জনতার মহাসমুদ্র ঢাকা, সমাবেশ শুরু

জনতার মহাসমুদ্র ঢাকা, সমাবেশ শুরু

সরকার পতনের একদফা দাবিতে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপি'র কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে মহাসমাবেশ করছে বিএনপি। শনিবার দুপুর ১২টা ৪০ মিনিটে পবিত্র কোরআন তিলাওয়াতের মধ্যে দিয়ে এই মহাসমাবেশ শুরু হয়। মাথায় জাতীয় পতাকা বেঁধে এসেছেন ছোট্ট শিশুকন্যা। বাবার হাত ধরে যোগ দিয়েছেন নয়াপল্টনের মিছিলে। ছোট্ট শিশুটির মতো নয়াপল্টনে এসেছেন সত্তরোর্ধ্ব বৃদ্ধাও। তার সঙ্গে আরও বেশ কয়েকজন নারী। শুধু শিশু আর নারী নয়, নয়াপল্টনে এসেছেন তরুণ, যুবক, বৃদ্ধরাও। তাদের সবার চোখেমুখে উচ্ছ্বাস। স্কাউট ভবনের সামনে আরেকজন হ্যান্ডমাইকে গান গাইছেন। তাকে ঘিরে তৈরি হয়েছে জটলা। সবাই নেচে গেয়ে উৎসব করছেন। নয়াপল্টনের মিছিলের উৎসবে যোগ দিয়েছেন লাখ লাখ মানুষ।

ফকিরাপুল, নয়াপল্টন, কাকরাইল, শান্তিনগর, বিজয়নগর সেগুনবাগিচা এলাকার অলিগলিতে শুধু মানুষ আর মানুষ। কোথাও তিল ধারণের জায়গা নেই। ট্রাকে করে কেউ বিতরণ করছেন পানি, কেউ দিচ্ছেন কলা-রুটি, কেউ দিচ্ছেন প্যাকেট খাবার। কেউ আবার সড়কে প্লাস্টিকের শিট বিছিয়ে মহাসমাবেশের বক্তব্য শুনছেন। কেউ আবার সরকারবিরোধী নানা স্লোগানে স্লোগানে মাতিয়ে রাখছেন। গতরাতে মহাসমাবেশের অনুমতি পাওয়ার পরপরই নয়াপল্টনমুখী স্রোত শুরু হয়। ভোর হতে হাজার হাজার নেতাকর্মীর মিছিল আসতে থাকে। বিএনপির পাশাপাশি যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক, ছাত্রদল, মহিলা দলের নেতাকর্মীদের হাতে ছিল রঙবেরঙের ব্যানার-ফেস্টুন।

সকাল ১০টা বাজতেই জনসমুদ্রে পরিণত হয়েছে নয়াপল্টন ও আশপাশের এলাকা। মানুষের ঢল পূর্বদিকে আরামাবাগ, ফকিরাপুল থেকে শুরু হয়েছে, সেটা পশ্চিম দিকে নয়াপল্টন, কাকরাইল পার হয়ে মালিবাগ মোড়ে গিয়ে ঠেকেছে। দক্ষিণ দিকে বিজয়নগর উপচে পুরানা পল্টনে গিয়ে ছড়িয়েছে। যেদিকেই চোখ পড়ে বিএনপি নেতাকর্মীদের মিছিলের ঢল। মানুষের ভিড়ের কারণে চৌধুরীপাড়া থেকে ফ্লাইওভার পুলিশ ব্যারিকেড দিয়ে বন্ধ করে দেয়েছে। মতিঝিল, আরামাবাগ, ফকিরারপুল নয়াপল্টন, বিজয়নগর, কাকরাইল, মালিবাগ পর্যন্ত যান চলাচল বন্ধ রয়েছে।

ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপি’র যৌথ উদ্যোগে এ মহাসমাবেশ অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এতে সভাপতিত্ব করছেন বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস। ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপি'র সদস্য সচিব আমিনুল হক ও দক্ষিণের ভারপ্রাপ্ত সদস্য সচিব লিটন মাহমুদের সঞ্চালনায় মহাসমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত আছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

