ঢাকায় সমাবেশের অনুমতি পেয়েছে আওয়ামী লীগ-বিএনপি

ঢাকায় সমাবেশের অনুমতি পেয়েছে আওয়ামী লীগ-বিএনপি

ঢাকায় শনিবারের মহাসমাবেশের জন্য বিরোধী দল বিএনপি এবং ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগকে তাদের নির্ধারিত জায়গাতেই সমাবেশ করার অনুমতি দিয়েছে পুলিশ।

২০টি শর্ত দিয়ে আওয়ামী লীগকে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেট এবং বিএনপিকে নয়াপল্টনে সমাবেশ করার অনুমতি দিয়েছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)। এদিন দুপুর ২ টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত এ শর্ত কার্যকর থাকবে।

শুক্রবার রাত সাড়ে ৮টায় ডিএমপি কার্যালয়ে সাংবাদিকের বিষয়টি নিশ্চিত করেন ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশন) ড. খ. মহিদ উদ্দিন।

তবে জামায়াতে ইসলামীকে ঢাকা মহানগর পুলিশ মতিঝিলের শাপলা চত্বরে সমাবেশের অনুমতি না দিলেও দলটি সন্ধ্যায় এক বিবৃতিতে তাদের ঘোষিত মহাসমাবেশ সফল করতে নেতাকর্মীদের প্রতি আহবান জানিয়েছে।

ওদিকে অনুমতি পাওয়ার পরপরই বিএনপি নয়াপল্টনে দলীয় কার্যালয়ের সামনে এবং আওয়ামী লীগ জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেইটে মঞ্চ নির্মাণের কাজ শুরু করেছে। এর আগে শুক্রবার বিকালে উভয় দলের মঞ্চ নির্মাণের প্রস্তুতি বন্ধ করে দিয়েছিলো পুলিশ।

বিএনপির সাথে সরকার বিরোধী যুগপৎ আন্দোলনে আছে এমন কয়েকটি দলও ঢাকার বিভিন্ন স্থানে সমাবেশের কর্মসূচি পালন করবে।

এদিকে বৃহস্পতিবার ঢাকার বিভিন্ন প্রবেশমুখে যানবাহন থামিয়ে তল্লাশি ছাড়াও বিভিন্ন জায়গায় টহল দিতে দেখা গেছে র‍্যাবসহ আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে। এছাড়া নয়াপল্টন এলাকায় বসানো হয়েছে অতিরিক্ত সিসিটিভি ক্যামেরা।
আনুষ্ঠানিক অনুমতি পেতে বিলম্ব হওয়ায় সমাবেশের ভেন্যুতে মঞ্চ নির্মাণের কাজ শুরু করতে পারছিলো না বিএনপি ও আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগ কাজ শুরু করলেও বিকেলে পুলিশ গিয়ে তা বন্ধ করে দেয়।

আবার সন্ধ্যার পর থেকেই নয়াপল্টনে বিএনপি কর্মী সমর্থকরা জড়ো হতে শুরু করলে সেখানেও এক পর্যায়ে পুলিশ উপস্থিত হয় ও তাদের সরিয়ে দেয়। যদিও পরে রাতেই আবার তারা জড়ো হতে শুরু করে।

এর মধ্যে বিকালে ঢাকা মহানগর পুলিশের সিনিয়র কর্মকর্তাদের এক বৈঠকে পরিস্থিতি পর্যালোচনার পর দুই প্রধান দলকে তাদের পছন্দমতো ভেন্যুতে সমাবেশের অনুমতি দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়।

পরে রাতে এক সংবাদ সম্মেলনে পুলিশের সিদ্ধান্ত সম্পর্কে জানিয়ে দেন অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার ডঃ খ মহিদ উদ্দিন।
“দুই দলই নিশ্চিত করেছে তাদের সমাবেশ হবে শান্তিপূর্ণ। আমরা নিরাপত্তা দিতে চাই যারা সমাবেশে আসবে তাদের এবং আমরা নিরাপত্তা দিতে চাই ঢাকাবাসীর। আশা করি রাজনৈতিক দলগুলো আমাদের সহযোগিতা করবে,” বলছিলেন তিনি।
পুলিশের অনুমতির পর উভয় দলই সমাবেশের মঞ্চ নির্মাণ সহ শেষ দিকের প্রস্তুতির কাজ শুরু করেছে এবং রাতেই তা শেষ করার কথা।

এর আগে উভয় দলকে পুলিশের পক্ষ থেকে বিকল্প ভেন্যুর নাম দিতে বললেও উভয় দলই তাদের নির্ধারিত জায়গার বাইরে সমাবেশ করা সম্ভব নয় বলে পুলিশকে জানিয়ে দেয়।

তখন পৃথক চিঠিতে বিএনপি জানায় যে তাদের সমাবেশে এক থেকে সোয়া লাখ মানুষ জড়ো হবে বলে তারা আশা করছে আর আওয়ামী লীগ জানায় তাদের সমাবেশে প্রায় দুই লাখ মানুষ যোগ দিবে।

বিএনপি অভিযোগ করেছে যে মহাসমাবেশকে সামনে রেখে বৃহস্পতিবার আরও দুশোর বেশি নেতাকর্মীকে বিভিন্ন জায়গা থেকে আটক করেছে পুলিশ। এরপর তাদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছে আদালত। এর আগে বৃহস্পতিবারও ১২৯ জনকে আদালতে উপস্থাপনের পর কারাগারে পাঠানো হয়েছিলো।

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর শুক্রবার এক প্রেস ব্রিফিংয়ে বলেছেন মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে গত চার দিনে মোট ১৩৫০জনকে আটক করেছে পুলিশ।

কিন্তু এসব সত্ত্বেও দলটির বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী শনিবারের সমাবেশে যোগ দিতে ঢাকায় এসে পৌঁছেছেন বলে দলটির নেতারা জানিয়েছেন।

বিএনপি ও আওয়ামী লীগের সংশ্লিষ্ট নেতারা জানিয়েছেন যে শনিবার সকাল দশটা থেকেই সমাবেশের কর্মসূচি শুরু করে দেবেন তারা। তবে মূল কর্মসূচি শুরু হবে বেলা দুইটায়।

বিএনপির পক্ষে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের এই সমাবেশ থেকেই তাদের সরকার পতন আন্দোলনের পরবর্তী ধাপের কর্মসূচি ঘোষণার কথা রয়েছে।

অন্যদিকে বিরোধী দলের আন্দোলনের জবাবের পাশাপাশি দলের পক্ষে নতুন করে কর্মসূচি ঘোষণা দিতে পারেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।

মূলত দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের তফসিলকে সামনে রেখেই ধারাবাহিক আন্দোলনে যাচ্ছে বিএনপি এবং এর জবাবেই পাল্টা কর্মসূচি পালন করে যাচ্ছে আওয়ামী লীগ।

বিএনপি বলেছে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের অধীনে নির্বাচন তারা মেনে নেবে না। অন্যদিকে আওয়ামী লীগ বলছে আগামী নির্বাচন শেখ হাসিনার অধীনেই অনুষ্ঠিত হবে।