এনআরসিতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে বাংলাদেশ: মির্জা আলমগীর

এনআরসিতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে বাংলাদেশ: মির্জা আলমগীর

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নিপীড়ন প্রসঙ্গে সম্প্রতি ভারতের পার্লামেন্টে দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ যে বক্তব্য দিয়েছেন তা সম্পূর্ণ মিথ্যা, বানোয়াট ও শিষ্টাচার-বহির্ভূত। একইভাবে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সম্প্রতি যে বক্তব্য দিয়েছেন তাতে তিনি অমিত শাহের সুরে সুর মিলিয়েছেন।

বৃহস্পতিবার সকালে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। বিএনপি মহাসচিব বলেন, প্রকৃতপক্ষে বিএনপি প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই ধর্মীয় সম্প্রীতি ও সহিষ্ণুতা বজায় রেখে আসছে। সুতরাং ওবায়দুল কাদের যে বক্তব্য দিয়েছেন তাতে তিনি ভারত সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রাবিশ কুমারের বর্ধিত দায়িত্ব পালন করেছে মাত্র। ভারতের এনআরসি ও সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হবে প্রতিবেশী বাংলাদেশ।

নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, নজরুল ইসলাম খান, ড. আবদুল মঈন খান, সেলিমা রহমান, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, কেন্দ্রীয় নেতা খায়রুল কবির খোকন, এবিএম মোশারফ হোসেন, মোঃ মুনির হোসেন, অ্যাডভোকেট আবদুস সালাম আজাদ, সেলিম রেজা হাবিব, আমিনুল ইসলাম প্রমুখ।

মির্জা আলমগীর লিখিত বক্তব্যে বলেন, বিএনপসিহ বাংলাদেশের শান্তপ্রিয় সকল নাগরকি যখন ভারতের লোকসভায় দেয়া অমিত শাহের বক্তব্য ভারত সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে প্রত্যাহার করে নেবে বলে প্রতীক্ষা করছেন, ঠিক তখনই বর্তমান ভোটারবিহীন অবৈধ সরকারের মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের অমিত শাহের বক্তব্যকে সর্মথন জানিয়ে সংবাদ সম্মলেন করছেন, যা সকলেই ইতোমধ্যেই অবগত হয়ছেন। ভারতের সংসদে পাসকৃত বিতর্কিত ‘নাগরিক সংশোধনী আইন (সিএএ) ও এনআরসি’ সঙ্কট নিয়ে দক্ষিণ এশিয়ার প্রায় সকল দেশের শান্তিপ্রিয় মানুষসহ, জাতিসঙ্ঘ, যুক্তরাষ্ট্র এবং বিশ্বের বিবেকবান মানুষেরা চরমভাবে উৎকন্ঠিত। বিশেষ করে ভারত ও বাংলাদেশসহ উপমহাদেশের সকল ধর্ম, বর্ণ, মত ও পথের মানুষ এ আইনের ভয়াবহতা উপলব্ধি করে সরব প্রতক্রিয়া ব্যক্ত করছে। এমনকি, পরিস্থিতির গুরুত্ব উপলব্ধি করে ভারতরে প্রধানমন্ত্রী নরন্দ্রে মোদি সম্প্রতি ‘দিল্লির রামলীলা ময়দানে’ প্রকাশ্য জনসভায় ‘নাগরিক সংশোধনী আইন (সিএএ) ও এনআরসি’ ইস্যুতে ভারতরে জনগণের ক্ষোভ ও উৎকন্ঠা দূরীভূত করতে নমনীয় মনোভাব প্রকাশ করছেন। ঠিক এরকম পরিস্থিতিতে, বর্তমান অবৈধ ও এদেশের মানুষরে ভোটাধিকার হরণকারী বর্তমান সরকারের শীর্ষস্থানীয় মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ‘বাংলাদশে ও বিএনপি’ সম্পর্কে ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও বিজেপি সভাপতি অমিত শাহে পার্লামেন্টে দেয়া মিথ্যা, উদ্দেশ্যমূলক, ভিত্তিহীন ও ধর্মীয় বিভক্তি সৃষ্টিকারী বক্তব্যের পক্ষে অত্যন্ত নির্লজ্জভাবে অবস্থান গ্রহণ করেছেন। গত ২৩ ডিসেম্বর ওবায়দুল কাদের এক সংবাদ সম্মেলনে প্রকাশ্য বাংলাদেশের স্বাধীনতা, র্সাবভৌমত্ব, অখন্ডতা, শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য সুস্পষ্ট হুমকিস্বরূপ রাখা অমিত শাহের বক্তব্যের পক্ষে অবস্থান নিতে গিয়ে সমগ্র জাতিকে স্তম্ভিত ও ক্ষুব্ধ করেছেন।

তিনি বলেন, ওবায়দুল কাদের অমিত শাহের সমর্থনে নিজ দেশের আপামর জনগণের উদ্দেশ্যে বলেছেন ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী যেটা বলেছেন বাংলাদেশের বাস্তবতায় এটা কি অসত্য? আমরা দ্ব্যর্থহীন এবং অত্যন্ত সুস্পষ্ট ভাষায় বলতে চাই, ওবায়দুল কাদের, ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ ও ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রাবীশ কুমার বাংলাদেশ, বিএনপি ও বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সরকার সম্পর্কে যে বক্তব্য রেখেছেন তা সর্বৈব, মিথ্যা, ভিত্তিহীন, বৈষম্যমূলক, ধর্মীয় বিভক্তি সৃষ্টিকারী এবং তা দুদেশের (আওয়ামী লীগ ও বিজেপি) অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে সংকীর্ণ সুবিধা লাভের ঘৃণ্য কৌশলমাত্র। আপনি ও আপনার অবৈধ দেশের স্বার্থবিরোধী সরকার অমিত শাহের বক্তব্যের পক্ষে সাফাই গাইতে গিয়ে সুস্পষ্টভাবে শুধু এদেশের মানুষের স্বার্থবিরোধী অবস্থান গ্রহণ করনেনি, একইসাথে বিতর্কিত ‘নাগরকি সংশোধনী আইন (সিএএ) ও এনআরসি’র ফলে ক্ষতিগ্রস্ত সকল নিরীহ সাধারণ ভারতীয় মানুষের স্বার্থহানিকর ঘৃণ্য সহযোগীর ভূমকিায় অবতীর্ণ হয়েছেন।

