কোনো পেশায় যুক্ত না থেকেই সম্পদের পাহাড় গড়েছেন এনু-রুপন

কোনো পেশায় যুক্ত না থেকেই সম্পদের পাহাড় গড়েছেন এনু-রুপন

গেন্ডারিয়া থানা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি এনামুল হক এনু ও সহসম্পাদক রুপন ভূইয়া।

দেশে চলমান শুদ্ধি অভিযানে বেরিয়ে এসেছে দুই ভাইয়ের বিলাসী জীবনযাপনের অবিশ্বাস্য সব তথ্য।

কোনো পেশার সঙ্গেই যুক্ত ছিলেন না এই দুই ভাই। অথচ র‌্যাবের হাতে এখন পর্যন্ত পাওয়া তথ্য অনুযায়ী ঢাকায় এনু ও রুপনের বাড়ি রয়েছে ১৫টি ।

তাদের মালিকানাধীন ভল্ট খুলে নগদ প্রায় পাঁচ কোটি টাকাসহ সাড়ে আট কেজি স্বর্ণ (৭৩০ ভরি) পেয়েছে র‌্যাব। ছয়টি আগ্নেয়াস্ত্রও উদ্ধার হয়েছে এর সঙ্গে।

ক্যাসিনোর টাকার সন্ধান করতে গিয়ে সোমবার মধ্যরাত থেকে মঙ্গলবার ভোর পর্যন্ত অভিযানে গেন্ডারিয়া থানা আওয়ামী লীগের এই দুই নেতার এমন সম্পদের ভাণ্ডার মিলল র‌্যাবের হাতে।

এখন পর্যন্ত ১৫টি বাড়ির কথা জানা গেলেও ঢাকা শহরে এনু ও রুপনের প্রায় ৫০টি ফ্ল্যাট রয়েছে বলে ধারণা র‌্যাব কর্মকর্তাদের।

র‌্যাব সূত্রে জানা গেছে, এতো সম্পদের মালিক এনু ও রুপন কখনোই কোনো পেশায় যুক্ত ছিলেন না। ক্যাসিনো থেকে আসা টাকাই তাদের একমাত্র উৎস।

তাহলে এতোগুলোর ফ্ল্যাটের মালিক কি করে হলেন তারা? র‌্যাব জানায়, অবৈধ অস্ত্রের হুমকি ও আওয়ামী লীগে পদের ক্ষমতাবলে এলাকার সাধারণ মানুষকে ভয়ভীতি দেখিয়ে এসব বাড়ি লিখে নিতেন এই দুই ভাই।

র‌্যাব-৩-এর কমান্ডিং অফিসার(সিও) লেফটেন্যান্ট কর্নেল কে এম শফিউল্লাহ বলেন, র‌্যাব এখন পর্যন্ত এনু ও রুপনের ১৫টি বাড়ির সন্ধান পেয়েছে। তবে ক্যাসিনোর টাকা দিয়ে তারা গত কয়েক বছরে ঢাকা শহরের বিভিন্ন জায়গায় অন্তত ৫০টির মতো বাড়ি কিনেছেন বলে তথ্য পাওয়া গেছে।

র‌্যাব এনু-রুপনের যে ১৫টি বাড়ির সন্ধান পেয়েছে, তারই একটি সুত্রাপুরের বানিয়া নগরের ৩১ নম্বর বাড়ি। বাড়িটি ছয় তলা। এই বাড়িতে এনু-রুপন থাকেন না। আত্মীয়-স্বজনদের রেখেছেন এই বাড়িতে। তাদের মধ্যে দ্বিতীয় ও পঞ্চম তলায় এনামুল হক এনুর শ্যালক ও শাশুড়ি থাকেন। বাড়িটির দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলায় যথাক্রমে একটি ও দুটি ভল্ট পাওয়া গেছে। এই তিন ভল্ট থেকেই ৭৩০ ভরি স্বর্ণ উদ্ধার হয়।

গেণ্ডারিয়া থানা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি এনামুল হক এনু ঢাকা ওয়ান্ডারার্স ক্লাবের একজন শেয়ার হোল্ডার।

গত কয়েকদিন আগে চলা ওয়ান্ডারার্স ক্লাবে র‌্যাবের অভিযানের আগেই এনামুল হক এনু সেখান থেকে অনেকগুলো সিন্দুক সরিয়ে ফেলেন বলে খবর জানতে পারে র‌্যাব।

