সিলেটে বিএনপি নেতাদের বাড়ি বাড়ি তল্লাশির অভিযোগ

সিলেটে বিএনপি নেতাদের বাড়ি বাড়ি তল্লাশির অভিযোগ

বিএনপি’র বিভাগীয় গণসমাবেশকে কেন্দ্র করে সিলেটে বিএনপি নেতাদের বাড়ি বাড়ি পুলিশি অভিযান চলছে বলে অভিযোগ করেছেন নেতারা। তারা জানিয়েছেন, মহা গণসমাবেশের আগে বিএনপি সমর্থকদের মধ্যে ভয়ভীতি প্রদর্শন করতে এই অভিযান চালানো হচ্ছে। তবে, পুলিশের পক্ষ থেকে তাদের এই অভিযোগ উড়িয়ে দেয়া হয়েছে। সিলেট নগরীর ঐতিহাসিক আলীয়া মাদ্রাসা ময়দানে বিএনপি’র সিলেট বিভাগীয় গণসমাবেশ আগামী শনিবার। সেই লক্ষ্যে বিএনপি’র তরফ থেকে ব্যাপক প্রচার চালানো হচ্ছে। ইতিমধ্যে বিলবোর্ড, ব্যানার ও ফেস্টুনে ভরে গেছে আলীয়া মাদ্রাসা ময়দানের চর্তুদিকের এলাকা। নেতাকর্মীরা নিজেদের উদ্যোগে এসব এলাকায় ব্যানার ও বিলবোর্ড সাঁটিয়েছেন। আলীয়া মাদ্রাসা ময়দানে চলছে মঞ্চ নির্মাণের কাজ। বৃহস্পতিবারের মধ্যে মঞ্চ নির্মাণ কাজ পুরোপুরি শেষ হবে বলে জানিয়েছেন নেতারা। সিলেটের এই গণসমাবেশের প্রস্তুতি চলছে প্রায় এক মাস আগে থেকেই।

 

এরমধ্যে ঘটে গেছে একটি অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা। গত ৬ই নভেম্বর নগরীর আম্বরখানা বড় বাজার এলাকায় কুপিয়ে খুন করা হয়েছে বিএনপি সিলেট জেলার সাবেক স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক আফম কামালকে। এই খুনের ঘটনায় রাতেই ছাত্রদলের পক্ষ থেকে নগরীর চৌহাট্টা থেকে রিকাবীবাজার পর্যন্ত এলাকায় এ বিক্ষোভ করা হয়। এ নিয়ে ছাত্রলীগের সঙ্গে ছাত্রদল কর্মীদের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এদিকে, ঘটনার সময় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি ভাঙচুর করার অভিযোগ ওঠে। ঘটনার দু’দিনের মাথায় গত মঙ্গলবার সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের এক নেতা বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা ২০০ জনকে আসামি করে থানায় মামলা করেন। মামলা দায়েরের পরপরই পুলিশ এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহ ৪ জনকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠিয়েছে। এর বাইরে এ ঘটনায় পুলিশের তরফ থেকে কোনো অগ্রগতি নেই। তবে, দায়ের করা এ মামলাকে পুলিশের ‘হাতিয়ার’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন বিএনপি নেতারা। তারা জানিয়েছেন, পুলিশ ওই মামলাকে সামনে রেখে নেতাকর্মীদের বাড়ি বাড়ি তল্লাশি চালাচ্ছে।

