চুরির কারণেই এই বিদ্যুৎ বিপর্যয়: বিএনপি মহাসচিব

চুরির কারণেই এই বিদ্যুৎ বিপর্যয়: বিএনপি মহাসচিব

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেছেন, সরকারের ব্যর্থতা ও চুরির কারণে বিদ্যুতে এ বিপর্যয় ঘটেছে। শুধু বিদ্যুতেই নয়, সর্বক্ষেত্রে ঘটনাগুলো ঘটছে।

জাতীয় গ্রিডে সমস্যা থেকে গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে ঢাকাসহ দেশের অর্ধেক এলাকা বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়ে। ৮ থেকে ১০ ঘণ্টা, কোথাও কোথাও তার চেয়ে বেশি সময় পরে বিদ্যুৎ ফিরে আসে।

এই বিদ্যুৎ বিপর্যয় নিয়ে আজ বুধবার কথা বলেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, এই সরকার একটা বোঝা হয়ে গেছে দেশের ওপর। তাদের না সরালে জাতির অস্তিত্বই টিকে থাকা মুশকিল হবে। তারা দেশে লুটপাটের যে দুষ্টচক্র তৈরি করেছে, এখান থেকে মুক্তি পাওয়ার একটাই উপায়—তাদের পদত্যাগ এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীন নির্বাচন অনুষ্ঠান করা। এর কোনো বিকল্প নেই।

বিদ্যুৎ বিপর্যয়কে সরকার দুর্ঘটনা বলছে, বিএনপি কী মনে করে, সে প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা মনে করি, এটা সরকারের সামগ্রিক ব্যর্থতা। এখানে যে পরিকল্পনার মধ্য দিয়ে এবং যে কাঠামোগত ব্যাপারটা থাকে, অর্থাৎ টেকনিক্যাল সাইড যেটা থাকে, সেখানে টোটালি চুরি হয়েছে বলেই আজকে এই বিপর্যয় ঘটেছে। শুধু বিদ্যুতেই নয়, সর্বক্ষেত্রে ঘটনাগুলো ঘটছে। এর জন্য মূলত দায়ী সরকারের অপরিকল্পিতভাবে প্রকল্প গ্রহণ করা, যার লক্ষ্য হচ্ছে দুর্নীতি।’

বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘সরকার যে এত চিৎকার-চেঁচামেচি করছে—আমরা বিদ্যুতে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়ে গেছি, অতিরিক্ত উৎপাদনও হচ্ছে প্রয়োজনের তুলনায়। সেগুলো নিয়ে আমরা সেমিনারে বলেছি, কোথায় সমস্যা হচ্ছে। কিন্তু গতকালের ব্যাপারটা ছিল অস্বাভাবিক ব্যাপার। সারা দেশে প্রায় আট ঘণ্টা বেশির ভাগ জায়গায় বিদ্যুৎ ছিল না। এটা একটা পুরো ব্ল্যাকআউটের মতো হয়ে গেছে। এর থেকে যেটা বোঝা যায়, সরকার বিদ্যুৎ উৎপাদনের নাম করে বহু প্রজেক্ট করেছে, টাকাপয়সাও বহু বানিয়েছে। শেষ পর্যন্ত দেখা যায়, জাতিকে একটা বড় ধরনের বিপর্যয়ের মধ্যে ফেলে দিয়েছে।’

দুপুরে আসাদ গেটে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদকে দেখতে যান বিএনপির মহাসচিব ও স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। সেখানেই তাঁরা সাংবাদিকদের সঙ্গে দেশের বিদ্যুৎ বিপর্যয় নিয়ে কথা বলেন। এ সময় সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন তাঁরা।

তথ্য পরিকাঠামোর ঘোষণা ‘ভয়াবহ নিয়ন্ত্রণ’

২৯টি সরকারি প্রতিষ্ঠানকে তথ্য পরিকাঠামো ঘোষণা নিয়ে প্রজ্ঞাপন জারিকে ‘ভয়াবহ’ আখ্যায়িত করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘আমরা যেটা বলছি, কর্তৃত্ববাদী সরকার। তার যে বহিঃপ্রকাশ, তারা যে আরও নিয়ন্ত্রণের দিকে যাচ্ছে, দেশকে পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ করবে, দেশের মানুষকে বঞ্চিত করবে সমস্ত তথ্য পাওয়া থেকে—এটা তারই বহিঃপ্রকাশ। এখন আর কোনো ফাঁক রইল না, স্বয়ং রাষ্ট্রপতির কাছ থেকে যখন এ ধরনের সার্কুলার আসে, তখন এই দেশ যে পুরোপুরি কর্তৃত্ববাদী হয়ে গেছে, সে ব্যাপারে আর কোনো সন্দেহ নেই।’

