যোগ্যতার ভিত্তিতেই তারেক রহমান ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান: মির্জা আলমগীর

যোগ্যতার ভিত্তিতেই তারেক রহমান ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান: মির্জা আলমগীর

ঢাকা, ২ মে (জাস্ট নিউজ) : দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য গ্রহণযোগ্য নয় বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

তিনি বলেন, তারেক রহমান সাজাপ্রাপ্ত কোন মামলায়? যে মামলায় তিনি খালাস পেয়েছিলেন। তাকে খালাস দেয়ার অপরাধে ওই বিচারককে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যেতে হয়েছে। বরং বর্তমান সরকারই সাজাপ্রাপ্তদের মন্ত্রীত্বে বসিয়ে রেখেছেন।

বুধবার জাতীয় প্রেসক্লাবে এক আলোচনা সভায় তারেক রহমানকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় এসব কথা বলেন বিএনপি মহাসচিব।

সাবেক সংসদ সদস্য নাসিরউদ্দিন আহমেদ পিন্টুর তৃতীয় মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে সভার আয়োজন করে ‘নাসিরউদ্দিন আহমেদ পিন্টু স্মৃতি সংসদ।’

সংগঠনের সভাপতি সাইদ হাসান মিন্টুর সভাপতিত্বে সভায় বক্তব্য দেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকতউল্লাহ বুলু, সাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, নির্বাহী কমিটির সদস্য প্রয়াত নাসিরউদ্দিন পিন্টুর স্ত্রী নাসিমা আখতার কল্পনা প্রমুখ।

বুধবার গণভবনে সংবাদ সম্মেলনে এক সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাজাপ্রাপ্ত ব্যক্তি তারেক রহমানকে নেতা নির্বাচনের সমালোচনা করেন।

প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় মির্জা আলমগীর বলেন, ‘তারেক রহমান পার্টির কাউন্সিলে সর্বসম্মত সিদ্ধান্তে সিনিয়র ভাইস চেয়ারপারসন নির্বাচিত হয়েছেন। দলের চেয়ারপারসনের অনুপস্থিতিতে সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান দায়িত্ব নেবেন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের- এটা বিএনপির গঠনতন্ত্রের আছে। আমাদের নেতা আমরা নির্বাচিত করেছি। যোগ্য নেতা বলেই তাকে নির্বাচিত করেছি। এটাতে আপনাদের বলার কিছু নেই, এটা গ্রহণযোগ্য নয়।’

বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আপনারা (সরকার) সব সাজাপ্রাপ্তদের নিয়ে মন্ত্রীত্বে বসিয়ে রেখেছেন। আপনাদের মামলাগুলো নিজেরা নিজেরা তুলে নিয়েছেন। আপনাদের মামলাও থাকুক, অন্যান্যদেরটাও থাকুক। দেখা যাক কি হয়? আর আদালত নিরপেক্ষ হোক।’ সাবেক প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহাকে বন্দুকের নল দিয়ে বের করার অভিযোগ তুলে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘ এই সরকার বিচার বিভাগকে শেষ করে দিয়েছে। বিচার বিভাগের স্বাধীনতা কোথায়? ক্ষমতাসীন দল নিম্ন আদালতের সব ক্ষমতা নিয়ে নিয়েছে।’

তারেক রহমানের দেশে ফিরে আসার প্রসঙ্গে টেনে মির্জা আলমগীর বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী ব্রিটিশ সরকারের সঙ্গে আলাপ করছেন তাকে দেশে ফিরিয়ে আনবেন। এই ভয় আমাদের দেখাচ্ছেন কেন? তারেক রহমান দেশে ফিরতে চাইলে তিনি আসবেন। জন্মগত নাগরিক হিসেবে তিনি দেশে ফিরে আসবেন। সেদিন আপনারা দেখবেন তার জনপ্রিয়তা কত। মানুষ তাকে কত ভালোবাসেন। সেই দিন দেখবেন কোটি কোটি মানুষ তাকে বরণ করার জন্য সেই এয়ারপোর্টে গিয়ে হাজির হয়েছে।’

