সমাবেশের আগেই গ্রেপ্তার বিএনপির পাঁচ শতাধিক নেতাকর্মী, কারাগারে ৪৮২ জন

সমাবেশের আগেই গ্রেপ্তার বিএনপির পাঁচ শতাধিক নেতাকর্মী, কারাগারে ৪৮২ জন

বিএনপির শুক্রবারের মহাসমাবেশের আগের দু’দিনে গ্রেপ্তার করা হয়েছে অন্যতম প্রধান বিরোধী দলটির পাঁচ শতাধিক নেতাকর্মীকে। তাদের মধ্যে ৪৮২ জনকে গতকাল কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত। এ ছাড়া ঢাকার বাইরের বিভিন্ন এলাকা থেকেও গ্রেপ্তার হওয়ার তথ্য পাওয়া গেছে। তল্লাশি চালানো হয় ঢাকামুখী যানবাহনেও। রাজধানীর প্রবেশপথে বৃহস্পতিবার রাত থেকে তল্লাশি জোরদার করা হয়। বুধবার (২৬ জুলাই) রাতে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে বিএনপির তিনশ’র অধিক নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের কাছাকাছি মিডওয়ে হোটেল থেকে অর্ধশতাধিক বিএনপি নেতাকর্মীকে আটক করা হয়।

আজ শুক্রবার (২৮ জুলাই) দুপুরে ঢাকায় হতে যাচ্ছে বড় দুই দলের রাজনৈতিক সমাবেশ। নয়াপল্টনে অন্যতম বিরোধীদল বিএনপির মহাসমাবেশ আর ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের শান্তি সমাবেশ হবে বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেইটে। অনেকটা পাল্টাপাল্টি আয়োজন নিয়ে দেশজুড়ে এক ধরনের শঙ্কা ও উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়েছে।

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের তিন ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন ও বিএনপির ঢাকায় পাল্টাপাল্টি কর্মসূচির ভেন্যু নিয়ে দু’দিন নানা নাটকীয় পরিস্থিতি তৈরি হয়। আবার একপক্ষ অন্যপক্ষের বিরুদ্ধে বক্তব্য দিলে উত্তেজনার পারদ চড়তে থাকে। এমন বাস্তবতায় কঠোর অবস্থানে যায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। দু’দিন রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ধরপাকড় শুরু করে পুলিশ।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের ভাষ্য, বেশ কিছুদিন ক্ষমতাসীন দল ও বিরোধী দলের রাজপথে পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি হলেও বড় কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। তবে দুই দলের কর্মসূচি ঘিরে হঠাৎ রাজধানীজুড়ে পুলিশি তৎপরতা ও শত শত গ্রেপ্তারের ঘটনাকে কেউ কেউ রাজনৈতিক দৃশ্যপটের নতুন মোড় বলে মনে করছেন। চলমান রাজনৈতিক সংকট উত্তরণে বিভেদরেখা আরও স্পষ্ট হওয়ার শঙ্কা কারও কারও।

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আবদুর রহমান বলেন, বিএনপিসহ একটি অশুভ রাজনৈতিক শক্তি দেশে নৈরাজ্যকর অবস্থা সৃষ্টির জন্য ষড়যন্ত্র করে আসছে। তারা আন্দোলন ও সমাবেশের নামে জ্বালাও-পোড়াও, গাড়ি ভাঙচুর ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড সংঘটিত করে থাকে। এটাই দেশের মানুষের দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতা। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যেমন তাদের জায়গা থেকে দৃষ্টি রাখবে, আমরাও রাজনৈতিকভাবে এগুলো মোকাবিলার পাশাপাশি সন্ত্রাস-নৈরাজ্যের অপচেষ্টার বিরুদ্ধে কঠোর প্রতিরোধ গড়ে তুলব।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেন, ‘দেশের এমন কোনো সেক্টর নেই, যেখানে ক্ষমতাসীন সরকার ধ্বংস করেনি, দলীয়করণ করেনি। সীমাহীন লুটপাট আর অর্থ পাচারের মাধ্যমে দেশের অর্থনীতিকে ধ্বংস করা হয়েছে। একটা সময়ে শান্তিপূর্ণ জনতা ঘুরে দাঁড়ায় এবং গণঅভ্যুত্থান সৃষ্টি করে। সরকারের কোনো ভয়ভীতি আর নির্যাতন গণঅভ্যুত্থানকে ঠেকাতে পারবে না। জনগণ এখন জীবন দিতেও প্রস্তুত।’

বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স বলেন, ঢাকায় বিএনপির মহাসমাবেশ কর্মসূচি ঘিরে হঠাৎ করে পুরোনো ও নতুন গায়েবি মামলায় পুলিশ নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করছে।

রাতের আঁধারে বিএনপির নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তারের অভিযোগের বিষয়ে গতকাল সাংবাদিকদের ডিএমপি কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক বলেন, কোনো রাজনৈতিক দলের বিরুদ্ধে অভিযানে নামেনি পুলিশ। এ ধরনের কোনো অভিযোগও নেই। অভিযোগ পেলে তদন্ত করে দেখব। যাদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে, তারা সন্দেহভাজন বা নিয়মিত মামলার আসামি। অনেকে ওয়ারেন্টভুক্ত আসামি। আশুরা উপলক্ষে এটি ডিএমপির নিয়মিত অভিযান। ২০১৫ সালে তাজিয়া মিছিলে বোমা হামলা হয়েছিল। এটি আমাদের নিয়মিত অভিযানের অংশ, এটি চলবে।

আজ বিএনপির মহাসমাবেশের দিনে আওয়ামী লীগের তিন সহযোগী-ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও ছাত্রলীগের ব্যানারে শান্তি সমাবেশ এবং রাজপথে সতর্ক পাহারা বসানোর ঘোষণা দিয়েছে।

সরকার ও আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারক নেতারা বলছেন, বিএনপি শুক্রবারের মহাসমাবেশ কর্মসূচি ঘিরে ব্যাপক সহিংসতা-সন্ত্রাস ঘটাবে বলে শঙ্কা রয়েছে। আবার সরকারের ওপর চাপ বাড়ানো এবং বিদেশিদের কাছে জনসমর্থন দেখানোর লক্ষ্যেই বিএনপি হয়তো বা এই মহাসমাবেশের কর্মসূচি দিয়েছে। বিএনপি সুযোগ পেলে সরকার পতনের দাবিতে রাস্তা অবরোধ বা গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ঘেরাওয়ের চেষ্টা করতে পারে বলেও সংশয় রয়েছে। এর মধ্য দিয়ে ঢাকা অচল করার মতো পদক্ষেপও নিতে পারে তারা। সরকারের বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনেও এমন ইঙ্গিত দিয়ে সতর্ক করা হয়েছে। এ কারণে রাজপথ নিজেদের দখলে রাখতেই তিন সহযোগী সংগঠনের শান্তি সমাবেশ ঘিরে বিশাল শোডাউনের প্রস্তুতি নিয়েছে ক্ষমতাসীনরাও।