বিক্ষোভ সমাবেশে বিএনপি নেতৃবৃন্দ

‘রাজপথের আন্দোলনেই কারামুক্ত হবেন খালেদা জিয়া’

‘রাজপথের আন্দোলনেই কারামুক্ত হবেন খালেদা জিয়া’

বেগম খালেদা জিয়াকে অন্যায়ভাবে মিথ্যা মামলায় ও ফরমায়েশি রায়ের মাধ্যমে সাজা দেওয়া হয়েছে। প্রচলিত আইনে তার জামিন হওয়ার কথা থাকলেও বিচার বিভাগের ওপর সরকারের হস্তক্ষেপের কারণে তিনি জামিন পাচ্ছেন না।রাজপথে আন্দোলনের মাধ্যমেই খালেদা জিয়াকে মুক্ত করা হবে।

শনিবার বিকালে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশে দলটির কেন্দ্রীয় নেতারা এসব কথা বলেন। খালেদা জিয়ার কারাবাসে দুইবছর পূর্তি উপলক্ষে এ সমাবেশ আয়োজন করা হয়।

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘খালেদা জিয়া সারাজীবন গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম করেছেন, জেল খেটেছেন। তার মুক্তির জন্য আমরা সভা-সমাবেশ করেছি মিছিল করেছি। এখন একটাই কথা- খালেদা জিয়াকে মুক্ত করবই এবং সরকারকে বাধ্য করব খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিতে।’

তিনি বলেন, ‘গণতন্ত্রের আপসহীন নেত্রী খালেদা জিয়া মিথ্যা মামলা রাজনৈতিক কারণে তাকে বন্দি করে রাখা হয়েছে। তিনি প্রচণ্ড অসুস্থ, নিজে খেতে পারেন না, চলতে পারে না। দুই বছর ধরে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে তাকে আটকে রাখা হয়েছে।’

ফখরুল বলেন, ‘সরকার আইনে বিশ্বাস করে না। তারা ক্ষমতায় রয়েছে জনগণের ম্যান্ডেট ছাড়া। রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে ক্ষমতায় টিকে রয়েছে। এই সরকার জনগণের সরকার নয়। কারণ তাদের জনগণের ম্যান্ডেট নেই। তারা গণতন্ত্রের চেতনাকে ধ্বংস করে দিয়েছে। বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ধ্বংস করে দিয়েছে। দেশের বিচার ব্যবস্থা এখন স্বাধীন নয়। দেশের প্রধান বিচারপতিকে বন্দুকের নলের মুখে দেশ ছাড়তে বাধ্য করা হয়েছে। যে বিচারক তারেক রহমানকে খালাস দিয়েছিলেন তাকে তাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে দেশ থেকে।’

দেশের অর্থনীতিকে ধ্বংস করা হয়েছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, ‘একদিন আগে অর্থমন্ত্রী বললেন সবদিক থেকে অর্থনীতি ঊর্ধ্বমুখী। পরের দিন জাতীয় সংসদে বললেন, অর্থনীতির অবস্থা ভালো না। এরপর তার চাকরি থেকে কী করে?’

দেশের দুর্নীতি কমছে না উল্লেখ করে ফখরুল বলেন, ‘দুর্নীতির জন্য যুবলীগের প্রেসিডেন্ট কে বাদ দিতে হয়েছে, ছাত্রলীগের প্রেসিডেন্ট কে বাদ দিতে হয়েছে। কিন্তু দুর্নীতি কমেনি। জনগণ এখন আর আওয়ামী লীগকে চায় না। তারা জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করেছে।’

বিএনপির মহাসচিব আরও বলেন, ‘১৯৭১ সালে তারা শপথ নিয়েছিল গণতন্ত্রের চেতনাকে ঊর্ধ্বে তুলে ধরার জন্য। কিন্তু তারা সেই শপথ রক্ষা করেনি। তারা গণতন্ত্রের চেতনাকে ধ্বংস করেছে।’

মাত্র ১৫ শতাংশ ভোট নিয়ে জনগণের মেয়র হওয়া যায় না মন্তব্য করে ‘নির্বাচনের ফলাফল বাতিল করুন, পুনরায় ভোট দিন জনগণের মেয়র নির্বাচিত করুন। নিরপেক্ষ সরকার ও নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশনের অধীনে নির্বাচন দিন।’

ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘খালেদা জিয়ার মুক্তির আন্দোলনের অংশ হিসেবে বিএনপি নির্বাচনে অংশ নিয়েছিল। সেই নির্বাচনকে কলঙ্কের নির্বাচনে পরিণত করল। যখন তারা বুঝতে পারল, জনগণ ভোট দিতে পারলে তাদের জামানত থাকবে না, তখন তারা ৩০ ডিসেম্বরের ভোট ২৯ ডিসেম্বর রাতে করে ফেলেছে।’