এ সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান বিএনপির মহাসচিব।

‘আওয়ামী মডেল অব ইকোনমির’ প্রতিফলন

বিদ্যুতের বিপর্যয়কে ‘আওয়ামী মডেল অব ইকোনমির’ প্রতিফলন বলে মন্তব্য করেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। তিনি বলেন, বিদ্যুৎ খাতে তারা দুর্নীতির জন্য একচেটিয়া রেন্টাল, কুইক রেন্টালসহ বিভিন্ন পাওয়ার প্ল্যান্ট দিয়েছে, যাতে তাড়াতাড়ি টাকা বানানো যায়। কিন্তু এগুলোর সঙ্গে ট্রান্সমিশন, ডিস্ট্রিবিউশনের যে সিনক্রোনাইজেশন, তারা সেটা করেনি।

আমীর খসরু বলেন, ‘সবচেয়ে বড় দুঃখের বিষয় হচ্ছে এসব পারমিশন কিন্তু আনসোলিসিটেড (অযাচিত)। এগুলোর টেন্ডার হয় নাই। সরকার নির্দিষ্ট লোকজনকে দেওয়া হয়েছে। আইনও করা হয়েছে যে তাদের বিরুদ্ধে কোনো মামলাও করা যাবে না এবং তাদের সমস্ত সুযোগ-সুবিধা, ফিক্সড চার্জসহ নিয়মিত পয়সা দিচ্ছে, তার মূল্য জনগণকে আজকে দিতে হচ্ছে।’

সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী আমীর খসরু মাহমুদ বলেন, ‘তেল, গ্যাস, বিদ্যুৎ—এগুলো এখন আর বাজার পণ্য নয়, এগুলো রাজনৈতিক পণ্যে পরিণত হয়েছে। তারা (সরকার) এগুলো নিয়ন্ত্রণ করছে, তারাই মূল্য নির্ধারণ করছে, আর জনগণকে তার মূল্য পরিশোধ করতে হচ্ছে। পুরো বাজারটা আওয়ামী লীগের পকেটে ঢুকে গেছে।’
বিদ্যুৎ বিপর্যয় ‘দুই কারণে’

সাবেক বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী ইকবাল হাসান মাহমুদের মতে, বিদ্যুতের ‘ব্ল্যাকআউট’ হয়েছে মূলত দুটি কারণে। তিনি বলেন, ‘সরকার সারা দেশে যে পাওয়ার প্ল্যান্টগুলো দিয়েছে, সেগুলো ইউনিফাইড স্পেসিফিকেশনে দেয় নাই। ফলে কোনো পাওয়ার স্টেশন খুব নিউ জেনারেশনের, আবার কোনোটা পুরোনো। অর্থাৎ নতুন ও পুরোনোর মিশ্রণ আছে। সেটাকে সিনক্রোনাইজড করার জন্য যে কাজ করার কথা ছিল, সেটা এ সরকার করে নাই।’

ইকবাল হাসান মাহমুদ বলেন, ‘আসলে এ সরকার তো বিদ্যুৎ খাতে মানুষকে...কী বলব, “খিদা আছে নে খা। কত খাইতে পারিস খা। তারপরে বিদ্যুৎ দিছে।” কিন্তু শুধু যে জেনারেশনে বিদ্যুৎ চলে না, ট্রান্সমিশনে বিদ্যুৎ লাগে, ডিসট্রিবিউশন লাগে, এগুলোর কিন্তু খুব একটা উন্নতি হয় নাই। খালি বিদ্যুৎ বানিয়ে গেছে। বানিয়ে যাওয়ার ফলে আজকে যেটা হচ্ছে আরকি। এটা আরও হবে ভবিষ্যতে।’

সাবেক বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, ‘এই যে লুটপাট করার জন্য বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ব্যক্তিকে পাওয়ার স্টেশন দিয়েছে, সেই পাওয়ার স্টেশনের স্পেসিফিকেশনগুলো কী, প্রসিডিউরগুলো কী, এটা একটার সঙ্গে আরেকটা ম্যাচ করবে কি না—এসব বিবেচনা করে নাই। না করার ফলে আমরা দেখলাম যে আট ঘণ্টা বিদ্যুৎ নাই। একটা দেশে ৮ ঘণ্টা বিদ্যুৎ না থাকলে কত কর্মঘণ্টা নষ্ট হয়, কত প্রোডাকশন নষ্ট হয়, এটা আপনারা বুঝতে পারছেন।’