'ফ্যাসিবাদী আওয়ামী সরকারের পদত্যাগ, অবৈধ সংসদ বিলুপ্তি, নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার গঠন, নির্বাচন কমিশন পুন:গঠন করে তার অধীনে অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের ব্যবস্থা, বেগম খালেদা জিয়াসহ সকল রাজবন্দির মুক্তি, মিথ্যা গায়েবী মামলা প্রত্যাহার, ফরমায়েশী সাজা বাতিল, অর্থনীতির মুক্তি, ভোটাধিকার এবং গণতন্ত্র পুন:প্রতিষ্ঠার একদফা দাবিতে' এ মহাসমাবেশের আয়োজন করা হয়েছে।

আজ সকাল থেকেই ঢাকাসহ সারা দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে এসে রাজধানীতে অবস্থান করা নেতাকর্মীরা ব্যানারসহ খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে সমাবেশস্থলে আসছেন। তাদের হাতে ছিলো জাতীয় ও দলীয় পতাকা। বিভিন্ন রঙের ক্যাপ পড়ে তারা মহাসমাবেশে অংশ নিয়েছেন। এসময় নেতাকর্মীদের মিছিল ও স্লোগানে মুখরিত হয়ে উঠেছে গোটা নয়াপল্টন এলাকা। নেতাকর্মীদের পরচারণায় কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে গেছে নয়াপল্টন।

সকাল পৌনে ১১টার দিকে নেতাকর্মীদের উজ্জীবিত করতে নয়াপল্টনে শুরু হয় গান-বাজনা। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী সামাজিক সাংস্কৃতিক সংস্থার (জাসাস) উদ্যোগে এই গান পরিবেশন করা হয়।

নয়াপল্টনের সামনে এবং আশপাশের এলাকায় মহাসমাবেশ সফল করতে এবং বিএনপি ও এর অঙ্গ-সংগঠনের নেতাদের মুক্তি চেয়ে পোস্টার-ব্যানারে ছেয়ে গেছে। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াসহ নেতাদের মুক্তির দাবি জানানো হয় এই সব পোস্টার ও ব্যানারে।

এদিকে মহাসমাবেশের অনুমতির অপেক্ষা না করে শুক্রবার বিকাল থেকে সমাবেশের পূর্বঘোষিত স্থান রাজধানীর নয়াপল্টনে সমবেত হতে থাকেন নেতাকর্মীরা।

বেলা গড়ানোর সঙ্গে বাড়ছিল তাদের উপস্থিতিও। সন্ধ্যায় খণ্ড খণ্ড মিছিল আর কয়েক হাজার নেতাকর্মীর স্লোগানে অনেকটাই সরগরম হয়ে ওঠে নয়াপল্টন। এই নেতাকর্মীদের বেশির ভাগ দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে এসেছেন। কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, তাদের কেউ তিন থেকে চার দিন আগেই ঢাকায় চলে এসেছেন। কেউ এসেছেন পুলিশের তল্লাশিচৌকি ফাঁকি দিয়ে।

এই মহাসমাবেশের অনুমতি পাওয়ার পরেই শুক্রবার রাতেই শুরু হয় মঞ্চ তৈরির প্রস্তুতি। মঞ্চ তৈরির জন্য আনা হয় ট্রাক ও বাঁশ। ভোর হতেই মঞ্চের কাজ শেষ হয়। আর রাত যতই বাড়ে নেতাকর্মীদের ভিড় ততই বৃদ্ধি পায়। আর সকাল থেকেই সারাদেশ থেকে আসা নেতাকর্মীরা কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে লাগাতার সরকার ও আওয়ামী লীগ বিরোধী বিভিন্ন স্লোগান দিচ্ছেন।

অন্যদিকে মহাসমাবেশকে ঘিরে নয়াপল্টন বিএনপি'র কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে এবং এর আশপাশের এলাকায় সতর্ক অবস্থানে রয়েছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। পাশাপাশি সাদা পোশাকেও বিভিন্ন সংস্থার সদস্যদের মোতায়েন করা রয়েছেন।