ঢাকায় বিএনপি’র কালো পতাকা মিছিল

একদফা আন্দোলনের মধ্যদিয়েই সরকারকে বিদায় করা হবে

একদফা আন্দোলনের মধ্যদিয়েই সরকারকে বিদায় করা হবে

বড় শোডাউনের মধ্যদিয়ে ঢাকায় কালো পতাকা গণমিছিল করেছে বিএনপি। একদফার দাবিতে গতকাল রাজধানীতে দুই ভাগে এই কর্মসূচি পালন করেন দলটির নেতাকর্মীরা। এতে অংশ নিয়েছেন হাজার হাজার নেতাকর্মী। বিকালে ঝড়-বৃষ্টি উপেক্ষা করে একদফা আন্দোলনের ৫ম ধাপের কর্মসূচি পালন করেছে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপি। মহানগর উত্তর বিএনপি শ্যামলী মাঠ থেকে বসিলা চৌরাস্তা ও দক্ষিণ বিএনপি’র উদ্যোগে নয়াপল্টন থেকে নারিন্দা পর্যন্ত কালো পতাকা গণমিছিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। এই কর্মসূচিতে সরকারকে কঠোর হুঁশিয়ারি দিয়েছেন বিএনপি শীর্ষ নেতারা। তারা বলেছেন, ক্ষমতাসীন সরকার গত ১৫ বছর ধরে রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে টিকে আছে। নতুন করে আবারো ক্ষমতায় আসার ষড়যন্ত্র শুরু করেছে। সে লক্ষ্যে বিএনপি নেতাকর্মীদের উপর জুলুম অত্যাচারের মাত্রা বাড়িয়ে দিয়েছে। এসব করে কোনো লাভ হবে না।

দেশের মানুষ রাস্তায় নেমে এসেছে। এই অবৈধ সরকারে বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে। এবার সরকারের পতন কেউ ঠেকাতে পারবে না। একদফা আন্দোলনের মধ্যদিয়েই সরকারকে বিদায় করা হবে। ইতিমধ্যে শেখ হাসিনার সরকারের বিদায় ঘণ্টা বেজে উঠেছে। আওয়ামী লীগের অবস্থা এখন এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে পালানোর পথও খুঁজে পাচ্ছে না।ঢাকা উত্তরে কালো পতাকা মিছিল পূর্ব সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ঝড় তুফান বিএনপিকে রুখতে পারবে না। আন্দোলন চলবেই। আন্দোলনের মাধ্যমেই এই ফ্যাসিস্ট সরকারকে বিদায় করা হবে। 

আওয়ামী লীগকে ‘জঙ্গি’ আখ্যা দিয়ে আমীর খসরু বলেন, সরকার আবারো ক্ষমতায় আসতে জঙ্গি নাটক শুরু করেছে। জঙ্গি নাটক এখন আর কেউ বিশ্বাস করে না। সেইদিন শেষ হয়ে গেছে। ওই জঙ্গি খেলা আর চলবে না। আওয়ামী লীগ নিজেরাই জঙ্গি। তাদের চাইতে বড় জঙ্গি, সন্ত্রাসী দল বিশ্বের কোথাও নেই।

প্রধানমন্ত্রীর দক্ষিণ আফ্রিকা সফরের সমালোচনা করে তিনি বলেন, শেখ হাসিনা দক্ষিণ আফ্রিকায় দলবল নিয়ে গেছে, পরিবারের লোক নিয়ে দেশের টাকা খরচ করেছেন। ব্রিকস একটি অফিসিয়ালি ছবি প্রকাশ করেছে। ব্রিকসের ওখানে সদস্য হোক আর না হোক সবাই ছবি তুলেছেন। সেখানে প্রধানমন্ত্রী নেই। প্রবল মিথ্যাচারের রাজনীতি আর বাংলাদেশে চলবে না। 
আমির খসরু বলেন, প্রধানমন্ত্রী দক্ষিণ আফ্রিকায় গিয়েছিলেন জনগণের টাকা খরচ করে, ব্রিকসের সদস্য হতে, তা পারেন নাই। সেখানে গিয়ে নৌকায় ভোট চাইছেন এবং বিএনপিকে গালিগালাজ করছেন। এদিক ওদিক গিয়ে কাজ হবে না। তৃতীয় কোনো দেশে গিয়ে বাইলেটারাল (দ্বিপক্ষীয়) মিটিং হয় না। প্রশাসন নিয়ে সরকারের পরিকল্পনা নিয়ে খসরু বলেন, আগামীতে ক্ষমতায় টিকে থাকতে সরকার প্রশাসন এবং বিচারকদের দিয়ে রেজিম তৈরি করেছে। দেশের মানুষ আগেই ধরে ফেলেছে আওয়ামী লীগের মিথ্যাচারের রাজনীতি আর চলবে না। দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উদ্দেশ্যে তিনি আরও বলেন, মানুষের প্রতিপক্ষ এখন আওয়ামী লীগ। কিন্তু বাংলাদেশের মানুষের প্রতিপক্ষ হয়ে কেউ জয়ী হতে পারে নাই। তাই বাংলাদেশের মানুষের প্রতিপক্ষ কেউ হবেন না। পুলিশ ভাইয়েরা হবেন না। র‍্যাব ভাইয়েরা হবেন না। বিজিবি হবেন না, আনসার হবেন না। সরকারি কর্মকর্তা হবেন না। বিচারকরা হবেন না। সবার কাছে বার্তা, দেয়ালের লিখন পড়তে শিখুন। সিদ্ধান্ত নেন, জনগণের বিপক্ষে অবস্থান নেবেন না। আর নিলে সেই দায় দায়িত্ব আপনাদের। 

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার বহির্বিশ্বে আর কারও কাছে জনপ্রিয়তা পাবে না জানিয়ে বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, মানুষের দ্বারে দ্বারে গিয়ে ঘুরে ঘুরে জনপ্রিয়তা পাবেন না। যেখানেই দাওয়াত পান সেখানেই দৌড় দেন, আগে পিছে তাকান না। সমাবেশে এ সময় আরও বক্তব্য রাখেন বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য বেগম সেলিমা রহমান। ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপি’র কালো পাতাকা গণমিছিলের আগে অনুষ্ঠিত সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন আমান উল্লাহ আমান ও সদস্য সচিব আমিনুল হক। আমান বলেন, সরকারের কোনো হুমকি-ধমকিতে কাজ হবে না। যাই হোক না কেন, শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচন হবে না। বিএনপি ছাড়া বাংলাদেশে কোনো নির্বাচন হবে না। সবকিছুর ফয়সালা হবে রাজপথে।  আওয়ামী লীগ-বিএনপি নয় জনগণের সঙ্গে বন্ধুত্ব করুন, ভারতকে মির্জা আব্বাস সরকার পতনের একদফা দাবিতে যুগপৎ আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় রাজধানীতে কালো পতাকা গণমিছিল করেছে বিএনপি। ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপি পৃথকভাবে গণমিছিল করে।

গতকাল বিকাল ৪টায় নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে ঢাকা দক্ষিণ বিএনপি ও শ্যামলী রিং রোড থেকে ঢাকা উত্তর বিএনপি কালো পতাকা গণমিছিল শুরু করে। ‘অবৈধ, লুটেরা, ফ্যাসিস্ট সরকারের পদত্যাগ, সংসদ বিলুপ্তিকরণ, নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করে নতুন ইসি গঠন করে নির্বাচন অনুষ্ঠানের একদফা দাবিতে’ এই কালো পতাকা গণমিছিল অনুষ্ঠিত হয়। মিছিলের আগে পবিত্র কোরআন তেলাওয়াতের মধ্যদিয়ে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ শুরু হয়। ঢাকা দক্ষিণের গণমিছিলে প্রধান অতিথি হিসেবে অংশ নেন বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস। সমাবেশ আওয়ামী লীগ ও বিএনপি’র সঙ্গে নয় বাংলাদেশের জনগণের সঙ্গে বন্ধুত্ব করতে ভারতকে পরামর্শ দিয়েছেন বিএনপি’র এই নেতা। মির্জা আব্বাস বলেন, এই সরকারের পদত্যাগ না হলে এ দেশের মানুষ বাঁচবে না। দেশের স্বাধীনতা থাকবে না। আর আমাদের দেশ নিয়ে বহু দেশ মাথা ঘামাচ্ছে। তাদের কার কী স্বার্থ তা আমি জানি না। ভারতকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, তাদের আমি পরিষ্কার ভাষায় বলতে চাই, সরকারের সঙ্গে নয়, আওয়ামী লীগের সঙ্গে নয় এবং বিএনপি’র সঙ্গে নয়, এ দেশের জনগণের সঙ্গে বন্ধুত্ব করুন। এ দেশের জনগণকে ভালোবাসতে শিখুন। প্রতিবেশী হিসেবে আমরা আপনাদের এটা বলতেই পারি, এদেশের মানুষের সঙ্গে সখ্যতা করুন। যদি এ দেশের মানুষ আপনাদের ভালো না বাসে তাহলে কখনোই এদেশ থেকে আপনারা কিছু পেতে পারেন না।

আওয়ামী লীগ সরকারের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, অনেক দেনা বাড়িয়েছেন। আর দেনা বাড়াবেন না। একদিন এই দেনার ঋণ আপনাদের শোধ করতেই হবে। আর একটা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে আমরা আওয়ামীবিহীন নির্বাচন চাই। কিন্তু বিনা ভোটে ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য আর চিন্তা করবেন না। তাহলে ভুল জায়গায় চলে যাবেন। 

