খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার আরো অবনতি : রিজভী

খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার আরো অবনতি : রিজভী

ঢাকা, ২৯ এপ্রিল (জাস্ট নিউজ) : বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ বলেছেন, মিথ্যা ও ষড়যন্ত্রমূলক মামলায় কারাবন্দী তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা আগের চেয়ে আরো অবনতি হয়েছে।

শনিবার দলের মহাসচিবসহ সিনিয়র নেতারা তার সঙ্গে দেখা করার পর রবিবার সংবাদ সম্মেলনে বেগম খালেদা জিয়ার সর্বশেষ শারীরিক পরিস্থিতি তুলে ধরেন।

নয়া পল্টনে দলীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে রিজভী আহমেদ বলেন, গুরুতর অসুস্থ বেগম খালেদা জিয়াকে এখনো তার পছন্দানুযায়ী হাসপাতাল ও ব্যক্তিগত চিকিৎসকদের দ্বারা চিকিৎসার ব্যবস্থা না করে তিলে তিলে কষ্ট দিয়ে সরকার প্রতিহিংসা বাস্তবায়নে চুড়ান্ত লক্ষ্যের দিকে এগুচ্ছে কী না তা নিয়ে জনমনে এখন নানা প্রশ্ন ও শঙ্কা তৈরী হয়েছে।

দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার অসুস্থতার ক্রমাগত অবনতির খবরে গোটা জাতি এখন চরম উদ্বিগ্ন। দেশনেত্রীকে নিয়ে সরকারের মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিভৎস মূর্তি মানবজাতিকেই শিহরিত করছে। আমি আবারো অতি দ্রুত দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় নেত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে তার পছন্দের হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়ার জোর দাবি জানাচ্ছি।

তিনি বলেন, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে নিয়ে আওয়ামী লীগের মাথাব্যথার যেন শেষ নেই। তাকে নিয়ে তাদের অন্তহীন ষড়যন্ত্র বারবার ব্যর্থ হয়ে যাওয়ায় এখন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে নানা অপপ্রচারের জন্য সেল খোলা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর একজন উপ-প্রেস সচিবের ফেসবুক আইডিতে নানা মিথ্যা ও বানোয়াট গল্প বানিয়ে প্রচার করা হচ্ছে। এই ধরণের অপপ্রচার নিম্ন রুচির পরিচায়ক। যারা কুরুচিসম্পন্ন এবং যারা অপরাজনীতি ও অসভ্যতার চর্চা করে তারাই কেবল অসত্য ও নোংরা রাজনীতির আশ্রয় নেয়।

রিজভীর আহমেদের ভাষায়, আওয়ামী লীগ কুৎসা সঞ্চারিত মনের বিকারে ভোগে। তাদের ঐতিহ্যে সভ্যতা ও সুরুচির কখনোই কোনো নিদর্শন ছিল না। সেজন্য তাদের কোন কথাই জনগণ বিশ্বাস করে না। আমি এই ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।

রিজভী আহমেদ বলেন, আসন্ন গাজীপুর ও খুলনা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন উপলক্ষে দুই সিটিতে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করতে ব্যর্থ হয়েছে নির্বাচন কমিশন। এখন পর্যন্ত দুই সিটিতে নির্বাচনী পরিবেশ তৈরি করতে পারেনি ইসি। নির্বাচনী প্রচারণা শুরু হলেও দুই সিটিতে ক্ষমতাসীনদের বৈধ ও অবৈধ অস্ত্রের ছড়াছড়ি। সন্ত্রাসীরা এলাকায় এলাকায় দাবড়িয়ে বেড়াচ্ছে। অন্যদিকে দুই সিটিতে আওয়ামী লীগের দুই প্রার্থীর বিরুদ্ধে কালো টাকার ছড়ানোর অভিযোগ করলেও এবং প্রতিনিয়ত আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ ইসিতে জমা দিলেও নির্বাচন কমিশন অন্ধের ভূমিকা পালন করছে।

তিনি বলেন, আমি দ্ব্যর্থহীন ভাষায় বলতে চাই-দলীয়করণের মাধ্যমে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে আওয়ামী লীগ যেভাবে নষ্ট করে ফেলছে তাতে তাদের মাধ্যমে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। সমাজের বিশিষ্ট নাগরিকরাও বলেছেন দলীয় আইন শৃঙ্খলা বাহিনী দিয়ে সুষ্ঠু নির্বাচন কখনোই সম্ভব নয়। তাই নির্বাচনের সাত দিন আগে দুই সিটিতে সেনা মোতায়েনের জোর দাবি জানাচ্ছি। আমি ইসি’র সচিবের উদ্দেশ্যে বলতে চাই-আপনার ভূমিকা হতে হবে প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীর মতো, কোনে দলীয় ক্যাডারের মতো নয়। ইসির সচিবের কার্যক্রমে মনে হচ্ছে-তিনি আওয়ামী লীগের পদহীন ক্যাডারের ভূমিকা অত্যন্ত নিষ্ঠার সাথে পালন করছেন।

রিজভী আহমেদ বলেন, গতকাল গাজীপুরের মৌচাকে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল সাহেবের সভাপতিত্বে এক নির্বাচনী যৌথসভা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে জাহাঙ্গীর কবির নানক, বাহাউদ্দিন নাসিম, আহমদ হোসেন এবং গাজীপুর জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আখতারুজ্জামান আওয়ামী লীগ প্রার্থী জাহাঙ্গীরকে বিজয়ী করতে আহবান জানান। যা সুষ্পষ্টভাবে নির্বাচনী আচরণবিধির লঙ্ঘন।