এ বিষয়ে র‌্যাব-৩ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল সাফি বুলবুল বলেন, ওয়ান্ডারার্স ক্লাবের ক্যাসিনোতে অভিযানের আগেই সেখান থেকে পাঁচটি সিন্দুক সরানো হয়েছিল। এর মধ্যে তিনটি পাওয়া গেছে বানিয়ানগর মুরগিটোলায় গেণ্ডারিয়া থানা আওয়ামী লীগের নেতা এনামুল হক এনু ও তার ভাই রুপন ভূঁইয়ার বাসায়।

এছাড়া র‌্যাব সিও জানান, গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে তারা জানতে পারেন, রাজধানীর ইংলিশ রোড থেকে পাঁচটি ভল্ট কে বা কারা ভাড়া নেয়। সেই ভল্টের খোঁজ করতে গিয়েই পাওয়া যায় রুপন ও এনামুলের নাম।

র‌্যাবের সেই তথ্য অনুযায়ী অভিযান চালিয়েই বানিয়া নগরে পাওয়া যায় তিনটি ভল্ট। বাকি দু’টি ভল্ট উদ্ধারে নারিন্দার লালমোহন দাস লেনের ৮৩/১ নম্বর বাসায় অভিযান চালায় র‌্যাব।

র‌্যাব জানায়, এনু ও রুপনের বিশ্বস্ত কর্মচারী আবুল কালাম ওরফে কালার বাসায় একটি ভল্ট পাওয়া যায়। সেই ভল্ট থেকে দুই কোটি টাকা, একটি অবৈধ অস্ত্র ও ১৮ রাউন্ড গুলি উদ্ধার করা হয়।

অভিযানের সময় কালাকে পাওয়া যায়নি। র‌্যাবের কাছে কালার স্ত্রী বলেন, এনু ও রুপন চার দিন আগে ভল্টটি এখানে রেখে গেছেন। ভল্টের ভেতরে কী আছে, তা তারা জানতেন না।

এরপর গোপন সংবাদের ভিত্তিতে নারিন্দার শরৎ গুপ্ত রোডের ২২/১ বাসায় অভিযান চালিয়ে একইভাবে একটি ভল্টের ভেতর থেকে দুই কোটি টাকা উদ্ধার করে।

র‌্যাব জানায়, বাসাটি এনুর বন্ধু ওয়ারী আওয়ামী লীগের সহসভাপতি হারুন অর রশীদের। এ ভল্টটিও একই দিনে এখানে এনে রাখা হয় বলে তথ্য দেন রশীদের স্ত্রী। অভিযানের সময় রশীদও বাসায় ছিলেন না।

এদিকে লাল মোহনদাস লেনের পাশেই মমতাজ ভিলা নামে ১০৬ নম্বর একটি বিলাশবহুল ও দৃষ্টিনন্দন ১০ তলা ভবনের সন্ধান পান র‌্যাব।

স্থানীয়রা জানান, ১০ তলা ভবনটি এনু ও রুপনের। ভবনের দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলায় ‍দুই ভাই রাজকীয়ভাবে থাকেন। বাকি ফ্ল্যাটগুলোর কয়েকটিতে এনু-রুপনের আত্মীয়-স্বজনরা থাকেন। এ ভবনে নাচ-গানের একটি স্টুডিও রয়েছে। স্থানীয়দের কেউ ভবনটিতে প্রবেশ করতে পারে না।

তবে ভবনটিতে পুলিশের অনেক কর্মকর্তা, সরকারি কর্মকর্তা ও রাজনৈতিক নেতাদের আসেন দেখেন বলে জানান স্থানীয়রা।

সোমবার ভোরে এই ভবনে অভিযানের পর বাইরে থেকে তালা লাগিয়ে দিয়েছে র‌্যাব।

সূত্র জানায়, এনামুল ও রুপনরা মোট ছয় ভাই। ১৯৮৫ সাল থেকে এনামুল ওয়ান্ডার্স ক্লাব ও রুপন আরামবাগ ক্লাবে জুয়া খেলত। খেলতে খেলতে একদিন জুয়ার বোর্ডের মালিক বনে যান এই দুই ভাই। আর সেখান থেকেই তাদের উত্থান। কোনো চাকরি বা ব্যবসা না করেও ঢাকা শহরের বিভিন্ন স্থানে একের পর এক ফ্ল্যাট ও বাড়ি কিনেছেন এনু-রুপন।

এমজে/