বাধা উপেক্ষা করে সমাবেশস্থলে মানুষের ঢল

বাধা উপেক্ষা করে সমাবেশস্থলে মানুষের ঢল

খুলনায় দুপুর ২টায় শুরু হবে বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশ। ইতিমধ্যে সমাবেশস্থলে হাজার হাজার নেতাকর্মীর ঢল নেমেছে। নগরীর ডাকবাংলা চত্বর থেকে শিববাড়ি চত্বর পর্যন্ত পুরো এলাকায় অবস্থান নিয়েছেন তারা। এদিকে পার্শ্ববর্তী ১০টি জেলা থেকে খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে সমাবেশস্থলে আসছেন বিএনপির বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা। ব্যানার-ফেস্টুন নিয়ে র‌্যালি করছেন তারা। বিএনপির এই সমাবেশকে ঘিরে কঠোর অবস্থানে রয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। প্রতিটি মোড়ে মোড়ে পুলিশ সদস্যদের উপস্থিতি চোখে পড়ার মতো। গণপরিবহন বন্ধ থাকায় শুক্রবার ভোর থেকে এক রকমের অবরুদ্ধ খুলনা। বিএনপি নেতাকর্মীরা নানা কৌশলে সমাবেশস্থলে আসছেন। গতকাল সকাল থেকে কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা, ঝিনাইদহ, যশোর ও মেহেরপুর থেকে নেতাকর্মীরা ট্রেনে খুলনায় আসেন।

অন্যদিকে নড়াইল, সাতক্ষীরা, কয়রা, পাইকগাছা, দাকোপ, বটিয়াঘাটা এলাকার নেতা-কর্মীরা ট্রলার, ইজিবাইকসহ নানা কৌশলে খুলনায় আসেন বলে জানিয়েছেন নেতাকর্মীরা।

সরকারের ইন্থনে পরিবহন ধর্মঘটকে পাত্তা না দিয়ে খুলনায় বিএনপির সমাবেশস্থলে জড়ো হয়েছেন খুলনা বিভাগের বিভিন্ন জেলার বিএনপির নেতা-কর্মী। বেশিরভাগ নেতা–কর্মী ট্রেনে ও ট্রলারে করে সমাবেশের আগের রাতেই সমাবেশস্থলে হাজির হন।

রাতে উপস্থিত নেতাকর্মীরা সমাবেশস্থলের রাস্তায় আর ফুটপাতে প্লাটিকের বস্তা পাটি পেতে ঘুমিয়েছেন। সকালেও অনেকেকে সেখানে ঘুমিয়ে থাকতে দেখা গেছে। দলের বিভিন্ন নেতার পক্ষ থেকে সকালের নাস্তা দেওয়া হচ্ছে।

রাত সাড়ে ১০টার দিকে নড়াইল সদর উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব মুজাহিদুর রহমান বলেন, বাস বন্ধ থাকায় বালুবাহী ট্রলারে করে তারা ২৩০ জন একসঙ্গে এসেছেন। রাতে মঞ্চের সামনেই থাকবেন।

কুষ্টিয়া জেলার মিরপুর উপজেলা বিএনপির যুগ্ম-আহবায়ক মুস্তাফিজুর রহমান টুকু বলেন, রেলপথে খুলনায় আসার সময় ট্রেনে দুই দফা তাদের তল্লাশি করা হয়েছে।

মিরপুর উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব গোলাম কিবরিয়া বলেন, ‘পরবর্তী ট্রেনগুলোতে আমাদের আরও নেতাকর্মী আসছে। সবাই রাতে সমাবেশস্থলেই থাকবেন।’

বেনাপোল থেকে আসা বিএনপির কর্মী ওমর ফারুক বলেন, ‘বাসে এসেছি। ক্ষমতাসীন দলের লোকজন টেনেহিঁচড়ে নাভারণে নামিয়ে দিয়েছে। এরপর আবার ঝিকরগাছায় নামিয়ে দিয়েছে। নানা বাধায় যশোর পর্যন্ত আসার পর ট্রেনে আসতে পেরেছি।’

বস্তা বিছিয়ে বিশ্রাম নেওয়া দলের দুজন মো. আজিজুর রহমান ও আবদুর রহমান বলেন, ‘ঝিকরগাছা থেকে আমরা এসেছি। বাড়ি থেকে বস্তা নিয়ে এসেছি। এখানে ফাঁকা পেয়ে কয়েল জ্বালিয়ে শুয়ে আছি। এখানে তো উৎসবমুখর পরিবেশ। কোনোরকম ভয় লাগছে না।’

নড়াইল সদর উপজেলা বিএনপির নেতা মোজাহিদুর রহমান জানান, তাঁরা ট্রলারে করে সমাবেশে এসেছেন।

সমাবেশস্থলে স্লোগান দিচ্ছিলেন কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক মো. মোস্তাফিজুর রহমান ও যুবদলের সদস্যসচিব গোলাম কিবরিয়া। তাঁরা জানান, তাঁরা একসঙ্গে ১০০ জন ট্রেনে এসেছেন। তাঁদের উপজেলা থেকে রাতের বিভিন্ন ট্রেনে আরও ৪০০ লোক আসবেন। পথে তাঁরা দুই জায়গায় ঝামেলায় পড়েছেন।

কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে বিএনপির খুলনা বিভাগীয় গণসমাবেশ শনিবার। এ উপলক্ষে সব আয়োজন সম্পন্ন করছে বিএনপি।দুপুর ২টায় হবে শুরু হওয়ার কথা রয়েছে গণসমাবেশ।

শুক্রবার রাতভর নগরীর সোনালী ব্যাংক চত্বরে তৈরি করা হয়েছে সমাবেশের মঞ্চ।

সমাবেশ মঞ্চ থেকে শিববাড়ি মোড় পর্যন্ত দেড় কিলোমিটার এলাকাজুড়ে টানানো হয়েছে ১২০টি মাইক। ৮টি পয়েন্টে বসানো হয়েছে প্রজেক্টর।

খুলনা মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব শফিকুল আলম তুহিন জানান, সমাবেশ শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন করতে ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা বসানো হচ্ছে। সমাবেশের সময় থাকবে ড্রোন ক্যামেরার নজরদারি। এছাড়া শৃঙ্খলার দায়িত্ব পালন করবে ৪০০ স্বেচ্ছাসেবক।

বিভাগীয় গণসমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তৃতা দেবেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

সমাবেশস্থলে গিয়ে মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানান, গণসমাবেশ ঠেকাতে আওয়ামী লীগ ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে সরকার। খুলনার সঙ্গে ১৮টি রুটের বাস চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে, লঞ্চ চলাচল বন্ধ করা হয়েছে। তারপরও খুলনায় গণসমাবেশ স্মরণকালের সর্ববৃহৎ জনস্রোতে পরিণত হবে।

মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক শফিকুল আলম মনার সভাপতিত্বে জাতীয় স্থায়ী কমিটির অন্যতম সদস্য সাবেক মন্ত্রী আব্দুল মঈন খান, খন্দকার মোশাররফ হোসেন ও খুলনার গণসমাবেশের প্রধান উপদেষ্টা গয়েশ্বর চন্দ্র রায়সহ কেন্দ্রীয় নেতাকর্মীরা দিক-নির্দেশনামূলক বক্তৃতা করবেন।

স্থল ও নৌ রুটে সব ধরনের গণপরিবহন ধর্মঘটের মধ্যদিয়ে খুলনায় বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশে যোগ দিতে ইতোমধ্যে হাজার হাজার নেতাকর্মী সমাবেশ স্থলে উপস্থিত হয়েছেন।

খুলনা মহানগর বিএনপির সদস্য ও মিডিয়া সাব কমিটির আহ্বায়ক এহতেশামুল হক শাওন বলেন, চাল, ডাল, তেল, গ্যাস, পানি, বিদ্যুৎসহ নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য বৃদ্ধি, খুন-গুম, দুর্নীতি-দুঃশাসনের প্রতিবাদ এবং নির্দলীয়-নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে জাতীয় সংসদ নির্বাচন, নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন, সংসদ বিলুপ্ত ও সরকার পতনের দাবিতে আজ (শনিবার) খুলনায় বিএনপির তৃতীয় বৃহত্তর বিভাগীয় সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। নগরীর সোনালী ব্যাংক চত্বরে দুপুর ২টা থেকে এ সমাবেশ শুরু হবে। সমাবেশে খুলনা বিভাগের ১০জেলার ৫৯টি উপজেলা থেকে যোগ দেবেন বিএনপি নেতাকর্মীরা। শত বাধা উপেক্ষা করে সমাবেশস্থলে শুক্রবার রাতে এসে অবস্থান করছেন হাজার হাজার নেতাকর্মী। বহু বাধা কাটিয়ে এখানে আসতে পেরে তারা আনন্দিত। রাতে শুয়ে-বসে, আড্ডা-গল্পে, বক্তব্য শুনে তাদের সময় কাটেছে।

সাতক্ষীরা জেলা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক মমতাজুল ইসলাম জানান, শুক্রবারের মধ্যেই ৩০ ভাগ নেতাকর্মী খুলনায় পৌঁছে গেছে। বাকিরা বিভিন্ন মাধ্যমে যাবে।

নড়াইল জেলা বিএনপির দপ্তর সম্পাদক টিপু সুলতান বলেন, বৃহস্পতিবার সকালে বাস চালু থাকায় অনেক নেতাকর্মী আগেই খুলনায় অবস্থান নিয়েছেন। পরে বাস বন্ধ হয়ে যাওয়ায় কালিয়া ও লোহাগড়া থেকে নেতাকর্মীরা ট্রলারে খুলনা যান। মাগুরা জেলা বিএনপির সদস্য সচিব আকতার হোসেন জানান, বৃহস্পতিবার রাতেই অনেক নেতাকর্মী বাসে করে খুলনা চলে গেছেন। আবার অনেকে শুক্রবার যশোর পর্যন্ত বাসে গিয়ে, সেখান থেকে ট্রেনে করে খুলনা গেছেন। বাকি নেতাকর্মীরা যশোর যাবেন। পরে সেখান থেকে ভেঙে-ভেঙে ছোট যানবাহন ও মোটরসাইকেলে করে খুলনা পৌঁছাবেন। দুর্ভোগ ও কষ্ট করে হলেও মাগুরা বিএনপির নেতাকর্মীরা খুলনার সমাবেশে যোগদান করবেন।

