সরকারকে বিএনপি মহাসচিব

জনগণের উত্তাল তরঙ্গ সৃষ্টি হলে কোনো বিদেশি এগিয়ে আসবে না

জনগণের উত্তাল তরঙ্গ সৃষ্টি হলে কোনো বিদেশি এগিয়ে আসবে না

কোনো দেশের নাম উল্লেখ না করে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘আমরা জানি, এই সরকার বিদেশের ওপর নির্ভর করে টিকে আছে। কোনো বিদেশি এগিয়ে আসবে না, যখন জনগণের সেই উত্তাল তরঙ্গ সৃষ্টি হবে।’

শনিবার বিকালে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি ও উন্নত চিকিৎসার দাবিতে দলটির পদযাত্রা কর্মসূচি শুরুর আগে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে এসব কথা বলেন মির্জা ফখরুল।

রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সামনে থেকে পদযাত্রা কর্মসূচি বিকেল সোয়া চারটার দিকে শুরু হয়। এই কর্মসূচি কাকরাইল মোড়, শান্তিনগর, মৌচাক, মালিবাগ মোড় হয়ে মগবাজার চৌরাস্তায় গিয়ে শেষ হয়।

সরেজমিনে দেখা যায়, পদযাত্রা কর্মসূচিতে দলটির হাজার হাজার নেতা-কর্মী অংশ নিয়েছেন।‌ বিপুলসংখ্যক নেতা-কর্মীর উপস্থিতির কারণে নয়াপল্টনের সামনের সড়কের একপাশ হয়ে দুপুর দেড়টা থেকেই যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। অপর পাশ হয়ে ধীরগতিতে যানবাহন চলাচল করে। নেতা-কর্মীদের অবস্থানের কারণে এক পর্যায়ে ওই পথেও যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।

পদযাত্রা শুরুর আগে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সংক্ষিপ্ত সমাবেশের জন্য পিকআপ ভ্যানের ওপর অস্থায়ী মঞ্চ তৈরি করা হয়। সেখান থেকে দলের জ্যেষ্ঠ নেতারা বক্তব্য দেন।

সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘খালেদা জিয়া অত্যন্ত অসুস্থ। তিনি জীবন-মৃত্যুর সঙ্গে সংগ্রাম করছেন।‌ আল্লাহ না করুন তার কিছু হয়ে গেলে, কোনো কিছু ঘটলে সব দায়দায়িত্ব হাসিনার সরকারকে নিতে হবে।’

খালেদা জিয়ার জন্য গঠিত মেডিকেল বোর্ডের চিকিৎসকেরা বিদেশে পাঠানোর পরামর্শ দিলেও এতে সরকার কর্ণপাত করছে না উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘এ জন্যই কর্ণপাত করছে না যে তারা জানে খালেদা জিয়া বের হলে তাদের সিংহাসন মসনদ ঠিক থাকবে না।’

খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে লিফলেট বিতরণ করার সময় ছাত্রদলের কয়েকজন নেতাকে তুলে নেওয়ার অভিযোগ করে মির্জা ফখরুল বলেন, আগামী ছয় ঘণ্টার মধ্যে তাদের জনগণের সামনে হাজির না করলে, মুক্তি না দিলে সব দায় সরকারকে নিতে হবে।

গায়েবি মামলায় সাজা দেওয়া শুরু হয়েছে, এমন অভিযোগ করে বিএনপির মহাসচিব বলেন, তারা বিচার বিভাগসহ সব ধ্বংস করে দিয়েছে। সরকার পতনের মধ্য দিয়ে নতুন দিগন্তের সূচনা হবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

বিএনপির নেতা-কর্মীরা কেউ বাসায় থাকতে পারেন না, এমন অভিযোগ করে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, এ দুরবস্থা থেকে জাতিকে মুক্ত করতে হবে। মুক্ত করতে হলে চাই ইস্পাতকঠিন মনোবল। রাজপথে থেকে এই স্বৈরাচারী সরকারের পেটুয়া বাহিনীকে মোকাবিলা করে এই সরকারকে ক্ষমতা থেকে সরাতে হবে।‌

ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ও উত্তর বিএনপি আয়োজিত পদযাত্রা কর্মসূচির আগে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ‘দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর পরিবারকে তাদের ইচ্ছা অনুযায়ী এই সরকার জানাজা পড়তে দেয়নি। শেখ হাসিনা ক্ষমতায় থাকলে খালেদা জিয়াকে জানাজা দিতে পারব কি না, সন্দেহ আছে।’

গয়েশ্বর চন্দ্র রায় অভিযোগ করেন, খালেদা জিয়া কোনো অন্যায় করেননি, তাকে সাজানো বিচারের মাধ্যমে সাজা দেওয়া হয়েছে। তার ওপর অবিচার করা হয়েছে। যারা এসবের সঙ্গে সম্পৃক্ত, তাদের বিচার হবে। তিনি বলেন, ‘আমরা দেশে অশান্তি চাই না। শান্তিপূর্ণভাবে অধিকার আদায় করতে চাই।’

দলের নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘আমাদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে যদি অশান্তি সৃষ্টি করতে চায়, তা মোকাবিলা করার জন্য রাজপথে স্বতঃস্ফূর্তভাবে থাকতে হবে। পুলিশ দেখলেই দৌড় দেওয়া যাবে না। আঘাত করলে পাল্টা আঘাত করতে হবে।’

সমাবেশে স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, শুধু ভোট চুরি করে ক্ষমতায় থাকার জন্য খালেদা জিয়াকে জেলে পাঠানো হয়েছে। খালেদা জিয়াকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে। যারা এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত, তারা কেউ রেহাই পাবেন না।‌

একই অনুষ্ঠানে দলের স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, খালেদা জিয়াকে সুচিকিৎসা না দিয়ে তাকে আরও অসুস্থ করা হয়েছে।‌ উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে দেশের বাইরে না পাঠিয়ে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে।
পদযাত্রার আগে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে সভাপতির বক্তব্যে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক আবদুস সালাম বলেন, ক্ষমতায় থেকে আওয়ামী লীগ লুটপাট করেছে। এই হিসাব দেওয়ার ভয়ে পাশ্ব৴বর্তী দেশে গিয়ে বলছে, আমাদের বাঁচান। কিন্তু এবার কোনো লাভ হবে না। মানুষ জেগে উঠেছে। মানুষ তার অধিকার আদায় করে নেবে।

ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সদস্যসচিব আমিনুল হকের সঞ্চালনায় সংক্ষিপ্ত সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমানউল্লাহ।