১৫ জেলা ও মহানগরে ‘জিয়া স্মৃতি পাঠাগারে’র উদ্বোধন

মাফিয়া হটাতে রাজপথের আন্দোলন জোরদার করার আহবান তারেক রহমানের

মাফিয়া হটাতে রাজপথের আন্দোলন জোরদার করার আহবান তারেক রহমানের

মাফিয়াদের কবল থেকে দেশ উদ্ধার করে জনগণের কাঙ্খিত বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে রাজপথের আন্দোলন জোরদার করারও আহবান জানিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।

স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ৪২ তম শাহাদাতবার্ষিকী উপলক্ষে রবিবার দেশের ১৫টি জেলা ও মহানগরে ‘জিয়া স্মৃতি পাঠাগারে’র উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এ আহবান জানান। 

বিএনপির নয়াপল্টন কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এ সভায় ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে তারেক রহমান চট্টগ্রাম, খুলনা, বরিশাল, সিলেট, ময়মনসিংহ, কুমিল্লা, মুন্সিগঞ্জ, কক্সবাজার, ঠাকুরগাঁও, মানিকগঞ্জ, ঝিনাইদহ, খাগড়াছড়ি, জয়পুরহাট, যশোর এবং রাজবাড়িতে এসব পাঠাগারের উদ্বোধন করেন।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন জিয়া স্মৃতি পাঠাগারের সভাপতি বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুস সালাম। সভায় বক্তব্য রাখেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এবং সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। এসময় ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে বক্তব্য রাখেন ১৫ জেলার নেতৃবৃন্দ।

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেন, পৃথিবীর দেশে দেশে জনগণকে ভালোর পথে, আলোর পথে পরিচালিত করতে সাধারণত রাষ্ট্র ও সরকারের ভূমিকাই থাকে মুখ্য। কিন্তু গত একযুগের বেশি সময় ধরে এমন একটি অপশক্তি বাংলাদেশের রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করে রয়েছে যারা নিজেরাই গুম, খুন, দুর্নীতি, অন্যায় অবিচার অনাচারে লিপ্ত।

তিনি আরও বলেন, রাষ্ট্র ক্ষমতা জবরদখল করে রাখা অপশক্তির অনাচারের কারণে দেশে ধর্মীয় ও সামাজিক মূল্যবোধএবং নীতি-নৈতিকতার চূড়ান্ত অবক্ষয় ঘটেছে। ক্ষমতাসীন অপশক্তি উদ্দেশ্যমূলকভাবে রাষ্ট্র ও সমাজে হিংসা, ঘৃণা, জিঘাংসা, প্রতিহিংসা ছড়িয়ে দিয়েছে। 

রাষ্ট্র ও সমাজে হিংসা, ঘৃণা, জিঘাংসা, প্রতিহিংসা ছড়ানোর পরিণাম কতটা অমানবিক হতে পারে সেটা বুঝাতে তারেক রহমান তার বক্তব্যে একটি ঘটনার কথা উল্লেখ করেন।

তারেক রহমান বলেন, ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন নিয়ে, নিজেদের মধ্যে বিরোধের জেরে বরগুনা সদর উপজেলার পাকুরগাছিয়া গ্রামে, মে মাসের ২ তারিখ রাত সাড়ে আটটার দিকে পনু আকন নামে স্থানীয় একজন আওয়ামী লীগ নেতাকে কুপিয়ে হত্যা করেছে একইদলের প্রতিপক্ষ।

তিনি বলেন, এখানে গভীরভাবে একটি বিষয় লক্ষ্যণীয়, স্থানীয় ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পনু আকন যখন মৃত্যু যন্ত্রনায় পানি পানি বলছেন, তখন তার দলের খুনিরাই পনু আকনের মুখে পানি না দিয়ে লাফ দিয়ে তার বুকে উঠে। তারা মৃত্যু পথযাত্রী পনু আকনের মুখে প্রস্রাব করে।

তারেক রহমান বলেন, নানা বিষয়ে বিরোধের জের ধরে হত্যাকান্ড প্রায় প্রতিনিয়তই ঘটছে। তবে একজন মৃত্যু পথযাত্রীর মানুষের মুখে পানির বদলে প্রস্রাব করে দেয়ার ঘটনা মানবিকতার ইতিহাসে বিরল। এই বিরল কাজটিই করে দেখিয়েছে আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগই এখন আওয়ামী লীগের মুখে প্রস্রাব করছে। অবৈধ ক্ষমতার লালসা মেটাতে গিয়ে, সমাজে শেখ হাসিনার ছড়িয়ে দেয়া,ঘৃণা-প্রতিহিংসার আগুনে এখন এমনকি আওয়ামী লীগ নিজেরাই কিভাবে জ্বলছে ঘটনাটি সেই নির্মম বাস্তবতার একটি জ্বলন্ত উদাহরণ। ঘটনাটি হচ্ছে, শেখ হাসিনার মিথ্যাচার আর প্রতিহিংসার রাজনীতির কুফল। এই কুফল এখন আওয়ামী লীগকেই গ্রাস করেছে।