মির্জা আলমগীর আরো বলেন, একটি গণবিরোধী, ভোটারবিহীন এবং দখলদার সরকার অবৈধ ক্ষমতাকে টিকিয়ে রাখতে কতটা নির্লজ্জ, হিতাহিতজ্ঞানশূন্য ও ক্ষমতালিপ্সু হতে পারে অমিত শাহের বক্তব্যকে সমর্থন করতে গিয়ে নিজেদের আদর্শিক পিতা শেখ মুজিব সরকারের সময়কালকে প্রশ্নবিদ্ধ করতেও যে বিন্দুমাত্র দ্বিধা করেন না, ওবায়দুল কাদেরের অবস্থান সেটাই প্রমাণ করে। দেশবাসী ও সংশ্লিষ্ট সকলকে আবারো স্মরণ করিয়ে দিতে চাই, অমিত শাহের বক্তব্যকে সত্য বলে ধরে নিয়ে ওবায়দুল কাদের স্বীকার করে নিয়েছেন যে, ‘১৯৭১ সালের পরে শেখ মুজিব সরকার এবং বর্তমান অবৈধ শেখ হাসিনার সরকারের আমলেও সংখ্যালঘু নির্যাতন থামেনি বলে যে বক্তব্য অমিত শাহ ভারতের পার্লামেন্টে রেখেছেন, তা তিনি এবং শেখ হাসিনার অবৈধ সরকার মনে নিয়েছেন।’

তিনি বলেন, ‘স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের প্রতিষ্ঠিত ‘বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ’-এর আদর্শ প্রতিষ্ঠার ধারক ও বাহক বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি প্রতিষ্ঠাকালীন সময় থেকে কখনোই দোষারোপের রাজনীতিতে বিশ্বাসী নয়। বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে যে আদর্শ আমরা সর্বদা অটুট রাখতে বদ্ধপরিকর। অথচ ওবায়দুল কাদেরের সাম্প্রতিক বক্তব্য সম্পূর্ণরূপে ভারত-তোষণনীতির এক ঘৃণ্য আখ্যানমাত্র। এর মাধ্যমে তিনি সুস্পষ্টভাবে বিএনপরি ঘাড়ে দোষ চাপিয়ে দেশপ্রেম বিবর্জিত প্রতিহিংসার রাজনীতি চরিতার্থ করার অপচেষ্টা চালিয়েছেনে। অতএব, ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্য কোনো বিচারেই বাংলাদশেরে মানুষ গ্রহণ বা সমর্থন করতে পারে না। বস্তুত অমিত শাহের প্রদত্ত বিএনপি ও বাংলাদশে বিরোধী বক্তব্যকে নিরঙ্কুশভাবে সর্মথন করে ওবায়দুল কাদের ভারত সরকাররে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রাবীশ কুমারের বর্ধিত দায়িত্ব পালন করেছেন মাত্র।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমরা আবারো বলছি বিএনপি ও বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন সরকার যখনই রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িয়েত্ব ছিল তখন সকল ধর্মের মানুষের মাঝে সম্প্রীতি রক্ষায় সচেষ্ট এবং সফল ছিল। ভারতের গুজরাট দাঙ্গা ও বাবরি মসজিদ সঙ্কটকালীন ঘটনা এর সুস্পষ্ট উদাহরণ। অথচ, শেখ হাসিনার ১৯৯৬-২০০১ এবং ২০০৯-২০১৯ সময়কালের এই ১৫ বছরে রামু, নাসিরনগর, নাটোরের বড়াইগ্রাম, ঠাকুরগাঁও, যশোরের মালোপাড়াসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে যে সকল ঘটনা ঘটেছে তার প্রতিটির সাথেই আওয়ামী লীগের সংশ্লিষ্টতা বহুলভাবে প্রচারিত। এমনকি গত ১০ বছরে আওয়ামী লীগের বহু এমপি, মন্ত্রীর নাম গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে, যারা বিভিন্নভাবে সংখ্যালঘুদের সম্পত্তি দখল করেছে। যা গত কয়েক বছরে বাংলাদশে হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ ও বাংলাদেশ হিন্দু মহাজোটের বিভিন্ন রিপোর্টে প্রকাশিত হয়েছে। অতএব, বাংলাদেশের সমগ্র মানুষের স্বার্থরক্ষায় বিএনপির পক্ষ থেকে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্যের তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জানাই। আমরা আশা করি, ভবিষ্যতে আওয়ামী লীগের পক্ষে দেশের স্বার্থবিরোধী যেকোনো বক্তব্য প্রদান থেকে তিনি সম্পূর্ণরূপে বিরত থাকবেন।

এক প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, মিয়ানমার জোরপূর্বক রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে পাঠিয়েছে। ঠিক তেমনই ভারত ইতোমধ্যে বহু লোককে পুশইন করেছে। মনে হচ্ছে যেন বাংলাদেশ হতে চলেছে ‘ডাম্পিং স্টেশন’।