আব্বাস বলেন, এ দেশের জনগণের টাকায় যারা লেখা-পড়া করে পুলিশ-প্রশাসনে চাকরি নিয়েছেন, তারা আজকে আমাদের নেতাকর্মীদের গুলি করে হত্যা করছেন। তারা সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা হয়ে আমাদের কর্মীদের বিচারের নামে প্রহসন করে আজকে জেলে দিচ্ছে। ওই কর্মকর্তারা আজকে জেলখানা ছাড়াও বিভিন্ন জায়গায় আমাদের কর্মীদের হত্যা করছে। আগে হত্যা করতো গুলি ও গুম করে। এখন জেলখানায় আটকে রেখে এবং বিনা চিকিৎসায় আমাদের কর্মীদের হত্যা করছে। 

তিনি আরও বলেন, ইতিমধ্যে জেলখানায় আমাদের কয়েকজন কর্মী মারা গেছেন। এই কুশিক্ষায় শিক্ষিত লোকগুলো দেশকে আজকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে গেছেন। কারণ তারা দেশকে ভালোবাসেন না, ভালোবাসেন টাকাকে। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি এবং পাকিস্তানিরা যেভাবে লুট করেছিল, তার চেয়ে অনেক হাজারগুণ বেশি লুট করেছেন এই সরকার এবং সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা।

ডিমের দাম এখন ৬০ টাকা হালি উল্লেখ করে বিএনপি’র এই স্থায়ী কমিটির সদস্য বলেন, একটা ডিম ১৫ টাকা। চিন্তা করা যায়? কেন হয়েছে? মুরগি কি ডিম দেয়া বন্ধ করেছে। করে নাই। তাহলে কেন হয়েছে। কারণ টাকার মূল্যমান কমে গেছে। আর আজকে দেখলাম, আগে ১০০ টাকার মধ্যে ১০০ টাকাই আমাদের ছিল। এখন ১০০ টাকায় আমাদের ১৪ টাকা কমে গেছে! বিদ্যুতের মিটারে কারচুপির প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সরকার এভাবে দেশের মানুষগুলো অর্থনৈতিকভাবে পঙ্গু বানিয়ে ফেলেছেন। 

বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, এখান থেকে সরকারকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। কারণ বৃষ্টির চেয়েও বড় ঢল রাস্তায় নেমেছে। আর বিএনপি মানুষের দল। মানুষ মানুষের জন্য। আর আওয়ামী লীগ দানবের দল। কিন্তু এই সরকার যে হারে অন্যায় ও অত্যাচার করেছে। তাতে ১৮ কোটি মানুষ ক্ষমা করবেন কিনা, সেদিকে তাকান। তাই বন্দুক তাক করার চেষ্টা করবেন না। আমার ওপর গুলি চালিয়েছেন, আমি বেঁচে আছি এবং আমাদের নেতাকর্মীরাও বেঁচে আছে। তাই কেউ বন্দুকের গুলিতে পিছিয়ে যাবেন না। আর সরকারকে বলবো, মানে মানে কেটে পড়েন। 

সরজমিন দেখা যায়, বেলা সোয়া ২টায় গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টি শুরু হওয়ার পরও বৃষ্টিতে ভিজে নেতাকর্মীরা কর্মসূচির প্রাঙ্গণে অবস্থান করেন। পরে মুষলধারে বৃষ্টি শুরু হলেও মঞ্চে অবস্থান করে নেতাকর্মীদের নির্দেশনা দেন মহানগর দক্ষিণ বিএনপি’র নেতারা। এর আগে কর্মসূচিতে অংশ নিতে বেলা ১টা থেকে কালো পতাকা হাতে নিয়ে নয়াপল্টনে খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে জড়ো হতে শুরু করেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপি ও এর অঙ্গ-সংগঠনের নেতাকর্মীরা। এ সময় তারা সরকারবিরোধী বিভিন্ন স্লোগানে কর্মসূচি প্রাঙ্গণ মুখরিত করে তোলেন। 

ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপি’র আহ্বায়ক আবদুস সালামের সভাপতিত্বে মিছিল পূর্ব সমাবেশে বিএনপি’র ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু, মোহাম্মদ শাহজাহান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবুল খায়ের ভূঁইয়া, ডা. ফরহাদ হালিম ডোনার, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, বিশেষ সম্পাদক ডা. আসাদুজ্জামান রিপন, চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক মীর সরাফত আলী সপু, বিএনপি’র সহ-স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক আব্দুল কাদির ভূঁইয়া জুয়েল, ইশরাক হোসেন, যুবদলের সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক রাজীব আহসান, কৃষক দলের সাধারণ সম্পাদক শহীদুল ইসলাম বাবুল, ছাত্রদলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রাদেশ ইকবাল খান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।