দেশের প্রতিটি নাগরিকের বিনামূল্যে করোনা টিকা নিশ্চিত করতে হবে: তারেক রহমান

দেশের প্রতিটি নাগরিকের বিনামূল্যে করোনা টিকা নিশ্চিত করতে হবে: তারেক রহমান

বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের সংকটময় পরিস্থিতি মোকাবেলায় সরকারকে দুর্নীতির পথ পরিহার করার আহবান জানিয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, "দেশের প্রতিটি নাগরিকের জন্য বিনামূল্যে করোনা টিকা নিশ্চিত করতে হবে।"

তিনি বলেন, "কোভিড-১৯ পরিস্থিতি মোকাবেলায় ক্ষমতাসীন সরকারের সামনে এই মুহূর্তে সবচেয়ে অগ্রাধিকার হওয়া উচিত দেশের মানুষের জন্য ভ্যাকসিন প্রাপ্তি নিশ্চিত করা।"

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির ৪২ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে দেয়া এক বক্তব্যে এই আহবান জানান দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।

ভিডিওটি দেখতে এখানে ক্লিক করুন

মহামারির এ সংকটে মানুষের জীবন নিয়ে দুর্নীতি না করার কথা উল্লেখ করে ক্ষমতাসীন সরকারকে উদ্দেশ্য করে তারেক রহমান বলেন, "দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন শেখ হাসিনা সরকারকে সতর্ক করে দিয়ে বলতে চাই করোনার ভ্যাকসিন সংগ্রহে দুর্নীতির আশ্রয় নেবেন না। মানুষের জীবনকে বাজি রেখে দুর্নীতি করবেন না।"

তিনি আরো বলেন, "কয়েকটি দেশ করোনা ভাইরাসের ভ্যাকসিন ট্রায়াল প্রক্রিয়া প্রায় শেষ ধাপে রয়েছে। তাই ভ্যাকসিন প্রাপ্তি নিশ্চিত করতে বাংলাদেশে ভ্যাকসিনের তৃতীয় ধাপ ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের অনুমতি দেয়ার পাশাপাশি সম্ভাব্য সকল বিকল্প সম্পর্কে সজাগ থাকতে হবে। আমাদেরকে গ্লোবাল অ্যালায়েন্স ফর ভ্যাকসিনেশন অ্যান্ড ইমিউনাইজেশনস (জিএভিআই) এর সদস্য হতে হবে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং ভ্যাকসিন গবেষণা উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করতে হবে। যাতে যথা সময়ে ভ্যাকসিন পেতে বাংলাদেশকে সমস্যায় পড়তে না হয়।"

প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে সর্বস্তরের নেতা-কর্মী, শুভাকাঙ্ক্ষী, সমর্থক এবং দেশবাসীকে শুভেচ্ছা জানিয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, "আপনাদের ভালোবাসায় সিক্ত হয়ে দলটি প্রতিষ্ঠার পর থেকে আজ পর্যন্ত সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং বিশ্বস্ত রাজনৈতিক দল হিসেবে মানুষের আস্থা অর্জনে সক্ষম হয়েছে।আমি সারাদেশের বিএনপির সর্বস্তরের নেতা-কর্মী, শুভাকাঙ্ক্ষী, সমর্থকদেরকে শুভেচ্ছা জানাচ্ছি।"

তারেক রহমান বলেন, "বাংলাদেশের রাজনীতিতে বিএনপি এমন একটি রাজনৈতিক দল যাদের কাছে নিরাপদ বাংলাদেশ, যাদের কাছে নিরাপদ গণতন্ত্র, যাদের কাছে নিরাপদ মানুষের স্বাধীনতা এবং সম্মান।"

দলের প্রতিষ্ঠাতা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের স্মৃতিচারণ করে তিনি বলেন, "বিএনপির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে আমি শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি বিএনপি’র প্রতিষ্ঠাতা স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকে। যিনি বাংলাদেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। সংবাদপত্রের স্বাধীনতা ফিরিয়ে দিয়েছিলেন। আওয়ামী লীগসহ নিষিদ্ধ ঘোষিত সকল রাজনৈতিক দলগুলোকে রাজনীতি করার সুযোগ করে দিয়েছিলেন।"

গণতান্ত্রিক আন্দোলন আর অগ্রযাত্রায় দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার অবদানের কথা উল্লেখ করে তারেক রহমান বলেন, "দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার আদর্শ, নেতৃত্ব ও ব্যক্তিত্ব বিএনপিকে পৌঁছে দিয়েছে টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া, রুপসা থেকে পাথুরিয়া। দেশের প্রতিটি এলাকার প্রতিটি অঞ্চলের মানুষের হৃদয়ে তিনি মাদার অফ ডেমোক্রেসি হিসেবে জায়গা করে নিয়েছেন।"

