কেয়ারটেকার সরকার ছাড়া কোনো নির্বাচন হবে না: জামায়াত

কেয়ারটেকার সরকার ছাড়া কোনো নির্বাচন হবে না: জামায়াত

ঢাকার মহাসমাবেশ থেকে চলমান সরকারবিরোধী আন্দোলনকে চালিয়ে নেয়ার ঘোষণা দিয়েছে জামায়াতে ইসলামী। দলটির নেতৃবৃন্দ বলেন, সরকারের পতন না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাবেন তারা। রাজপথে আন্দোলনের মধ্যদিয়েই কেয়ারটেকার সরকার প্রতিষ্ঠা করবেন। সেই সঙ্গে দলটির কারাবন্দি নেতাদের মুক্ত করে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের কথাও ব্যক্ত করেন। 

শনিবার রাজধানীর আরামবাগ মোড়ে মহাসমাবেশ করে দলটি। সেই মহাসমাবেশ এসব কথা বলেন জামায়াত নেতৃবৃন্দ। মতিঝিলের শাপলা চত্বরে এই কর্মসূচি পালন করার কথা থাকলেও প্রশাসনের অনুমতি না পাওয়ায় শেষ পর্যন্ত আরামবাগে মহাসমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। 

মহাসমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত আমীর অধ্যাপক মুজিবুর রহমান বলেন, মানুষের ভোটাধিকার আদায় না হওয়া পর্যন্ত রাজপথ ছাড়বে না জামায়াতে ইসলামীর কর্মীরা। আমাদের আন্দোলন চলবে। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া বাংলাদেশে কোনো নির্বাচন হবে না। জীবন দিয়ে হলেও দাবি আদায় করবো।

তিনি বলেন, দীর্ঘদিন পর মুক্ত আকাশে সমাবেশ করছে জামায়াতে ইসলামী। আজ সেই ২৮শে অক্টোবর। ২০০৬ সালের এই দিনে লগি-বৈঠা নিয়ে জামায়াতে ইসলামী ও ছাত্রশিবিরের নেতাকর্মীদের ওপর হায়েনার মতো ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। সাপের মতো পিটিয়ে হত্যা করেছিল। আমরা প্রতিশোধ নিতে চাই। তবে হত্যার বদলে হত্যা নয়। কোরআন ও সুন্নাহর আইন চালু করে প্রতিশোধ নেব। কোনো শহীদ ভাইয়ের এক ফোঁটা রক্তও বৃথা যেতে দেব না।তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া আর কোনো নির্বাচন হবে না জানিয়ে মুজিবুর রহমান বলেন, জীবন দিয়ে হলেও মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
সমাবেশে আসার পথে দুই শতাধিক নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের ছেড়ে দিতে হবে। আমাদের আমীর ডা. শফিকুর রহমান, সেক্রেটারি মিয়া গোলাম পরওয়ার, রফিকুল ইসলাম খান, মতিউর রহমান আকন্দসহ দলীয় ও রাজবন্দি সকল নেতাকর্মীর মুক্তি দিতে হবে।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নায়েবে আমীর ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মো. তাহের বলেন, ‘জামায়াতে ইসলামী অবশ্যই নির্বাচনে যাবে। তবে তা কেয়ারটেকার সরকারের অধীনে। কোনো দলীয় সরকারের অধীনে নয়। জামায়াতে ইসলামী একটি সুশৃঙ্খল গণতান্ত্রিক দল। আমরা অনেক লড়াই-সংগ্রাম করেছি। আমরা আওয়ামী লীগ-বিএনপি’র সঙ্গে আন্দোলন করেছি স্বৈরাচারী এরশাদের বিরুদ্ধে। আমরা কেয়ারটেকার সরকার প্রতিষ্ঠায় আওয়ামী লীগের সঙ্গে সংগ্রাম করেছি। অথচ আজ আওয়ামী লীগের সুর ভিন্ন। আওয়ামী লীগ না কি স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি? তাদের সঙ্গে থাকলে স্বাধীনতার পক্ষের, বিপক্ষে গেলে যুদ্ধাপরাধী। এটা মুনাফেকি।’

