ফরিদপুরে বিএনপি’র রোডমার্চ

সরকারের পতনের সমাধান রাস্তায় হবে

সরকারের পতনের সমাধান রাস্তায় হবে

সরকার পতনের একদফা দাবিতে ফরিদপুর বিভাগে রোডমার্চ করেছে বিএনপি। গতকাল সকালে রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ মোড়ে উদ্বোধনী পথসভার মাধ্যমে রোডমার্চ শুরু করেন বিএনপি ও অঙ্গ- সহযোগী সংগঠনের হাজার হাজার নেতাকর্মী। এতে নেতৃত্ব দেন বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু। ১৩০ কিলোমিটার দীর্ঘ এ পথে রাজবাড়ী সদর থানার বসন্তপুর মাঠ, ফরিদপুর সদরের রাজবাড়ী মোড়, নগরকান্দার তালমা মোড়, গোপালগঞ্জের মুকসুদপুরের বরইতলা, মাদারীপুরের মস্তফাপুর ছোট ব্রিজ সংলগ্ন জমাদ্দার মার্কেট মাঠে পথসভার পর শরীয়তপুর স্টেডিয়ামে সমাপনী সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এ ছাড়া গোপালগঞ্জে মকসুদপুরের পথসভায় হামলা চালায় স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা। ঘটনাস্থলে পুলিশ উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে। এসব পথসভা ও সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, এই সরকারের পতনের সমাধান রাস্তায়ই করতে হবে। এরা ভোট চোর। স্থানীয়ভাবে এই চোরদের তালিকা করুন। এই ভোট চোরদের সঙ্গে পুলিশ এবং র‌্যাবও আছে। তারাও চোর। এই সরকার চোর। প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে যারা জড়িত তারাও রেহাই পাবে না। দেশেও রক্ষা পাবে না, বিদেশেও রক্ষা পাবে না। 

রাজবাড়ী সদর থানার বসন্তপুর মাঠে দ্বিতীয় পথসভায় আমীর খসরু বলেন, এই তালিকা ফেসবুকে প্রকাশ করবো। দেশে প্রকাশ করবো এবং বাইরেও প্রকাশ করবো। তাদেরকে জনগণের মুখোমুখি হতে হবে। 

আমীর খসরু আরও বলেন, বেগম খালেদা জিয়াকে অবিলম্বে চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠাতে হবে। কিন্তু যারা এর বিপক্ষে এবং বাধা দিচ্ছেন, এদেরও তালিকা হচ্ছে। এদের কেউ রেহাই পাবে না। তাই নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করতে হবে। পুলিশ ও র‌্যাবের কারা ভোট চোরের সঙ্গে জড়িত। আর কোন বিচারপতি মিথ্যা মামলায় সাজা দিচ্ছেন, স্থানীয়ভাবে তাদের সবার তালিকা করুন। মানুষ অপেক্ষায় আছে। দিন ও ঘণ্টা গুনছে।

তিনি বলেন, দেশের মানুষ আর একদিনও অপেক্ষা করতে চায় না। এই মুহূর্তে তারা সরকারের পদত্যাগ চায়। সরকার এখন দেশে-বিদেশে তদবির করছে। তদবিরের শেষ নাই। কিন্তু কোনো তদবিরে কাজ হবে না। কারণ জনগণ এই সরকারকে বিদায় দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে তিনি আরও বলেন, আর সময় নাই। এই সরকারের সময় নেই। কেউ বাড়ি ফিরে যাবো না। কারণ রাজপথ ছাড়া সমাধান হবে না। রাজপথে নেমেছি, তাড়াবোই। সরকার পদত্যাগ করবে, নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন হবে। যতক্ষণ পর্যন্ত না হবে ততক্ষণ পর্যন্ত আন্দোলন চলবে। যতই শক্তি প্রয়োগ করুক, লাভ হবে না। দেশি ও বিদেশি কোনো শক্তিই জনগণের কাছে টিকবে না। 

গোপালগঞ্জের মুকসুদপুরের বরইতলায় রোডমার্চে হামলার অভিযোগ করে আমীর খসরু বলেন, এখানে হামলা হয়েছে। আমি এর তীব্র নিন্দা জানাই। হামলা করে অধিকার কেড়ে নেয়া যাবে না। জনগণ তাদের অধিকার আদায় করে নিবে। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ দল হিসেবে দেউলিয়া হয়ে গেছে। ওরা কোনো দিন নির্বাচন করতে পারবে না। জনগণ রাস্তায় নেমে গেছে। ভোট চুরির দিন শেষ জনগণের বাংলাদেশে। আগামীতে নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে। সেই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের অস্তিত্ব থাকবে না। কারণ তারা আর এখন রাজনৈতিক দলে নাই। নেতাকর্মীদের শুধু ভোট চুরি ও দখলদারি শিখিয়েছে। 

বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য বেগম সেলিমা রহমান বলেন, ফ্যাসিস্ট সরকারের বিরুদ্ধে আমরা লড়াই করছি। আন্দোলন করছি। এই আন্দোলন এখন চূড়ান্ত পর্যায়ে। এই সরকারের পতনের আর বেশি দেরি নাই। ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের মধ্যদিয়ে আরেকটুকু এগিয়ে যেতে হবে। এখন ডাক আসবে। সেই ডাকে সাড়া দিয়ে ঐক্যবদ্ধ হয়ে এই সরকারের পতন ঘটাবো আমরা। এই হোক আমাদের অঙ্গীকার।

গোয়ালন্দ থেকে রোডমার্চ শুরুর পর মুষলধারে বৃষ্টি শুরু হয়। বৃষ্টি উপেক্ষা করে হাজার হাজার নেতাকর্মী ট্রাক, মাইক্রোবাস, মোটরসাইকেল নিয়ে কর্মসূচিতে যোগ দেন। রোডমার্চের পথে পথে শত শত নেতাকর্মী কর্মসূচিতে অংশ নেন।  

রোডমার্চের দলনেতা ও বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জয়নুল আবেদিন ফারুকের সভাপতিত্বে পথসভা ও সমাবেশে বিএনপি নেতা শামা ওবায়েদ, সেলিমুজ্জামান সেলিম, আলী নেওয়াজ মাহমুদ খৈয়ম, নাসিরুল হক সাবু, মো. আসলাম মিয়া, হারুন অর রশীদ হারুন, যুবদল নেতা সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, শফিকুল ইসলাম মিল্টন, স্বেচ্ছাসেবক দলনেতা এস এম জিলানী, রাজিব আহসান, ছাত্রদল নেতা রাশেদ ইকবাল খান, সাইফ মাহমুদ জুয়েল, মহিলা দলের নেত্রী নায়েবা ইউসুফ প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।

সরকার পতনে একদফার আন্দোলনের অংশ হিসেবে বর্তমানে ১৭ দিনের কর্মসূচি করেছে বিএনপি। গত ১৯শে সেপ্টেম্বর শুরু হওয়া এ কর্মসূচি ৫ই অক্টোবর কুমিল্লা-ফেনী-মিরসরাই হয়ে চট্টগ্রাম পর্যন্ত রোডমার্চের মধ্যদিয়ে শেষ হবে। এরপর পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করা হতে পারে বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে।