করা হলে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘এটা আপনারা (সাংবাদিক) বহুবার জিজ্ঞাসা করেছেন। প্যারোল চাওয়ার অধিকার তো আমাদের নাই। প্যারোল চাইতে পারেন বন্দি নিজে। উনি তো চাননি এখন পর্যন্ত। বলেছেন যে, আমি প্যারোল চাচ্ছি না। ভবিষ্যতে চাইবেন কিনা আমরা বলতে পারবো না। কিন্তু উনি এখন পর্যন্ত প্যারোল চাননি। আর আমরা তো প্যারোল চাইনি।’

বেগম জিয়ার স্বাস্থ্যের বর্তমান অবস্থা তুলে ধরে মির্জা ফখরুল বলেন, দেশনেত্রী প্রচন্ড অসুস্থ, প্রতিদিনই তার স্বাস্থ্যের অবণতি ঘটছে। আমরা স্পষ্টভাষায় বলতে চাই, আত্বীয়স্বজন যারা দেখা করতে যান, আমরা যখন গিয়েছি আমরা জানি, তাকে বিছানা থেকে উঠাতেও দুজনকে সাহায্য করতে হয়, বিছানা থেকে ওয়াশরুমে যাওয়ার জন্যে তাকে হুইল চেয়ারে করে নিতে হয় সেখানেও আরো দুইজনকে হেলপ করতে হয়। এখনো তিনি পা বেন্ড করতে পারেন না, চেয়ারে বসলে পা সোজা করে রাখতে হয়। রাতে ঠিকভাবে ঘুমাতে পারেন না, তার দুই কাঁধ প্রায় ফ্রোজেন, তার হাতগুলো ফ্রোজেন হয়ে যাচ্ছে। এটা এমন অসুখ, যে ক্ষতিটা হবে তা আর কোনো চিকিৎসাতেই ফিরে আসবে না। যেকারণে আমরা বার বার করে বলছিলাম, দেশনেত্রীর যে জামিন প্রাপ্য, সেই জামিন তার পাওয়া উচিত। অনেকেই এই মামলাগুলোতে জামিনে মুক্ত আছেন। তাকে জামিন দেয়া হচ্ছে না উদ্দেশ্যমূলকভাবে। জামিনে মুক্তি পেলে তার সুবিধা মতো দেশে হোক, বিদেশে হোক হাসাতালে চিকিৎসা নিতে পারতেন।

তিনি বলেন, অথচ বিএসএমএমইউ যিনি ভাইস চ্যান্সেলর তিনি সাংবাদিকদের বলেছেন, তিনি (খালেদা জিয়া) এখন সুস্থ হয়ে গেছেন, তার রোগের উপশম হয়েছে এবং পরিচালক সম্ভবত তিনিও বলেছেন, তিনি (খালেদা জিয়া) এখন সুস্থ। আমরা মনে করি, এটা ষড়যন্ত্রেরই একটা অংশ। তাকে আবার চিকিৎসা না দিয়ে কারাগারে পাঠানোর একটা ক্ষেত্র তৈরি করতে চাচ্ছে।

মির্জা আলমগীর বলেন, আমরা যেটা বলতে চাই, দেশনেত্রীর চিকিৎসা যদি প্রোপারলি না হয় তাহলে যেটা তার ঘটছে সেটা হচ্ছে- প্রতিদিন তার শরীর আরো খারাপ হচ্ছে, অবণতি হচ্ছে তার স্বাস্থ্য। যেটাকে বলা হচ্ছে যে, প্রোগ্রেসিভলি খারাপের দিকে যাচ্ছে। একটা মিথ্যা মামলা দিয়ে তাকে এভাবে কারাগারে আটক রেখে তাকে ধীরে ধীরে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়া হচ্ছে। এর একটাই মাত্র উদ্দেশ্য যে, রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে পুরোপুরিভাবে নিশ্চিহ্ন করা এবং তাকে তার চিকিৎসার যে অপশন আছে, যে বিকল্পগুলো আছে সেগুলো থেকে বঞ্চিত করে তাকে ধীরে ধীরে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়া। এটা কখনোই মেনে নেয়া যায় না।

বিএনপি মহাসচিব বিএসএমএমইউ‘র মেডিকেল প্রতিবেদন পড়ে শুনান যেখানে তার জটিল রোগের চিকিৎসার সুচিকিৎসার প্রয়োজনীয়তার কথা বলা হয়েছে।

স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমদ বলেন, এখানে তো আইনের চাইতে রাজনৈতিক বিষয়টা বেশি গুরুত্বপূর্ণ। আমরা তো চেষ্টা করেছি এবং এখনো চেষ্টা করে যাচ্ছি আন্তরিকভাবেই যাতে করে আমরা তার জামিন পেতে পারি। কিন্তু পদে পদে বাঁধা এবং রাজনৈতিক প্রভাব তার স্বাস্থ্যগত কারণে আমরা আবার চেষ্টা করবো জামিনের জন্য।

দলের ভাইস চেয়ারম্যান বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অধ্যাপক এজেডএম জাহিদ হোসেন বলেন, খালেদা জিয়া এখন দুইজনের সাহায্য ছাড়া উনার ব্যক্তিগত কোনো কার্যক্রম বিছানা থেকে উঠা এবং বাথরুম পর্যন্ত নেয়া কোনটাই উনি করতে পারছেন না।

তিনি বলেন, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ মিথ্যা কথা বলে যাচ্ছেন। সরকারের শিখানো বুলি বলে যাচ্ছেন। তিনি বলেন, বেগম খালেদা জিয়া বাম হাতে কিছু ধরতেই পারেন না, বাম হাত সোজা করতে পারেন না, হাতটা উনি ৬ ইঞ্চি তুলতে পারেন না সেই জায়গায় উনার বলেছেন যে, উনি ভালো, সুস্থ আছে। যে মানুষটি দাঁড়াতে পারেন না, যে মানুষটি হাটতে পারেন না, তিনি কীভাবে সুস্থ থাকেন?

নয়া পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, কেন্দ্রীয় নেতা মীর সরফত আলী সপু, আবুল কালাম আজাদ সিদ্দিকী, আবদুস সালাম আজাদ প্রমূখ উপস্থিত ছিলেন।

এমআই