নির্বাচন করতে পারবেন খালেদা জিয়া : মওদুদ

নির্বাচন করতে পারবেন খালেদা জিয়া  : মওদুদ

ঢাকা, ৮ ফেব্রুয়ারি (জাস্ট নিউজ) : জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার রায়ের কপি হাতে পেলেই উচ্চ আদালতে আপিল করা হবে বলে জানিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও তার আইনজীবী ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ।

তিনি বলেছেন, আমরা চেষ্টা করছি রায়ের কপি পেতে। আইনজীবীরা এখনো (আজ বিকালে) সেখানে আছে। রাত হলেও আমরা রায়ের কপি হাতে পাওয়ার চেষ্টা করবো। যতক্ষণ পর্যন্ত না কপি পাবো ততক্ষণ আইনজীবীদের সেখানে অপেক্ষা করতে বলা হয়েছে। রায়ের কপি পেলেই রবিবার এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল ফাইল করা হবে। সাথে সাথে জামিন চাওয়া হবে। বৃহস্পতিবার রায়ের পর বিকালে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি একথা বলেন।

‘আইনমন্ত্রী বলেছেন এই রায়ের ফলে বেগম খালেদা জিয়া নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারবেন না’ এ বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার মওদুদ বলেন, বেগম খালেদা জিয়ার জামিন এবং নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার কোনো বাধা নেই।

বেগম খালেদা জিয়া নির্বাচন করতে পারবেন কি না সেটা কি আইনমন্ত্রী ঠিক করবেন। আইনমন্ত্রী তো ঠিক করবেন না। যদি প্রয়োজন পড়ে সেটা আদালতে গড়াবে। তখন সুপ্রিম কোর্টই সিদ্ধান্ত দেবে যে তিনি পারেন কি পারেন না। আমাদের মতে তিনি পারেন। আমরা মনে করি আপিল হলো ‘কনটিনিউশন অব ট্রায়াল’। এটা হলো ‘ফার্স্ট কোর্ট’, এরপর হাইকোর্ট, তারপর সুপ্রিম কোর্ট আছে। শেষ পর্যন্ত চূড়ান্তভাবে সিদ্ধান্ত না হলে ততক্ষণ পর্যন্ত তিনি অবশ্যই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারবেন।

এ বিষয়ে দুই ধরণেরই সিদ্ধান্তের কথা তুলে ধরে প্রবীন এই আইনজীবী বলেন, আগে এটা ছিল চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত না হওয়া পর্যন্ত ধরে নেয়া হবে না যে তিনি (নিম্ন আদালতে সাজাপ্রাপ্ত আসামী) শাস্তি প্রাপ্ত হয়েছেন। কিন্তু ১/১১’র সময় সেনা সমর্থিত সরকার একটা আইন করে বলা হলো আপিল করলে জামিন দেয়া হবে না। চূড়ান্ত নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত মুক্তি হবে না। কিন্তু সেটা তো জরুরি অবস্থার আইন। এখন তো জরুরি অবস্থা নাই। আর ওই আইন তো সংসদ অনুমোদন করেনি। সুতরাং আমরা মনে করি যতদিন পর্যন্ত চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত না হবে ততদিন পর্যন্ত তিনি নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন।

মামলায় বেগম খালেদা জিয়ার কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই মন্তব্য করে খালেদা জিয়ার আইনজীবী বলেন, আমরা বরাবরই বলে এসেছি এ মামলায় কোনো সারবক্তা নাই। এই মামলায় বেগম খালেদা জিয়ার কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। কোনোভাবেই তিনি সম্পর্কিত নন। কোনো একটি কাগজে তার কোনো স্বাক্ষর নাই। কোনো ব্যাংক একাউন্ট ওপেন করার ক্ষেত্রে তার কোনো স্বাক্ষর নাই। তিনি একেবারেই এতে জড়িত নন। তারপরও দুর্ভাগ্যজনক হলেও বলতে হবে যে, রায় দিয়ে তাকে সাজা দেয়া হলো।