তাহের বলেন, আমরা অনেক নির্বাচনেই অংশ নিয়েছি। আমরা নির্বাচন বয়কট করেছি ২০১৪ এবং ২০১৮ সালে। আমরা গণতান্ত্রিক। কিন্তু আমরা কোনো ভোট, ব্যালট ডাকাতির ভোটের নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবো না। আমরা নির্বাচন করবো। কিন্তু দলীয় সরকারের অধীনে নয়। দলীয় সরকারের অধীনে যে নির্বাচন বৈধ হয় না সেটা ২০১৪ ও ২০১৮ সালে প্রমাণ হয়েছে। নির্বাচন কমিশনকে উদ্দেশ্য করে তাহের বলেন, শতকরা ৫০ শতাংশ ভোট না হলে সেটা নির্বাচন বলা যাবে না। আপনি না কি ভালো মানুষ শুনেছি। আপনি প্রয়োজনে পদত্যাগ করুন। কিন্তু নুরুল হুদা হবেন না।

জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমীর শামসুল ইসলাম বলেন, ভোটবিহীন সরকার অবৈধভাবে ক্ষমতায় আছে। আজকে জনগণ ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। জনগণের অধিকার আদায় করে ছাড়বো ইনশাআল্লাহ। কেয়ারটেকার সরকারের অধীনে ক্ষমতা না দেয়া পর্যন্ত, ভোটাধিকার নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত রাজপথ ছাড়বো না।

ঢাকা মহানগর দক্ষিণ জামায়াতে ইসলামীর আমীর নুরুল ইসলাম বুলবুলের সভাপতিত্বে মহাসমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল এটিএম মাছুম, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হামিদুর রহমান, আবদুল হালিম, বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি রাজিবুর রহমান। 

জামায়াতের কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে আগে থেকেই মতিঝিলের শাপলা চত্বর এলাকা ঘিরে রাখে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। সকালে জামায়াতের নেতাকর্মীরা ওই এলাকায় প্রবেশ করতে চাইলে কাউকে ঢুকতে দেয়া হয়নি। প্রধান সড়ক ও অলিগলি পুলিশ ব্যারিকেড দিয়ে রাখে। ১০টার দিকে নটর ডেম কলেজ সংলগ্ন আরামবাগ মোড়ে জড়ো হন জামায়াতের কর্মীরা। বাধা দেয় পুলিশ। জামায়াত ঘোষিত কর্মসূচি সামনে রেখে সকালে আরামবাগ মোড়ে ব্যারিকেড দেয় পুলিশ। আরেকটি ব্যারিকেড দেয়া হয় মতিঝিলের শাপলা চত্বর থেকে নটর ডেম কলেজের দিকে যাওয়ার পথে। পুলিশি ব্যারিকেডের কারণে জামায়াতের নেতাকর্মীরা আরামবাগ মোড় পার হতে পারছিলেন না। পরে সেখানে থাকা পুলিশ বক্সে জামায়াতের প্রতিনিধিদলের সঙ্গে কয়েকদফা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বৈঠক হয়। 

জামায়াতের নেতারা পুলিশকে জানান-তারা শান্তিপূর্ণভাবে সমাবেশ করবেন। এমন আশ্বাসে আরামবাগ মোড়েই জামায়াতকে সমাবেশ করতে দেয়া হয়। বেলা পৌনে একটার দিকে আরামবাগ মোড়ের পুলিশি ব্যারিকেড ভাঙেন জামায়াতের নেতাকর্মীরা। পরে আরামবাগ মোড় থেকে নটর ডেম কলেজ পর্যন্ত এলাকার সড়কে তারা অবস্থান নেন। বেলা ২টা ২০ মিনিটে আরামবাগ মোড়ে মহাসমাবেশ শুরু করে জামায়াত। বেলা ৩টা ১০ মিনিটে সমাবেশ শেষ করে দলটি।