সরেজমিনে শুক্রবার রাতে দেখা যায়, নগরীর কেডি ঘোষ রোডস্থ বিএনপির দলীয় কার্যালয়ের ভেতরে-বাইরে নেতাকর্মীদের উপচে পড়া ভিড়। রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বিভাগের বিভিন্ন জেলা থেকে আসা নেতারা বিএনপি অফিসে আসতে শুরু করেন। জেলা পর্যায়ের অনেক নেতা অফিসের মধ্যে অবস্থান করছেন। জায়গা স্বল্পতার কারণে পার্টি অফিসের সামনের সড়ক তিনটিতে অবস্থান করছেন কর্মীরা। সদর থানার উত্তর পাশে মহিলা দলের নেতাকর্মীরা, পার্টি অফিসের নিকটস্থ মোড়ে মেহেরপুর থেকে আসা নেতাকর্মীরা, অফিসের নিচে চুয়াডাঙ্গা, যশোরসহ খুলনা জেলার নেতারা অবস্থান করছেন। দূরবর্তী জেলার নেতাকর্মীরা বাস, লঞ্চ বন্ধ থাকায় ছোট ছোট পরিবহণে খুলনায় এসেছেন। নেতাকর্মীরা জানান, কোথাও থাকার জায়গা নেই। হোটেলে পর্যাপ্ত খাবার নেই। আমরা বিএনপি অফিসের সামনেই সারা রাত অবস্থান করব। অনেকে সমাবেশের মঞ্চের স্থানেও থাকবেন।

ডাকবাংলো সোনালী ব্যাংক চত্বরে মির্জা ফখরুল
নগরীর ডাকবাংলো সোনালী ব্যাংক চত্বরে শুক্রবার রাত ১০টার একটু আগে গণসমাবেশের অস্থায়ী মঞ্চ নির্মাণের কাজ শুরু হয়। এর পরপরই বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর মঞ্চ নির্মাণস্থলে আসেন। তার সঙ্গে ছিলেন হাজারো নেতাকর্মী। তাদের হাতে ছিল বাঁশের লাঠির পতাকা। এ সময় মির্জা ফখরুল বলেন, সরকার খুলনার সঙ্গে ১৮টি রুটের বাস চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে। লঞ্চ চলাচল বন্ধ করা হয়েছে। তারপরও খুলনায় গণসমাবেশ স্মরণকালের সর্ববৃহৎ জনস্রোতে পরিণত হবে। এদিকে একটি পক্ষ সমাবেশের মঞ্চ ভাঙচুরের গুজব রটাচ্ছে বলে অভিযোগ বিএনপির। নগর বিএনপির সদস্য সচিব শফিকুল আলম তুহিন যুগান্তরকে বলেন, অনেক মিডিয়ায় সমাবেশের মঞ্চ ভাঙচুরের গুজব ছড়ানো হচ্ছে। এটা সঠিক নয়। বর্তমানে সমাবেশস্থলে ২০ হাজার নেতাকর্মী অবস্থান করছেন।

ভোর হতেই বিএনপি নেতাকর্মীদের সমাবেশমুখী মিছিল
খুলনা বিভাগীয় গণসমাবেশ সামনে রেখে ইতোমধ্যেই সমাবেশস্থলে যেতে শুরু করেছেন বিএনপি নেতাকর্মীরা। আজ শনিবার ভোরের আলো ফুটতেই দলটির নেতাকর্মীরা নগরীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে সোনালী ব্যাংক চত্বরের সমাবেশ অভিমুখে রওনা হয়েছেন।

এদিকে দুই দিনব্যাপী ধর্মঘটের কারণে বাস চলাচল বন্ধ থাকায় বিভিন্ন জেলা থেকে বিএনপি এবং দলটির অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা ট্রাক, মাইক্রোবাস ও ট্রলারে করে খুলনায় আসছেন। নগরীর পাওয়ার হাউজ মোড়, রেলস্টেশন এলাকায় মিলিত হয়ে সেখান থেকে মিছিল নিয়ে সমাবেশস্থলে যাচ্ছেন তারা।

পূর্বঘোষণা অনুযায়ী, আজ শনিবার নগরীর সোনালী ব্যাংক চত্বরে বিএনপির খুলনা বিভাগীয় গণসমাবেশ অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। দুপুর ২টায় সমাবেশ শুরুর কথা রয়েছে। তবে ভোর ৬টা থেকেই সমাবেশ মঞ্চ থেকে বক্তৃতা চলছে। গণসমাবেশে যোগ দিতে শুক্রবার রাতেই খুলনা পৌঁছেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ দলটির কেন্দ্রীয় নেতারা।