আন্দোলনকে কেউ শক্তি দিয়ে থামাতে পারবে না: ড. কামাল

আন্দোলনকে কেউ শক্তি দিয়ে থামাতে পারবে না: ড. কামাল

এবার ইতিবাচক আন্দোলন হবে এবং কেউ শক্তি দিয়ে সেই আন্দোলন থামাতে পারবে না বলে জানিয়েছেন গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন।

বৃহস্পতিবার সুপ্রিম কোর্টে আইনজীবী সমিতির মিলনায়তনে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) ৪৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে এক আলোচনা সভায় ড. কামাল এ কথা বলেন। এ সময় জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ও ২০ দলীয় জোটের বেশ কয়েকজন নেতা উপস্থিত ছিলেন।

গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন বলেন, এই আন্দোলন কোনো শক্তি দমাতে পারবে না। একই অনুষ্ঠানে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ঐক্য অটুট রেখেই সরকার হটাতে হবে।

ড. কামাল হোসেন বলেন, ‘জনগণ হবে ক্ষমতার মালিক। সরকার চালাবে যারা, তারা প্রকৃত অর্থে জনগণের দ্বারা নির্বাচিত হবে। সকল স্তরে জেলা থেকে গ্রাম পর্যন্ত যারাই নির্বাচিত হবেন, তারা ক্ষমতা প্রয়োগ করবে এবং জনগণের কাছে দায়ী থাকবেন। আপনারা পরীক্ষা করে দেখতে পারেন যে, এ বিষয়ে জনগনের মধ্যে ঐক্যমত আছে। এরকম অসাধারণ ঐক্যের মাধ্যমেই আমরা একাত্তর সালে অসম্ভবকে সম্ভব করে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করেছিলাম। এই স্বাধীনতাকে অর্থপূর্ণ করতে হলে এই সময়ের মধেই বাকিটুকু আমাদেরকে করে যেতে হবে।’

ড. কামাল বলেন, ‘আমি তো বলি যে, ৫০ বছর সম্পন্ন হওয়ার আগেই আমরা সংগঠিত হই। আন্দোলনের মধ্য দিয়ে শক্তিশালী হই। যে আন্দোলন হবে ইতিবাচক; আন্দোলন হবে শহিদদের স্বপ্ন বাস্তবায়িত করা; আন্দোলন হবে জনগণের মালিকানা প্রতিষ্ঠা করা। এই ধরনের আন্দোলনকে কেউ শক্তি দিয়ে থামাতে পারবে না; ধবংস করতে পারবে না।’

ড. কামাল হোসেন বলেন, ‘আপনারা একটা জিনিস দেখবেন, যখন জনগণের ঐক্যমত হয়েছে, সেই ঐক্যমতের কাছে কোনো শক্তি দাঁড়াতে পারেনি। বন্দুক নিয়ে, কামান নিয়ে, কোনো কিছু নিয়ে দাঁড়াতে পারেনি। বাঙালিরা যখন ঐক্যমতে আসে সেই শক্তি হলো পৃথিবীর বড় শক্তি। সেই শক্তির কাছাকাছি অলরেডি আমরা এসে গেছি। আসুন, আমাদের দেশের ৫০ বছর পূর্তির আগেই জনগণের স্বপ্ন বাস্তবায়নে আমরা সংগঠিত হই। আমরা এটা সবাই মিলে করি প্রত্যেক জেলায়, প্রত্যেক গ্রামে, প্রত্যেক পাড়ায়, প্রত্যেক মহল্লায়। ইনশাল্লাহ আমাদের যে আকাঙ্ক্ষা অবশ্য অর্জন করব, আমাদের করতে হবে।’

এ সময় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘এখন যেটা আমাদের সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন এই সরকারকে সরাতে হবে। তাদের সরাতে হলে আমাদের ঐক্যবদ্ধ হতে হবে, এর কোনো বিকল্প নাই। গণতন্ত্রকে ফিরে পাওয়ার জন্য, বাংলাদেশকে ফিরে পাওয়ার জন্যে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে আমরা যে ঐক্য সৃষ্টি করেছিলাম সেই ঐক্যকে অটুট রেখে মানুষকে একতাবদ্ধ করে আমাদের সামনের দিকে এগুতে হবে এবং অবশ্যই এই দানবকে পরাজিত করতে হবে। আসুন সেই লক্ষ্যে আমরা কাজ করি।’

নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘আজ বাংলাদেশে ক্ষমতায় বসে আছে ওরা তো ডাকাত, জোর করে ক্ষমতায় গেছে। ওই ডাকাতি করে আবার আপনারা ভালো মানুষ সাজবেন? এক বছর পারবেন, দুই বছর পারবেন, দশ বছর পারবেন। ১২ বছরের মাথায় যেতে হবে। থাকতে পারবেন না ক্ষমতায়। অন্যায় করে ক্ষমতায় থাকা যায় না।’

আওয়ামী লীগকে ইঙ্গিত করে মান্না বলেন, ‘যত দুর্নীতি বলেন, জুয়া চোর বলেন, জুয়া খোর বলেন-সব তো আপনারা। আর তো কোনো দলের কথা আছে। সংবাদ সম্মেলন করে বলবেন, বড় দুর্নীতিবাজ তো আগেই ধরেছি, ছোটগুলো ধরবো পরে। তার মানে মোঁচে তা দিচ্ছেন, দুটা একটা ধরে দেখাব তারপরে তোদেরকে সোজা করব। ভয় দেখান। এসব কি দুর্নীতি বিরোধী অভিযান? দুর্নীতি বিরোধী অভিযান হলে শেয়ারবাজারের তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করেন, সুস্পষ্টভাবে দেখান কার কার কারণে ব্যাংক ধ্বংস হয়েছে, কার দোষে বাংলাদেশ ব্যাংকের টাকা পাঁচার হয়ে গেলো?।’

জেএসডির সভাপতি আসম আবদুর রব সরকারের উদ্দেশে বলেন, ‘আগের দিনে কলেরা রোগীর চিকিৎসা হতো না, কলেরা রোগীর মৃত্যুর সাথে সাথে কলেরা রোগীর বালিশ পুঁড়িয়ে ফেলত। আপনি যাবেন গোয়েন্দাদের কথা মতো, আপনার সঙ্গে আপনার মরা বালিশও যাবে আমি বলে দিচ্ছি।’

রব আরো বলেন, ‘স্বাধীন দেশের একশ ভাগ মুক্তিযোদ্ধা দল জেএসডি, ষাট বছর আমরা রাজনৈতিক জীবন। আমার বাঁচার ইচ্ছা নেই, তবে আমার একটু আগ্রহ আছে। একজন বীরের মৃত্যুর আগে তাকে হত্যা করতে গেছে তখন ওরা বলতেছে যে, ওই বুড়ি তুই পালাস কোথায়। বুড়ি বলে যে, আমি পালাই না, তোদের শেষ পতনটা দেখতে চাই। আমিও কিন্তু আপনার শেষ পতনটা না দেখে আমার মৃত্যু আমি চাই না।’

জেএসডির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শহিদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপনের পরিচালনায় আলোচনা সভায় জাতীয় পার্টির নেতা (কাজী জাফর) মোস্তফা জামাল হায়দার, কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম, গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক ড. রেজা কিবরিয়া, বিকল্পধারার অধ্যাপক নুরুল আমিন ব্যাপারী, জেএসডির আবদুল মালেক রতন, মো. সিরাজ মিয়া, তানিয়া রব, কে এম জাবির, বেলায়েত হোসেন বেলাল প্রমুখ বক্তব্য দেন।

এমআই