জালিয়াতির মাধ্যমে ক্ষমতায় আসার পর সরকার আরও বেশি ফ্যাসিস্ট চরিত্র ধারণ করেছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, ‘ফ্যাসিবাদী কায়দায় সরকার দেশ পরিচালনা করছে। সে কারণে যে মামলায় এক দিনের মধ্যে জামিন হওয়ার কথা, সে মামলায় খালেদা জিয়াকে বন্দি করে রেখেছে। জামিন যার ন্যায্য অধিকার, সেই অধিকার থেকে তাকে বঞ্চিত করেছে।’

সরকারের সরাসরি নির্দেশ সুপ্রিম কোর্ট খালেদা জিয়ার জামিন আদেশ নাকচ করে দিয়েছে অভিযোগ করে ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘আমরা বুঝতে পারছি দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার কোনো অন্যায় নেই। রাজনৈতিক কারণে তিনি আজ বন্দি।’

গণতন্ত্র আজ আওয়ামী লীগের বক্সে বন্দি মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘শুধু জাতীয় নির্বাচন নয়, স্থানীয় নির্বাচনেও ভোট ডাকাতির মাধ্যমে, ভোট জালিয়াতির মাধ্যমে আওয়ামী লীগকে জিততে হচ্ছে। কারণ, জনগণ তাদেরকে আর ভোট দিতে চায় না। তাদেরকে আর ক্ষমতায় দেখতে চায় না।’

‘তাই এ দেশের গণতন্ত্রকে যদি ফিরিয়ে আনতে চাই, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে যদি মুক্ত করতে চাই, তাহলে আন্দোলনের কোনো বিকল্প নেই। আমাদের প্রয়োজন দ্রুত আন্দোলন। আন্দোলনের মাধ্যমেই আমরা গণন্ত্র এবং খালেদা জিয়াকে মুক্ত করব’— বলেন ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন।

সমাবেশে স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, সরকার জনগণের ভয়ে সভা-সমাবেশ করতে দেয় না, সুষ্ঠু নির্বাচন দেয় না। কারণ তারা অন্যায় করছে, দুর্নীতি করছে। তারা জনগণকে ভয় পায়।

ঢাকা দুই সিটির জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়েছে ধানের শীষের মেয়র প্রার্থী ইশরাক হোসেন ও তাবিথ আওয়াল উল্লেখ করে মওদুদ বলেন, মেশিনে মেয়র হয়েছে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা। তারা সত্যিকারের মেয়র না। সরকারের উচিত এ নির্বাচন বাতিল করে পুনরায় নির্বাচনের ব্যবস্থা করা।

মির্জা আব্বাস বলেন, আওয়ামী লীগ তিন বারের প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে সম্মান দিচ্ছে না। দুই বছর তাকে আটকে রাখা হয়েছে। কামারের ঘরে পুথি পাঠে লাভ নেই, শুনতে পাবে না, ঢোল পিটাতে হবে।

খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে ডাকা সমাবেশে সকাল থেকেই বিএনপি নেতা-কর্মী সমর্থকদের ঢল নামে। দুপুর ২ টায় সমাবেশ শুরুর আগেই নয়াপল্টন কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে এসে হাজির হন তারা।

কোরআন তেলোয়াতের মধ্য দিয়ে সমাবেশের আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু হয়। কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে নির্মিত অস্থায়ী মঞ্চ থেকে দলের নেতারা একেক করে বক্তব্য দেন। সমাবেশ পরিচালনা করছেন বিএনপির প্রচার বিষয়ক সম্পাদক শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানী ও সহ-প্রচার সম্পাদক আমিরুল ইসলাম আলীম।

সমাবেশ ২টায় শুরু হলেও সকাল থেকেই নয়াপল্টন কার্যালয়ের সামনে আসতে শুরু করে বিএনপির নেতাকর্মী সমর্থকেরা। বিভিন্ন ইউনিটে ভাগ হয়ে মিছিল নিয়ে সমাবেশস্থলে আসেন তারা। তাদের হাতে ধানের শীষের রেপ্লিকা, ফেস্টুন, খালেদা জিয়ার পোস্টারসহ প্রতিবাদী স্লোগান লেখা ব্যানার ছিল। খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে মুর্হূর্মুহূ স্লোগান দিচ্ছিলেন তারা।

সমাবেশে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ড. মঈন খান, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বরচন্দ্র রায়, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সেলিমা রহমান, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্যা বুলু, মো. শাহজাহান, শামসুজ্জাজামান দুদু, ড. এ জেড এম জাহিদ হোসেন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুস সালাম, আমান উল্লাহ আমান, হাবিবুর রহমান হাবিব, ফজলুর রহমান, মিজানুর রহমান মিনু, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, হাবীব উন নবী খান সোহেল, সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন, শামা ওবায়েদ, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আব্দুস সালাম আজাদ, মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক সুলতানা আহমেদ, যুবদলের সভাপতি সাইফুল আলম নিরব, সাধারণ সম্পাদক সুলতানান সালাউদ্দিন টুকু, ওলামা দলের সভাপতি শাহ নেছারুল হক, শ্রমিক দলের সাধারণ সম্পাদক সাদেক খান, ছাত্রদলের সভাপতি ফজলুর রহমান খোকন, সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন শ্যামলসহ অন্যরা।