ব্যাপক ভোট জালিয়াতি ও অনিয়ম

তালুকদার খালেক বেসরকারিভাবে নির্বাচিত

তালুকদার খালেক বেসরকারিভাবে নির্বাচিত

খুলনা, ১৬ মে (জাস্ট নিউজ) : ভোট শুরুর আগে কেন্দ্র দখল, ব্যালট বই ছিনতাই করে নৌকায় সিল মারা, বিএনপি প্রার্থীর এজেন্টদের ভোট কেন্দ্রে ঢুকতে না দেয়া, কেন্দ্র থেকে মারধর করে বের করে দেয়া, হামলা, ভাঙচুর, ব্যাপক অনিয়ম ও কারচুপির মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছে খুলনা সিটি করপোরেশনের নির্বাচন।

সরকারি দলের নেতাকর্মীদের জালভোটের মহোৎসবে খুলনা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে বেসরকারিভাবে বিজয়ী হয়েছেন আওয়ামী লীগ প্রার্থী (নৌকা) তালুকদার আব্দুল খালেক। নৌকা প্রতীকে তিনি পেয়েছেন ১ লাখ ৭৬ হাজার ৯০২ ভোট। অন্যদিকে তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে নজরুল ইসলাম মঞ্জু পেয়েছেন ১ লাখ ৮ হাজার ৯৫৬ ভোট।

মঙ্গলবার ভোট শেষে রাত সাড়ে ৯টার দিকে বিভিন্ন উৎস থেকে কেন্দ্রভিত্তিক ভোটের প্রাপ্ত ফলাফল ও রিটার্নিং কর্মকর্তা ঘোষিত ফলাফল থেকে এ তথ্য পাওয়া গেছে। দুই প্রার্থীর মধ্যে ভোটের ব্যবধান ৬৭ হাজার ৯৪৬। নির্বাচনে ২৮৯টি ভোটকেন্দ্রের অপর তিন কেন্দ্রের ভোট স্থগিত করা হয়। মোট ১৫৬১টি ভোটকক্ষে ভোটগ্রহণ হয়েছে।

এবারের খুলনা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ৪ লাখ ৯৩ হাজার ৯৩ জন। এর মধ্যে পুরুষ ২ লাখ ৪৮ হাজার ৯৮৬ জন এবং নারী ২ লাখ ৪৪ হাজার ১০৭ জন।

সবচেয়ে মজার ব্যাপার হলো- এবারই প্রথম আওয়ামী লীগের নারী কর্মীরাও কেন্দ্র দখল করে ব্যালটে সিল মারার নতুন রেকর্ড তৈরি করেছেন। যা স্বাধীন বাংলাদেশে ইতিহাসে এর আগে এমনটি কেউ দেখেননি বা শোনেনওনি। খুলনার আওয়ামী লীগের নারী কর্মীরা সেটাই করে দেখিয়েছেন। এটাকে নারীদের এগিয়ে যাওয়ার ‘সিম্বল’ হিসেবেই দেখছেন কেউ কেউ।

তবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ, সরকারি দলের বিজয়ী মেয়র, নির্বাচন কমিশন (ইসি), রিটার্নিং কর্মকর্তা ও খুলনার পুলিশ কমিশনার- সবাই একই সুরে সব অভিযোগ নাকচ করে দিয়েছেন। তারা দাবি করেছেন, ‘সুষ্ঠু, সুন্দর ও চমৎকার ভোট হয়েছে’। তবে গণমাধ্যমের সুবাদে খুলনাসহ পুরো দেশবাসী ‘চমৎকার’ ভোটের প্রকৃত রূপ দেখেছেন। যদিও অজ্ঞাত কারণে টেলিভিশন চ্যানেলগুলো বিষয়টি এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছে।

মঙ্গলবার সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত একটানা ভোটগ্রহণ চলে। বিএনপি অভিযোগ করেছে অন্তত ৪০টি কেন্দ্র দখল করে নৌকার পক্ষে ভোট দেয়া হয়েছে। দখল ও জাল ভোট দেয়ার কারণে তিনটি কেন্দ্রে ভোট স্থগিত রেখেছে নির্বাচন কমিশন। দিনভর কেন্দ্র দখল ও জাল ভোট দেয়ার অভিযোগ এলেও নির্বাচন কমিশন দাবি করেছে বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া নির্বাচন শান্তিপূর্ণ হয়েছে।

শতাধিক কেন্দ্রে আবার ভোট চান মঞ্জু
নির্বাচনে ‘ভোট ডাকাতির’ অভিযোগ এনে একশরও বেশি কেন্দ্রের ফলাফল বাতিল করে নতুন করে ভোট নেয়ার দাবি জানিয়েছেন বিএনপির মেয়র প্রার্থী নজরুল ইসলাম মঞ্জু।

মঙ্গলবার সন্ধ্যায় খুলনায় দলীয় কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এই দাবি করেন ধানের শীষের প্রার্থী। মঞ্জু যখন এই সাংবাদিক সম্মেলন করছিলেন, তখন ভোটের ফলাফল আসতে শুরু করে। আর প্রথম থেকেই আওয়ামী লীগের প্রার্থী তালুকদার আবদুল খালেকের চেয়ে পিছিয়ে থাকেন মঞ্জু। যত সময় যেতে থাকে, ততই বাড়ছে ব্যবধান।’ মঞ্জু বলেন, ‘এখন পর্যন্ত যে ফলাফল আসছে এটা কাঙ্ক্ষিত ফলাফল না। খুলনাবাসী ভোট প্রয়োগ করতে চেয়েছিল। কিন্তু সেই সুযোগ ধুলিস্যাৎ হয়ে গেছে আওয়ামী লীগের ভোট ডাকাতির কাছে।

এদিকে মঙ্গলবার রাতে রাজধানীর গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে মির্জা আলমগীর বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে কোনো সুষ্ঠু নির্বাচন হতে পারে না। তিনি বলেছেন, অবাধ নিরপেক্ষ নির্বাচন করতে হলে সংসদ ভেঙে দিতে হবে, সেনাবাহিনী মোতায়েন করতে হবে। নইলে সুষ্ঠু ভোট সম্ভব নয়। আজ খুলনায় সেনা মোতায়েন থাকলে ফলাফল যাই হোক ভোট ব্যবস্থা এমন হতো না। বিরোধী দল সুন্দরভাবে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারত।

এর আগে তৃতীয় দফায় অনিয়মের চিত্র তুলে ধরে সংবাদ সম্মেলনে রিজভী আহমেদ বলেন, খুলনা সিটি কর্পোরেশনের ২৯৪টি ভোট কেন্দ্রের মধ্যে সবকটিতেই ক্ষমতাসীন দলের সশস্ত্র ক্যাডাররা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রত্যক্ষমদদে নির্বাচনের ফলাফলকে নিজেদের পক্ষে নেয়ার জন্য সকল অপচেষ্টা চালিয়েছে। ১৫০ টির বেশি ভোট কেন্দ্র দখল করে নিয়েছে সশস্ত্র আওয়ামী সন্ত্রাসীরা।

 

(জাস্ট নিউজ/একে/০০৪৮ঘ.)