তিনি বলেন, পৃথিবীর দেশে দেশে জনগণকে ভালোর পথে, আলোর পথে পরিচালিত করতে সাধারণত রাষ্ট্র ও সরকারের ভূমিকা থাকে। রাষ্ট্র ও সমাজের বর্তমান এমন এক অন্ধকার সময়ে শহীদ জিয়ার আদর্শের অনুসারীরা,হিংসা, ঘৃণা, মিথ্যাচারের মোকাবেলায় যেভাবে পাঠাগার কর্মসূচি নিয়ে এগিয়ে এসেছেন, এমন ইতিবাচক উদ্যোগ গ্রহণের জন্য দলের নেতাকর্মীদের নিয়ে আমি গর্ববোধ করি।

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, স্বাধীনতার ঘোষক জিয়া যেভাবে বাকশালীয় অন্ধকার থেকে দেশকে আলোর পথে নিয়ে এসেছিলেন বর্তমানে মাফিয়ার অপশাসনে অন্ধকারাচ্ছন্ন বাংলাদেশে আবারো আলোর ফুল ফোটানো একমাত্র বিএনপির পক্ষেই সম্ভব। ইনশাআল্লাহ। শুধু সময়ের অপেক্ষা মাত্র।

তারেক রহমান বলেন, দেশে পাঠাগার প্রতিষ্ঠায় স্বাধীনতার ঘোষক যুগান্তকারী ভূমিকা রেখেছিলেন। সেই ধারা আরও বিকশিত হয়েছিল মাদার অফ ডেমোক্র্যাসি বেগম খালেদা জিয়ার শাসনামলে।

তিনি বলেন, বিশ্বে তথ্যপ্রযুক্তির বিকাশের এই সুবর্ণ সময়ে পাঠাগারগুলোকে আরও সময়পোযোগী করতে গত প্রায় একদশক ধরে বিশ্বব্যাপী একটি নীরব আন্দোলন চলছে। লাইব্রেরী টু পয়েন্ট জিরো (২.০) নামে এই আন্দোলনের লক্ষ্য আধুনিক প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে লাইব্রেরি সেবার মান পাঠক চাহিদা অনুযায়ী সমৃদ্ধ করা।

‘বই হলো সভ্যতার রক্ষাকবচ,’ ফরাসি লেখক-রাজনীতিক ভিক্টর হুগোর এই উক্তি স্মরণ করে তারেক রহমান বলেন, আগামী দিনে জন রায়ে বিএনপি ক্ষমতা গেলে, সরকারি উদ্যোগে দেশের প্রতিটি জেলা উপজেলায় লাইব্রেরিগুলোকে ‘লাইব্রেরী ২.০’ ধারণার আলোকে প্রতিষ্ঠিত করা হবে।শিশুবান্ধব করা ছাড়াও প্রতিটি লাইব্রেরীকে সকল বয়সী নারী, পুরুষের জন্য ব্যবহার উপযোগী এবং একটি সমৃদ্ধ তথ্যভাণ্ডারে পরিণত করা হবে।

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ইতিহাস সাক্ষী ৭১ সালের ২৫ মার্চের দিবাগত রাত অর্থাৎ ২৬ মার্চ মুক্তিযুদ্ধ শুরুর আনুষ্ঠানিক অভিযাত্রা এবং ৭৫ সালের ৭ নভেম্বর থেকে দেশে গণতন্ত্র এবং বাক স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠার অভিযাত্রা, প্রতিটি ঐতিহাসিক ঘটনায়, স্বাধীনতার ঘোষক জিয়া এবং বাংলাদেশ একটি অবিচ্ছেদ্য নাম। স্বাধীনতার ঘোষক জিয়া বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের একটি অনিবার্য নাম। সময়ের সাথে সাথে প্রতিদিনের বাংলাদেশে শহীদ জিয়া আরো বেশি প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠছেন।

তারেক রহমান বলেন, গণতন্ত্র, মানবাধিকার, ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠার যে চলমান আন্দোলন দেশপ্রেমিক জনগণের সামনে তা ‘৭৫ এর ৭ নভেম্বর ম্যাগনাকার্টা’র মতো। 

