বিদ্যুৎ নিয়ে মিথ্যা প্রচার করেছে সরকার : রিজভী

বিদ্যুৎ নিয়ে মিথ্যা প্রচার করেছে সরকার : রিজভী

আওয়ামী লীগের উন্নয়ন হুড়মুড় করে পড়ে যাচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেছেন, বিদ্যুৎ নিয়ে এই সরকার মিথ্যা প্রচার করে গেছে।

আজ মঙ্গলবার দলটির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ মন্তব্য করেন।

রিজভী অভিযোগ করেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘প্রয়োজনে আমেরিকা যাবো না। প্রয়োজনে অন্য মহাদেশ মহাসাগরে যাবো। ২০ ঘণ্টা ভ্রমণ করে আমেরিকা যাওয়ার দরকার নাই।’ অন্যদিকে নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু নির্বাচনসহ মানবাধিকার, ন্যায়বিচার, সুষ্ঠু রাজনৈতিক পরিবেশ ও হারানো গণতন্ত্র ফিরিয়ে দেয়ার পক্ষে কথা বলায় বিদেশী রাষ্ট্রদুতদের হুমকি-ধামকি দিচ্ছেন সরকারের মন্ত্রী-এমপিরা। তাদের একজন মন্ত্রী বললেন, ভিসা নিষেধাজ্ঞার ঘোষণা নাকি বিএনপির বিরুদ্ধে। তাহলে আমেরিকার বিরুদ্ধে হঠাৎ সরকার প্রধানসহ মন্ত্রীরা ক্ষোভে ফেটে পড়লেন কেন? ফ্যাসিষ্ট আওয়ামী সরকার স্পষ্টত:ই বুঝে গেছে যে তারা এখন চরম সঙ্কটের মধ্যে পড়েছে। সেই কারণে মনে হয় রাতে তাদের ঘুম কম হচ্ছে। তাদের অসংলগ্ন কথাবার্তা দেখে তাই মনে হয়। স্বাভাবিক চিন্তা, কথাবার্তা ও আচরণের জন্য প্রকৃতির নিয়মে প্রধানমন্ত্রীসহ মন্ত্রীদের পর্যাপ্ত ঘুমের প্রয়োজন।

তিনি বলেন, সরকার প্রধানসহ ক্ষমতাসীনদের নিজেদের সন্তান-সন্ততীকে আমেরিকা এবং ইউরোপে পুনর্বাসন করে প্রধানমন্ত্রী ও তার সাঙ্গ-পাঙ্গদের স্বার্থে ঘা লাগায় এখন ওইসব দেশ সম্পর্কে আক্রমণাত্মক ভাষায় কথা বলছেন। যেহেতু তাদের মনোযোগের কেন্দ্রবিন্দু দুর্নীতি আর টাকা পাচার, সেহেতু বিনা ভোটে ক্ষমতায় থাকার বিষয়ে কেউ প্রশ্ন উত্থাপন করলেই তাদের গা জ্বালা করে। জনগণের টাকায় তারা ফুর্তিবাজী করছে বলেই সুষ্ঠু নির্বাচনের কথা শুনলেই ক্ষমতাসীনদের মাথা বিকারগ্রস্ত হয়ে পড়ে।

বিএনপির এই দফতর সম্পাদক বলেন, সারাদেশে বিদ্যুতের ভয়াবহ লোডশেডিংয়ে মানুষের এখন ত্রাহি ত্রাহি অবস্থা। গ্রামে-গঞ্জে ২৪ ঘণ্টায় এখন দুয়েক ঘণ্টা বিদ্যুৎ আসে। মফস্বল শহরগুলোতে রাতে দুই ঘণ্টার বেশি বিদ্যুৎ থাকে না। দিনের বেলাতেও ৫/৬ ঘণ্টা লোডশেডিং থাকে। রাজধানীতে ভয়াবহ খরতাপের ধুমায়িত বহ্নিতে মানুষ মনে হয় গ্যাস চেম্বারের মধ্যে বসবাস করছে। এখানেও দিনে-রাতে ৩/৪ ঘণ্টার বেশি বিদ্যুৎ থাকে না।

তিনি বলেন, গণতন্ত্রকে কাফন পরিয়ে তথাকথিত উন্নয়নের ইন্দ্রজাল সৃষ্টির অপপ্রয়াস এখন দেশবাসী দেখছে। শুধু নিজেদের ঘনিষ্ঠজনকে বিপুল-অর্থবিত্তের মালিক করার জন্যই রেন্টাল-কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎ প্রকল্প স্থাপনের সুযোগ দেয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে ভতুর্কির নামে জনগণের হাজার হাজার কোটি টাকা পকেট থেকে কেটে নেয়া হয়েছে। কিন্তু এটি যে ছিল এক ধরণের জালিয়াতি, সেটিই এখন বিকট লোডশেডিংয়ের আত্মপ্রকাশ, তার সুষ্পষ্ট প্রমাণ জনগণ দেখতে পাচ্ছে। লোডশেডিংয়ের বর্তমান দুর্বিষহ পরিস্থিতির জন্য প্রধানমন্ত্রীর আশীর্বাদপুষ্ট সামিট গ্রুপসহ বিভিন্ন প্রাইভেট বিদ্যুৎ স্থাপনা কেন্দ্র। তাহলে আজ কেন পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রসহ একের পর এক বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো বন্ধ হয়ে যাচ্ছে? আওয়ামী সরকার বিদ্যুৎ খাতে লুটপাটের সুযোগ দিয়ে ফৌজদারী অপরাধ করেছে। বিদ্যুৎ খাতে লুটপাটকে বৈধ করতেই ইনডেমনিটি আইন করা হয়েছে। সেজন্য এই রেন্টাল-কুইক রেন্টালের সাথে যারা জড়িত তাদের গ্রেফতার করা উচিৎ। এরা জনগণের সবচেয়ে বড় দুশমন।

‘মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতনা গণতন্ত্র এবং নির্বাচনকে বরবাদ করে আমজনতার মৌলিক নাগরিক চাহিদা ও দৈনন্দিন জীবনের চাহিদার সমাধান না করে মেগা প্রজেক্টের প্রতি বেশি আগ্রহের প্রতিফলন জনগণ দেখতে পাচ্ছে দুর্বিষহ লোডশেডিং। এরপর আরো যে কী বিপর্যয় আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে তা আল্লাহ পাকই জানেন।’

সিনিয়র এই যুগ্ম মহাসচিব বলেন, আওয়ামী লীগের গালগল্প কোথায় গেল। সেই বাড়তি বিদ্যুৎ কোথায় গেল? কয়লা কোথায় গেল, তেলের তো বিশ্বব্যাপী দাম কমছে। কিন্তু দেশে না কি তেল পায় না। তাদের উন্নয়ন হুড়মুড় করে পড়ে যাচ্ছে। বিদ্যুৎ নিয়ে এই সরকার মিথ্যা প্রচার করে গেছে।