তারেক রহমানের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলাগুলোর কোনো ভিত্তি নেই বলে দাবি করেন বিএনপি মহাসচিব। তিনি বলেন, ‘বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে যে মামলাগুলো করেছে একটিরও ভিত্তি নেই। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার ১১ বার আইও (তদন্তকারী কর্মকর্তা) পরিবর্তন করেছে। সর্বশেষ যাকে আইও করেছে সে একজন অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এবং আওয়ামী লীগের নমিনেশন প্রার্থী ছিলেন। যাকে দিয়ে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি করেছে, তাকে তো ফাঁসি দিয়ে দিয়েছে যাতে সে কোনো কথা বলতে না পারে।’

রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান মেরুদণ্ডহীন সরকারের পক্ষে সম্ভব নয় বলে মন্তব্য করেন মির্জা আলমগীর বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠাতে সরকার একটা চুক্তি করলেন। ৬ মাস হয়ে গেল এখন পর্যন্ত একজন রোহিঙ্গাকেও ফেরত পাঠাতে পারেনি এবং পারবেন না।’

তিনি বলেন, ‘এখন যে অবস্থা আছে তাতে রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানো যাবে না। এই মেরুদণ্ডবিহীন এই সরকার এখন পর্যন্ত মিয়ানমার সরকারকে নিন্দা জানিয়ে একটাও রেজল্যুশন নেয়নি।’

রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশের আগমনের পটভূমি তুলে ধরে মির্জা আলমগীর বলেন, ‘রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে প্রধানমন্ত্রী বিশ্বমতের সঙ্গে প্রতারণা করেছেন। মনে আছে প্রথম কয়েক দিন রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে ঢুকতে দিলেন না। এমনকি তাদের ওপর গুলিও করা হয়েছিল। বিএনপি চেয়ারপারসন লন্ডন থেকে একটি বিবৃতি দিলেন। তুরস্ক, ইন্দোনেশিয়াসহ কয়েকটি দেশ থেকে কয়েকজন মন্ত্রী আসার পরে তখন তিনি (প্রধানমন্ত্রী) তাদের ঢুকতে দিয়েছিলেন।’

বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘এদেশের মানুষ রোহিঙ্গাদের সহযোগিতা করেছে। আমরা কেউ চাই না তারা এ দেশে থাকুক। তারা বাংলাদেশের নাগরিক নয়, তারা মিয়ানমারের নাগরিক। মিয়ানমারে ফিরে যাওয়ার জন্য তো এই সরকারকে উপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে হবে।’

আগামী নির্বাচনের আগে বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবি জানান মির্জা আলমগীর। তিনি বলেন, ‘আজ অশুভ পদধ্বনির শুনছি। গায়ের জোরে এই সরকার ক্ষমতায় টিকে আছে। রাজনৈতিক সংকট তৈরি করেছেন ভয়াবহভাবে। ক্ষমতাসীন দলের অধীনে নির্বাচন সুষ্ঠু হবে এ দেশের মানুষ বিশ্বাস করে না।’

তিনি বলেন, ‘বিএনপি একা নয়, সব রাজনৈতিক দল বলছে নির্বাচনকালীন সময়ে একটি নিরপক্ষে সরকার দরকার। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে রাজনৈতিক যে সংকট সৃষ্টি হয়েছে তার সমাধান করতে হবে। অবশ্যই সমঝোতার ভিত্তিতে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করতে হবে। সবার আগে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিতে হবে। এছাড়া সংসদ ভেঙে দিতে হবে। প্রধানমন্ত্রীকে পদত্যাগ করতে হবে। নির্বাচনের সময়ে সেনাবাহিনী নিয়োগ করতে হবে।

(জাস্ট নিউজ/একে/২১১৫ঘ.)