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেন, শহীদ জিয়াকে জানতে হলে কারো সঙ্গে তুলনার দরকার নেই। এই কর্মবীর ইতিহাসের পাতায়, জনগণের হৃদয়ে, বেঁচে আছেন বেঁচে থাকবেন, তার সকল কর্মের মাধ্যমে।

তিনি বলেন, রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জন এবং স্বাধীন বাংলাদেশকে সন্ত্রাস কবলিত গণতন্ত্রহীন অরাজক পরিস্থিতি থেকে বের করে এনে বিশ্ব দরবারে একটি আধুনিক বাংলাদেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার ক্ষেত্রে শহীদ জিয়ার যে অবদান এর সঙ্গে প্রজন্মের পর প্রজন্মকে পরিচয় করে দিতে পাঠাগারই সবচেয়ে উত্তম বিকল্প।

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, পাঠাগার সম্পর্কে মার্কিন কবি এবং প্রাবন্ধিক রিতা ডোভে’র একটি উক্তি উল্লেখ করা যেতে পারে। রিতা ডোভ বলছেন, পাঠাগার এমন একটি স্থান, এমন একটি সম্ভাবনার জায়গা, যেখানে হৃদয় ও পৃথিবী উভয়ের দরজাই খুলে যায়।

তিনি বলেন, অনেক বিজ্ঞজনই মনে করেন, মানব সমাজ ও সভ্যতার ক্রমবিকাশ এবং ঘটনাবলীর নির্মোহ ও তথ্য নির্ভর বিবরণই হচ্ছে ইতিহাস। সুতরাং আদালতকে ব্যবহার করে, আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর নির্যাতনের ভয় দেখিয়ে কিংবা অর্থ বিত্তের লোভ দেখিয়ে মিথ্যাচারের মাধ্যমে ইতিহাস রচনা করা যায়না। ইতিহাস উদ্ভাসিত হয়ে ওঠে তার আপন আলোয়।

তারেক রহমান বলেন, হুমকি, ধামকি কিংবা মিথ্যাচারের পরিবর্তে সর্বস্তরের মানুষের সামনে জ্ঞানের দ্বার উন্মোচনে ‘জিয়া স্মৃতি পাঠাগার’ একটি ইতিবাচক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হিসেবেই উপস্থাপিত হয়েছে।

তিনি বলেন, রাজনীতি, সমাজনীতি, নাগরিকতা, গণতন্ত্র, ইতিহাস, সংস্কৃতি, সভ্যতা সকল ক্ষেত্রে পূর্ণতা অর্জনের ক্ষেত্রে পাঠাগারের ভূমিকা অনস্বীকার্য। পাঠাগার জ্ঞানের সীমাবদ্ধতাকে যেমন প্রসারিত করে একইভাবে চিন্তা ও মনন ও দৃষ্টিভঙ্গিকে উদার করে। শুধু জাগতিক কিংবা অবকাঠামোগত উন্নয়নই নয় আত্মিক, নৈতিক এবং মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নয়নেও পাঠাগারের ভূমিকা অপরিমেয়।

পাঠাগার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ, জাতীয়তাবাদী যুব দলের সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এসএম জিলানী, জাতীয়তাবাদী কৃষক দলের সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম বাবুল, জাতীয়তাবাদী ছাত্র দলের সাধারণ সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুযেল এবং জিয়া স্মৃতি পাঠাগারের সাধারণ সম্পাদক জহির দীপ্তি প্রমুখ।

অনুষ্ঠানে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, বর্তমান সরকার পাঠাগার ধবংস করেছে। প্রত্যেকটা জেলায় সরকারিভাবে পাঠাগার নির্মাণ করা হতো এবং সেখানে বরাদ্ধ দেওয়া হতো, প্রচুর বইপত্র দেওয়া হতো। জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্র একটা আছে সেই গ্রন্থকেন্দ্র থেকে বইপত্রগুলো সেখানে (বিভিন্ন পাঠাগারে) পাঠানো হতো প্রতিবছর। এখন সব বন্ধ হয়ে গেছে।

তিনি বলেন, পাঠাগারের আন্দোলনই এখন নেই। এই আন্দোলনটা আমাদের তৈরি করতে হবে। আজকে আপনারা যে ১৫টা জেলায় পাঠাগার উদ্বোধন করলেন এটাকে আন্দোলনের পরিণত করতে হবে। সবাই এই কাজ করে না, যারা করে তাদেরকে উৎসাহিত করতে হবে।