তিনি বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিপীড়ণ নির্যাতন চলছে দুই সিটিতে। বিএনপি ও ২০ দলীয় জোটের নেতাকর্মীদের বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে, ক্রসফায়ারের ভয় দেখানো হচ্ছে, এমনকি নেতাকর্মীদের বিনা কারণে গ্রেফতার করছে পুলিশ। গত দু’দিন আগে গাজীপুর জেলা জামায়াতের আমীর অধ্যক্ষ এস এম সানাউল্লাহসহ ৪৫ জন নেতাকর্মী ২০ দলীয় জোট প্রার্থী হাসান উদ্দিন সরকারের পক্ষে নির্বাচনী প্রচারণাকালে তাদের গ্রেফতার করা হয়েছে। গাজীপুর নগরীর বিভিন্ন এলাকায় পুলিশী হয়রানী ও হুমকি ধামকি দিয়ে ভীতিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করছে। গতকালও টঙ্গী বিএনপির কার্যালয়ে পুলিশ অবস্থান নিয়ে ভীতির সৃষ্টি করে, যাতে নেতাকর্মীরা ভয়ে দলীয় অফিসে না আসে।

রিজভী আহমেদ আরো বলেন, গাজীপুরের পুলিশ এখন ভয়ঙ্কর আতঙ্কের নাম। আর এই আতঙ্কের মহানায়ক হচ্ছে এসপি হারুন। যার হাতে বিরোধী দলের এমপি থেকে শুরু করে তৃণমূলের কর্মী পর্যন্ত নিপীড়ণ নির্যাতন ও আর্থিক শোষণের শিকার হয়েছে বারবার। তার দাপটে গাজীপুরে সাধারণ নিরীহ মানুষরা এলাকা ছেড়ে অন্যত্র চলে যেতে বাধ্য হচ্ছে। বিরোধী দলের তরুণ কর্মীরা কেউ গাজীপুরে অবস্থান করতে পারে না।

গাজীপুরের এক মূর্তিমান আতঙ্কের নাম এসপি হারুন। তার লাগামছাড়া ক্ষমতার অপব্যবহারে গাজীপুরবাসীর স্বপ্নে-দু:স্বপ্নে দিনরাত্রী এক হয়ে গেছে। আমরা শুরু থেকে গাজীপুরের পুলিশ সুপার হারুন অর রশিদের প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে আসছিলাম। কিন্তু স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এ ব্যাপারে নির্বিকার। আমি অবিলম্বে গাজীপুরের এসপি হারুনের প্রত্যাহার দাবি করছি। একইসঙ্গে দুই সিটিতে নির্বাচনী পরিবেশ তৈরী এবং কালো টাকার ছড়াছড়ি বন্ধের উদ্যোগ নিতে ইসি’র প্রতি জোর দাবি জানাচ্ছি।

তিনি বলেন, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি শফিউল বারী বাবুকে আবারো তিন দিনের রিমান্ডে নিয়ে আসা হয়েছে। তাকে রিমান্ডে নিয়ে এসে গত দু’দিন ধরে নিপীড়ণ নির্যাতন চালানো হচ্ছে। শফিউল বারী বাবুর ওপর এই নির্যাতন আন্দোলনরত তরুনদেরকে ভয় পাইয়ে দিতে সরকারের অপকৌশল। কিন্তু তরুন নেতাদের ওপর যতো উৎপীড়ন হবে ততোই তরুন সমাজ আন্দোলনের ঝাঁপিয়ে পড়বে। আমি বাবুকে রিমান্ডে নেয়ার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছি এবং তার রিমান্ড প্রত্যাহার করে তার মুক্তির জোর দাবি জানাচ্ছি।

রিজভী আহমেদ বলেন, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নি:শর্ত মুক্তির দাবিতে বিএনপির কেন্দ্র ঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে গতকাল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী যুবদলের উদ্যেগে দেশব্যাপী বিক্ষোভ কর্মসূচি পালিত হয়। কর্মসূচি পালনকালে জাতীয়তাবাদী যুবদল ঢাকা মহানগর দক্ষিণ খান থানার সভাপতি সৈয়দ দেলোয়ার হোসেন, সাধারণ সম্পাদক শেখ আবদুল্লাহ রাসেল, সাবেক যুগ্ম সম্পাদক মোবারক হোসেন, মুক্তার হোসেন, উত্তরা পশ্চিম থানা যুবদল সদস্য মাঈন উদ্দিন, আরাফাত, রাহাত, নাজমুল, রুবেল, শাকিল, আলী হোসেন, ঢাকা মহানগর ৯৬ নং ওয়ার্ড যুবদল সভাপতি হাবিবুল্লাহ ও বাড্ডা উত্তর ইউনিয়ন যুবদল নেতা জাহাঙ্গীর শিকদার বাবুকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

এছাড়া গত শুক্রবার পটুয়াখালী জেলাধীন দুমকি উপজেলা বিএনপির সভাপতি মোঃ খলিলুর রহমানকে রাষ্ট্রদ্রোহিতার মিথ্যা ও বানোয়াট মামলায় পুলিশ গ্রেফতার করেছে।

গতকাল ঢাকা মহানগর উত্তরা থানা স্বেচ্ছাসেবক দলের সাংগঠনিক সম্পাদক শহিদুল ইসলাম মিঠুকে জেলগেট থেকে পূনরায় গ্রেফতার করেছে পুলিশ। আমি এই গ্রেফতারের ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি এবং অবিলম্বে তাদের নি:শর্ত মুক্তির জোর দাবি করছি।

জাস্ট নিউজ/এমআই/১২৫৩ঘ.)