বিএনপির চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা ও সিলেট বিভাগের শীর্ষ নেতা খন্দকার আব্দুল মুক্তাদির মানবজমিনকে জানিয়েছেন, ‘পুলিশ প্রতি রাতেই নেতাকর্মীদের বাড়ি বাড়ি অভিযানে যাচ্ছে। তারা চাচ্ছে মহাসমাবেশের আগে নেতাকর্মীদের মধ্যে ভয় সৃষ্টি করতে।’ তিনি অভিযোগ করেন, ‘পুলিশি অভিযানের কারণে অনেক নেতাকর্মী বাড়িতে থাকছেন না। তারা গ্রেপ্তার এড়িয়ে দলীয় কার্যক্রমে সক্রিয় রয়েছেন। বিষয়টিকে তিনি পুলিশের বাড়াবাড়ি হিসেবেই দেখছেন বলে জানান।’ এদিকে, ৩ দিন আগে সিলেটের গোলাপগঞ্জে বিভাগীয় সমাবেশ উপলক্ষে গণসংযোগ চালাচ্ছিলেন সিলেট জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি আবুল কাহের শামীম। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন বিএনপিসহ অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা। এতে পুলিশ বাধা দিয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন আবুল কাহের শামীম। তিনি গতকাল মানবজমিনকে জানিয়েছেন, আমরা নেতাকর্মীদের নিয়ে প্রচার মিছিল ও গণসংযোগ করছিলাম। এ সময় পুলিশ পেছন দিক থেকে এসে বাধা দেয়। এ সময় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ায় তাদের ৩ জন কর্মী আহত হন।

তিনি জানান, আমরা শান্তিপূর্ণভাবে কর্মসূচি পালন করছিলাম। এতে পুলিশ বাধা দেয়। তবে, এ ঘটনার পর গোলাপগঞ্জে আর কোনো সমস্যা হয়নি বলে জানান তিনি। সেচ্ছাসেবক দলের সাবেক সহ-সভাপতি ও সিটি কাউন্সিলর ফরহাদ চৌধুরী শামীম জানিয়েছেন, সিলেটের গণসমাবেশের প্রস্তুতিতে পুলিশের চোখ রাঙানি আছে। তারা নেতাকর্মীদের কৌশলে ভয় দেখাচ্ছে। বাড়িতে তল্লাশির পাশাপাশি তালিকা করে রাখছে বলেও হুমকি দিচ্ছে। তবে বিএনপি নেতাকর্মীদের টার্গেট করে বাড়ি বাড়ি তল্লাশির অভিযোগ অস্বীকার করেছেন সিলেটের কোতোয়ালি থানার ওসি মো. আলী মাহমুদ। তিনি জানিয়েছেন, চৌহাট্টার ঘটনায় ৪ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আর কোনো গ্রেপ্তার নেই।

এ ছাড়া ওয়ারেন্টভুক্ত কোনো আসামি হলে সে বিএনপি না আওয়ামী লীগ দেখার বিষয় নয়; পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করতে চাইবে। পুলিশ বাড়ি বাড়ি গিয়ে তল্লাশি চালাচ্ছে বলে যে অভিযোগ তোলা হয়েছে সেটি সঠিক নয় বলে দাবি করেন তিনি। এমদাদ চৌধুরীর নেতৃত্বে লিফলেট বিতরণ: ১৯শে নভেম্বর সিলেট বিভাগীয় গণসমাবেশ সফলের লক্ষ্যে মহানগর বিএনপি’র যুগ্ম আহ্বায়ক এমদাদ হোসেন চৌধুরীর নেতৃত্বে ৭, ৮ ও ৯নং ওয়ার্ডে লিফলেট বিতরণ করা করা হয়েছে। গতকাল সকালে নগরীর মদীনা মার্কেট, পাঠানটুলা, আখালীয়া, সুবিদবাজার, বনকলাপাড়া, লেকসিটি, সুরমা আবাসিক এলাকা, বাগবাড়ী ও নরসিংটিলা এলাকায় দলীয় নেতাকর্মী নিয়ে লিফলেট বিতরণ করে প্রচারণা চালান তিনি। এ সময় উপস্থিত ছিলেন মহানগর যুগ্ম আহ্বায়ক ও ৭, ৮ ও ৯নং ওয়ার্ডের টিম লিডার এমদাদ হোসেন চৌধুরী, ৯নং ওয়ার্ড বিএনপি’র সভাপতি আমির হোসেন, ৭নং ওয়ার্ড বিএনপি’র সভাপতি আব্দুল ওয়াদুদ মিলন, সাধারণ সম্পাদক এস এম সায়েম, ৯নং ওয়ার্ডের সাধারণ সম্পাদক রুবেল বক্স, সাংগঠনিক সম্পাদক সায়ফুল আলম প্রমুখ।