নেতা-কর্মীদের ত্যাগ-তিতিক্ষার কথা উল্লেখ করে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন আরো বলেন, "দলের প্রতিষ্ঠাকাল থেকে আরম্ভ করে আজ পর্যন্ত বিএনপি অসংখ্য নেতা-কর্মী, সমর্থক ইন্তেকাল করেছেন। সারাদেশে বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা-কর্মী, সমর্থক শুধুমাত্র বিএনপি করার কারণেই এই অবৈধ সরকার এবং তাদের লেলিয়ে দেওয়া সন্ত্রাসীদের দ্বারা নির্যাতিত হয়েছেন। বছরের পর বছর ধরে হামলা কিংবা মিথ্যা মামলায় হয়রানির শিকার হয়েছেন। অনেকে বিভিন্ন সময় ক্ষমতাসীনদের নির্মমতার শিকার হয়ে প্রাণ দিয়েছেন। তাদেরকে আমি শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করছি। মহান আল্লাহর কাছে তাদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি।"

তারেক রহমান বলেন, "আজ আমি আবার একটি প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করতে চাই। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে বিভিন্ন সময় যারা আত্মত্যাগ করেছেন, নির্যাতন নিপীড়নের শিকার হয়েছেন, জনগণের সমর্থনে আগামী দিনে বিএনপি আবারো রাষ্ট্রপরিচালনার সুযোগ পেলে গণতন্ত্রের জন্য তাদের অবদান অবশ্যই শ্রদ্ধার সঙ্গে মূল্যায়ন করা হবে। ইনশাআল্লাহ।"

বিগত এক দশকেরও বেশি সময় ধরে বিএনপিকে ক্ষমতায় থেকে দূরে রাখার অপচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, "বিএনপি সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং জনসমর্থিত দল হওয়া সত্ত্বেও বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা বিরোধী দেশি-বিদেশি নানা অপশক্তির ষড়যন্ত্রে দেশে গণতন্ত্রের কবর রচনা করা হয়েছে। মানবাধিকারের কবর রচনা করা হয়েছে।"

দেশে গণমাধ্যমে স্বাধীন মত প্রকাশের স্বাধীনতা নেই মন্তব্য করে তারেক রহমান বলেন, "একদিকে স্বৈরাচারী শাসকের শোষণে নিষ্পেষিত জনগণ, অপরদিকে মরণঘাতী করোনাভাইরাস। কয়েকটি জেলায় বন্যার ভয়াল থাবা। সব মিলিয়ে চলছে দেশে এখন নীরব দুর্ভিক্ষ পরিস্থিতি। বেড়েই চলেছে চাল-ডাল-আটা-তেলসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য।এমন বিপদের মধ্যে বাংলাদেশের জন্য আরেকটি বড় সমস্যা মিয়ানমার থেকে আশ্রয় নেওয়া প্রায় ১১ লাখ রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর।"

রোহিঙ্গা পরিস্থিতি ক্রমেই জাতীয় সংকটে রূপ নিচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, "এ সরকারের জন্যই গত তিন বছরে বাংলাদেশে একজন রোহিঙ্গাকেও মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো যায়নি। নিশি রাতের সরকারের নতজানু নীতির কারণে রোহিঙ্গা ইস্যু মোকাবেলায় আন্তর্জাতিক বিশ্বে বাংলাদেশ হয়ে পড়েছে একা। প্রতিটি ঘটনাকে সরকার দলীয় স্বার্থে ব্যবহার করতে গিয়ে বারবার দেশকে বিপদের মুখে ঠেলে দিয়েছে।"

তারেক রহমান বলেন, "২০০৯ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে পিলখানার সুপরিকল্পিত বিডিআর হত্যাকান্ডের বিভীষিকাময় স্মৃতি জনগণ এখনো ভুলে যায়নি। সেই নারকীয় সেনা হত্যাযজ্ঞে দলীয়ভাবে আওয়ামী লীগ লাভবান হলেও অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে বাংলাদেশের। বিডিআর বিদ্রোহের নামে পিলখানা হত্যাযজ্ঞ না ঘটলে এতো বিপুল সংখ্যাক রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠিকে বাংলাদেশের দিকে কেউ ঠেলে পাঠাতে সাহস পেতো কিনা অথবা অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহাকে এভাবে পুলিশের হাতে নির্মমভাবে প্রাণ দিতে হতো কিনা জনমনে এমন জিজ্ঞাসা রয়েছে।"

তিনি আরো বলেন, "মেজর সিনহার নির্মম হত্যাকাণ্ডে আবারো প্রমাণিত হয়েছে ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে বর্তমান সরকার পুলিশ বাহিনীর ভেতরে একটি পেশাদার খুনি বাহিনী তৈরি করেছে। পুলিশের ইউনিফর্ম পরা পেশাদার এই খুনি গ্রুপটির কাছে রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মী, ভিন্নমতের মানুষ, পেশাজীবী মানুষ, সাধারণ মানুষ কিংবা সেনাবাহিনীর কর্মকর্তা সবাই সমান।"

এমএইচ/জেএস