সিলেটে তারুণ্যের সমাবেশে বিএনপি মহাসচিব

ঢাকা সমাবেশে নতুন ঘোষণা, আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে

ঢাকা সমাবেশে নতুন ঘোষণা, আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে

সরকারকে বিদায় দেওয়া ছাড়া কোনো পথ নেই উল্লেখ করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘আগামী ১২ তারিখ ঢাকায় একটা সমাবেশ হবে। সেই সমাবেশে নতুন ঘোষণা আসবে। সেই ঘোষণার মধ্য দিয়ে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের নতুন যাত্রা শুরু হবে। সেই যাত্রায় তরুণদের জেগে উঠতে হবে। সমগ্র মানুষকে জাগিয়ে তুলতে হবে।’ 

তিনি বলেন, ‘আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে। দেশ, মানুষ ও গণতন্ত্রকে উদ্ধার করার জন্য দেশের মানুষকে সঙ্গে নিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে এবারের আন্দোলন সফল করতে হবে।’

রবিবার বিকালে সিলেটে বিভাগীয় ‘তারুণ্যের সমাবেশে’ প্রধান অতিথির বক্তৃতায় মির্জা ফখরুল এসব কথা বলেন। সিলেট নগরীর চৌহাট্টা এলাকার আলীয়া মাদ্রাসা মাঠে যৌথভাবে এ সমাবেশের আয়োজন করে যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদল। 

সমাবেশকে কেন্দ্র করে সকাল থেকে দলে দলে আসতে থাকেন নেতাকর্মীরা। বিভাগের বিভিন্ন জায়গা থেকে গাড়ির বহর নিয়ে নেতারা আসেন। সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার ও সিলেট জেলার বিভিন্ন উপজেলা থেকে খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে আসা যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা সিলেট শহরের আলীয়া মাদ্রাসার মাঠে জড়ো হন। দুপুর পেরোতেই মাদ্রাসা ময়দান কানায় কানায় ভরে যায়। স্লোগানে স্লোগানে মুখরিত হয় আলীয়া মাদ্রাসা মাঠ।

এ সময় তারা বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিসহ বিভিন্ন স্লোগান দেন। সমাবেশস্থলের চারপাশে অসংখ্য ব্যানার, পোস্টার ও ফেস্টুন টাঙানো হয়।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আওয়ামী লীগ বলে সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন হবে। কিন্তু কোন সংবিধান? যে সংবিধান আওয়ামী লীগ নিজেরাই কাটছাঁট করে নিজেদের মতো করেছে। সেই সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন করতে চায় তারা। অথচ বাংলাদেশের জনগণ আগেই সিদ্ধান্ত নিয়েছে- নির্বাচন হবে নির্দলীয় সরকারের অধীনে। দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না। বিশেষত আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব না। তার প্রমাণ গত দুটি নির্বাচনে পাওয়া গেছে। দেশে এখন কারও ভোটাধিকার নেই। জনগণ ভোট দিতে পারে না। ভোটাধিকারের কথা বললে হামলা, নির্যাতন, গুম, খুন করা হয়।’

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘আমাদের কথা খুব পরিষ্কার, এই সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে। পদত্যাগ করে সংসদ বিলুপ্ত করতে হবে। এরপর নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে হবে। নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠন করার মধ্য দিয়ে নতুন নির্বাচন করে দেশে নতুন যাত্রা শুরু করতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘আমি আহ্বান জানাচ্ছি, দেশের সব রাজনৈতিক দল, সব মানুষ, সব সংগঠন, তরুণ-যুবক-বৃদ্ধ আপামর জনসাধারণকে। এই দেশকে রক্ষা করতে হলে আসুন আমরা সবাই উঠে দাঁড়াই, মাথা উঁচু করে দাঁড়াই, আমাদের দাবি আমরা আদায় করে নিই এবং এই দানব সরকারকে বাধ্য করি নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দেওয়ার জন্য।’ 

বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আমরা দুটো নির্বাচন দেখেছি। দুটো নির্বাচনের প্রতিটিতে আওয়ামী লীগ মানুষকে বোকা বানিয়েছে, প্রতারণা করেছে। ২০১৪ সালে আমরা বললাম, কেয়ারটেকার গভর্নমেন্ট দিতে হবে, তাঁরা না মেনে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনব্যবস্থা করলেন। তখনই দেশনেত্রী খালেদা জিয়া বললেন, এই নির্বাচনব্যবস্থার মাধ্যমে দেশে কখনোই শান্তি আসবে না, স্থিতিশীলতা আসবে না।’

সরকারি চাকরি পেতে হলে ঘুষ দিতে হয় অভিযোগ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘বাংলাদেশকে আবার আগের জায়গায় নিয়ে আসতে হবে। যে বাংলাদেশে গণতন্ত্র থাকবে, মানুষের স্বাধীনতা থাকবে, মানুষের সার্বভৌমত্ব থাকবে, কাজ করে আয় করার ব্যবস্থা থাকবে এবং সহজ-সরল জীবন যাপন করতে পারবে। তরুণেরা এখন চাকরি পায় না, অথচ তারা (সরকার) বলেছিল ঘরে ঘরে চাকরি দেবে। চাকরি তারা দেয় ঠিকই, তবে ১৫ লাখ, ২০ লাখ টাকা ঘুষ দিলে চাকরি দেয়। আর নিজের লোকজনদের চাকরি দেয়।’