সংবিধান লঙ্ঘন করে বিচার করা হয়েছে উল্লেখ করে সাবেক আইনমন্ত্রী বলেন, যে আদালতে উনার (খালেদা জিয়া) বিচার হলো আমাদের সংবিধানে ৩৫ অনুচ্ছেদে আছে যে ‘বিচার হতে হবে পাবলিক’। উন্মুক্ত বিচার হতে হবে। কিন্তু এই বিচার পাবলিক হয় নাই। কারণ অনেক আইনজীবীকে দীর্ঘকালের ট্রায়ালের সময় সেখানে যেতে দেয়া হয় নাই। সাধারণ পাবলিক তো দূরের কথা একজনকেও যেতে দেয়া হয়নি। সুতরাং এটাকে আমরা কখনো পাবলিক ট্রায়াল বলে স্বীকার করবো না। এটা সংবিধানের লঙ্ঘন। সংবিধানের লঙ্ঘন করে মৌলিক অধিকারকে লঙ্ঘন করে এই বিচারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। আজকে তার প্রতিফলন বেশি পাওয়া গেছে। আজকে মিডিয়াকেও সেখানে প্রবেশ করতে দেয়া হয়নি। একটা ক্যামেরাও ভেতরে ঢুকতে পারেনি। কেন? কেন পারবে না? এতোদিন মিডিয়াকে ভেতরে যেতে দিলো আজকে কেন দিলো না? আজকে তো আমাদের অনেক আইনজীবীকে ঢুকতে দেয়া হয়নি। আমাদের নিজেদের ঢুকতে অসুবিধা হয়েছে। আজকে দিনটাও প্রমাণ করে যে, এই মামলাটা পাবলিক ট্রায়াল না। এজন্য এটা সংবিধানের লঙ্ঘন।

মামলায় ঘষা-মাজা নথি ব্যবহার করা হয়েছে অভিযোগ করে মওদুদ বলেন, এই মামলা সাজানো হয়েছে কতগুলো জাল-জালিয়াতি করে ভূয়া কতগুলো কাগজ তৈরি করে। যে কাগজগুলোর মধ্যে কোনো স্বাক্ষর নেই। ওভার রাইটিং, ঘষামাজা আছে। নথিগুলো প্রেসিডেন্টের লেটার হেডে দিয়েছে তারা। অথচ প্রেসিডেন্টের ব্যবস্থা ১৯৯১ সালে আমাদের দেশে শেষ হয়ে গেছে। এটা প্রধানমন্ত্রীর নোট শিটের মধ্যেও যদি দিতেন তাহলে বুঝতাম ঠিক আছে। অন্তত মনে করতাম যে, এতটুকু তারা নিচে গেছে, এটা যে কতবড় ভুয়া জাল কাগজ দিয়ে, তার উপরে ভিত্তি করে আজকে এই শাস্তির ব্যবস্থা করা হয়েছে।

বিচারক নালিশ আমলে নেয়নি অভিযোগ করে বিএনপির এই নেতা বলেন, দেশের প্রতিষ্ঠিত একটা নীতি হলো- যদি কোনো প্রোসিডিংয়ে ফ্রড হয়ে থাকে তাহলে পুরো প্রোসিডিংই তাৎক্ষণিকভাবে খারিজ হয়ে যাবে। সেখানে ‘ফ্রড আপন দ্য কোর্ট’ যারা করেছে, যারা এই কাগজগুলোর ব্যাপারে স্বাক্ষী দিয়েছে তারা কেউ কিন্তু ওইসব বিভাগে কোনো কাজ করেনি। সেজন্য আমরা ফোজদারী কার্যবিধির অধীনে আনুষ্ঠানিকভাবে দরখাস্ত করেছি। নালিশ করেছি তাদের বিরুদ্ধে এবং আইন বলে সেটার নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত এটাতে রায় দেয়া ঠিক হবে না। কিন্তু তারা সেটা করেছে। মাননীয় বিচারক যিনি শর্ট ওয়েতে আজকে রায় পড়লেন তিনি আজকে এই ব্যাপারে কোনো কথা বলেননি।

খালেদা জিয়ার বিষয়ে বিচারক কিছু বলেননি
রায়ে বিচারক বেগম খালেদা জিয়ার বিষয়ে কিছু বলেননি মন্তব্য করে সাবেক আইনমন্ত্রী বলেন, প্রিভেনটিভ অব করাপশন অ্যাক্ট ওই মামলাটা দুই রকম। একটা হলো ৪০৯, ১০৯ পেনাল কোডের অধীনে। আরেকটা হলো প্রিভেনশন অব করাপশন অ্যাক্ট দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন ১৯৪৭ সালের ৫ ধারার অধীনে। কিন্তু আজকে উনি (বিচারক) যে রায় দিলেন ৫ ধারার অধীনে উনাকে (খালেদা জিয়া) সাজা দেয়া হয়নি। অর্থ্যাৎ দুর্নীতির যে কথা বলা হচ্ছে পাবলিক সার্ভেন্ট হিসেবে ৫.২ ধারা হলো পাবলিক সার্ভেন্টের জন্য, অথচ ৫.২ ধারার অধীনে তিনি কোনো অপরাধ করেননি। সেটা এই রায়ের মাধ্যমে আমরা বুঝলাম। কারণ এই রায়ে ওনার (খালেদা জিয়া) শাস্তি দিয়েছেন ৪০৯ এর অধীনে। ৪০৯ এর অধীনে উনার সাজা হতে পারে না কারণ কোনো স্বাক্ষ্য প্রমাণ ছাড়া এই রায় দেয়া হয়েছে। আমরা যখন পূর্ণাঙ্গ রায় হাতে পাবো তখন অবশ্য আমরা পুরো চিত্রটা তুলে ধরতে পারবো। এখন যতটুকু উনি বলেছেন তার উপর ভিত্তি করে বলছি। কারণ উনি (বিচারক) রায়ের মধ্যে কিছুই বলেননি। অন্যান্যদের বিষয়ে উনি (বিচারক) বলেছেন কেন তাদের শাস্তি দিচ্ছেন। কিন্তু বেগম জিয়ার ব্যাপারে তিনি (বিচারক) কিছুই বলেননি। কী কারণে কোন স্বাক্ষীর ভিত্তিতে তিনি দোষী সাব্যস্ত হয়েছে এ বিষয়ে রায়ে কিছুই বলা হয়নি। সেজন্য আমরা ধরে নিচ্ছি ৪০৯ এর অধীনে যে মামলা এটা এই আইনের আওতায় পরে না। যে অভিযোগগুলো উনারা এনেছেন সেটা ৪০৯ এর অধীনে আসে না। তারপরও তাকে শাস্তি দিয়েছেন আদালত।

ক্রিমিনাল ইনটেনশন ম্যান্ডেটরি
মওদুদ আহমেদ বলেন, অনেক প্রতিষ্ঠিত প্রিন্সিপাল আছে যে এ ধরণের কাজে মেনসিয়া (ক্রিমিনাল ইনটেনশন) থাকতে হবে। সেই ‘ক্রিমিনাল ইনটেনশন’ ম্যান্ডেটরি। যদি এটা না থাকে, তাহলে সেটা কখনো ‘মিস কনডাক্ট আন্ডার সেকশন ৪০৯’-এ হতে পারে না। কিন্তু সে ধরণের কোনো কিছু আমরা এখনো দেখিনি। যখন পূর্ণাঙ্গ রায় পাবো তখন সেটা বুঝতে পারবো।

ফৌজদারী নয় রাজনৈতিক মামলা
বেগম খালেদা জিয়ার মামলাকে রাজনৈতিক মামলা উল্লেখ করে বিএনপির নেতা বলেন, এটা কোনো ফৌজদারি মামলা না এটা একটা রাজনৈতিক মামলা। রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত হয়ে এই মামলা পরিচালনা করা হয়েছে এবং নিম্ন আদালত সম্পূর্ণভাবে নির্বাহী বিভাগের নিয়ন্ত্রণে। এই বিষয়টি নিয়েই সাবেক বিচারপতি এস কে সিনহার সাথে সরকারের দ্বন্দ্ব ছিল। মূল সংবিধানে (৭২’র সংবিধানে), আওয়ামী লীগের করা সংবিধানে ছিল এই দায়িত্ব হবে সুপ্রিম কোর্টের। নিম্ন আদালতের বিচারকরা তাদের পদায়ন, তাদের নিয়োগ, তাদের শৃঙ্খলা, তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা সবকিছু সুপ্রিম কোর্ট করবে। কিন্তু সেটাকে পাল্টিয়ে চতুর্থ সংশোধনীতে সুপ্রিম কোর্টকে বাদ দিয়ে তারা প্রেসিডেন্টকে নিয়ে এসেছে। সেই প্রেসিডেন্ট মানে হলো তিনি তো নির্বাহী বিভাগেরই। প্রধানমন্ত্রীর সুপারিশ ছাড়া তার পক্ষে কোন ধরণের সিদ্ধান্ত নেয়া সম্ভব না। একটার পর একটা আইন এবং সংবিধানকে লঙ্ঘন করে যে রায় দেওয়া হলো। এই রায়টা আমরা মনে করি আইন সম্মত হয়নি। এটা সাক্ষ্য ও প্রমাণ ভিত্তিক হয়নি। এটা একটা রাজনৈতিক প্রতিহিংসার প্রতিফলন হিসেবে দেখছি।

 

(জাস্ট নিউজ/একে/২২০৫ঘ.)