বিএনপির কর্মসূচি পালনে সরকার নানাভাবে বাধা দিচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন দলটির মহাসচিব। তিনি বলেন, ‘আমি শুনেছি, কাল (শনিবার) রাত দেড়টার সময় নাকি এই মাঠ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। রাত দেড়টার সময় আপনারা মাঠ রেডি করেছেন, তারপর এখানে আপনারা সভা করতে সক্ষম হয়েছেন। এভাবেই তারা (সরকার) বাধা দিতে থাকে। এভাবেই তারা আমাদের সব দাবি, আমাদের কথা বলার অধিকার, সেগুলোকে তারা খর্ব করে যাচ্ছে ১৪ বছর ধরে।’ তিনি যোগ করেন, ‘আমরা একটা কঠিন সময়ে এসে উপস্থিত হয়েছি। আজকে জাতি অত্যন্ত সংকটের মধ্যে আছে। এ জাতির স্বাধীনতা টিকবে কি না, এ জাতির অস্তিত্ব থাকবে কি না, আমরা আমাদের স্বকীয়তা নিয়ে বেঁচে থাকতে পারব কি না, এটা নির্ভর করছে আগামী কয়েক মাসের মধ্যেই। আবার একটা নির্বাচন আসন্ন। এই নির্বাচন ২৩ বা ২৪ সালের মধ্যে হবে। আওয়ামী লীগ বেআইনিভাবে জোর করে ক্ষমতা দখল করে আবার ক্ষমতাকে সম্প্রসারিত করার চেষ্টা করছে।’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘শেখ হাসিনা ভিন্ন আঙ্গিকে ভিন্নভাবে একদলীয় শাসনব্যবস্থা বাকশাল চাপিয়ে দিতে চেয়েছে আমাদের ওপর। দুইটা নির্বাচন করেছেন এর আগে। আর নির্বাচনটা হচ্ছে কী? ওটা হচ্ছে তাদের (সরকার) একটা অস্ত্র। বেআইনিভাবে ক্ষমতায় টিকে থাকার অস্ত্র। নির্বাচনব্যবস্থাকে তারা তাদের মতো করে ব্যবহার করে। আর তারা বলে, আওয়ামী লীগের আমলেই নাকি সবচেয়ে ভালো নির্বাচন হয়। কিন্তু আওয়ামী লীগের আমলে সুষ্ঠু নির্বাচন হয় না। আওয়ামী লীগ সুষ্ঠু নির্বাচন দিতে জানে না।’

তিনি বলেন, ‘তারা (আওয়ামী লীগ) মনে করে, দেশটা তাদের বাপের জমিদারি। আর আমরা সব প্রজা। এটাই তারা সব সময় মনে করে। সে কারণে তারা সব সময়ই ক্ষমতা ধরে রাখতে চায় বেআইনিভাবে, নির্যাতন করে, হত্যা করে, গুম করে, নিষ্ঠুরতা করে।’

মির্জা ফখরুল আরও বলেন, ‘নির্বাচনব্যবস্থা আওয়ামী লীগ ইচ্ছাকৃতভাবে ধ্বংস করে দিয়েছে। তরুণ-যুবকদের যদি অধিকার আদায় করতে হয়, ভবিষ্যতে যদি সুন্দর দেশ তৈরি করতে হয়, যেখানে তারা চাকরি পাবে, শিক্ষার সুযোগ পাবে, স্বাস্থ্যের সুযোগ পাবে, তাহলে তাদের অবস্থার পরিবর্তন করতে হবে।’ এ সময় দেশের বিদ্যুৎ খাতের দুর্নীতি, ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে সরকারের ভূমিকা না রাখাসহ বিভিন্ন বিষয়ে সরকারের কঠোর সমালোচনা করেন বিএনপির মহাসচিব।

সমাবেশে প্রধান বক্তার বক্তব্যে যুবদলের সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকু বলেন, ‘বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপার্সন তারেক রহমান আজ দেশ বাঁচানোর ডাক দিয়েছেন। তার আহ্বানে রাজপথে নেমে এসেছে বাংলার তরুণ সমাজ। আজ তরুণরা জেগে উঠেছে। তরুণরা জেগে উঠলে কোনো স্বৈরশাসকই ক্ষমতায় টিকতে পারেনি। এই সরকারও টিকে থাকতে পারবে না।’

স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এসএম জিলানীর সভাপতিত্বে সমাবেশে বিশেষ বক্তার বক্তব্য রাখেন ছাত্রদলের সভাপতি কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণ। 

বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. সাখাওয়াত হাসান জীবন, বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা তাহসীনা রুশদীর লুনা, জেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুল কাইয়ুম চৌধুরী, মহানগর কমিটির সভাপতি নাসিম হোসাইন প্রমুখ। এ ছাড়া গুম হওয়া বিএনপি নেতাদের পরিবারের সদস্যরা ও নির্যাতিত বিএনপি নেতাদের কয়েকজন এই সমাবেশে বক্তব্য রাখেন। সমাবেশের আগে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।