অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করলেন রাষ্ট্রদূত মিলার

সংখ্যালঘু নির্যাতন নিয়ে ট্রাম্পের কাছে ডাহা মিথ্যাচার!

সংখ্যালঘু নির্যাতন নিয়ে ট্রাম্পের কাছে ডাহা মিথ্যাচার!

নিজ দেশে সংখ্যালঘু নির্যাতন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছে ডাহা মিথ্যাচার করেছেন বাংলাদেশের প্রিয়া সাহা। দেশ নিয়ে এমন বানায়োট, আজগুবি আর বিভ্রান্তিমূলক অভিযােগে হতবাক হয়েছে পুরো দেশবাসী। ঘৃণা আর ক্ষোভের প্রকাশ্য স্ফূরণ দেখা যাচ্ছে সামাজিক যোগাযাগ মাধ্যমগুলোতে। প্রিয়ার এই দেশ বিদ্বেষী আচরণ স্বাভাবিকভাবে নিতে পারছেননা কেউই।

সাম্প্রদায়িক নিপীড়নের শিকার বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিদের সঙ্গে হোয়াইট হাউসে গত ১৭ জুলাই মতবিনিময় করেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। তাঁর সাথে দেখা করেন চীন, তুরস্ক, কোরিয়া, মিয়ানমারসহ বিশ্বের ১৭টি দেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ব্যক্তিরা। সেখানে প্রিয়া সাহা প্রেসিডেন্টকে উদ্দেশ্য করে বলেন, "স্যার, আমি বাংলাদেশ থেকে এসেছি। সেখানকার ৩ কোটি ৭০ লাখ সংখ্যালঘু হিন্দু, বৌদ্ধ ও খ্রিস্টান ‘গুম’ হয়ে গেছে। দয়া করে বাংলাদেশি জনগণকে সাহায্য করুন। আমরা দেশে থাকতে চাই।"

একেতো পুরো মিথ্যা তার উপর ৩ কোটি ৭০ লাখ সংখ্যালঘু গুম হবার তথ্য তিনি কোথায় পেলেন তা নিয়ে জনমনে প্রশ্ন জেগেছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কেউ কেউ বলছেন "নিজ দেশকে তিনি এতো নিচে কীভাবে নামালেন?", "তিন কোটি মানুষ গুম হবার উদ্ভট তথ্য কই পেলেন?"

তবে কথিত এই প্রিয়া সাহার বক্তব্যের সঙ্গে স্পষ্টতই দ্বিমত পোষণ করেছেন ঢাকায় নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত রবার্ট মিলার। এ অভিযোগ নাকচ করে দিয়ে শুক্রবার বিকালে সাংবাদিকদের মিলার বলেন, "প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কাছে বাংলাদেশি নারী যে বক্তব্য দিয়েছেন তা সঠিক নয়।

বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থান ঘুরে বেড়ানোর কথা জানিয়ে মিলার বলেন, বাংলাদেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রতি প্রশংসা পাওয়ার যোগ্য।"

কি বলেছিলেন প্রিয়া সাহা

সাহা: স্যার, আমি বাংলাদেশ থেকে এসেছি।সেখানকার ৩ কোটি ৭০ লাখ সংখ্যালঘু হিন্দু, বৌদ্ধ ও খ্রিস্টান ‘গুম’ হয়ে গেছে। দয়া করে বাংলাদেশের জনগণকে সাহায্য করুন। আমরা দেশে থাকতে চাই।

ট্রাম্প: বাংলাদেশ?

সাহা: এখনও সেখানে ১ কোটি ৮০ লাখ সংখ্যালঘু মানুষ থাকে। আমার অনুরোধ, দয়া করে আমাদের সাহায্য করুন। আমরা দেশ ছাড়তে চাই না। প্রেসিডেন্ট, আমাদের সহযোগিতা করুন।

আমি আমার বাড়ি হারিয়েছি। তারা বাড়ি পুড়িয়ে দিয়েছে। আমার জমি ছিনিয়ে নিয়েছে। কিন্তু কোনও বিচার হয়নি।

ট্রাম্প: কে জমি দখল করেছে? কে বাড়ি আর জমি দখল করে নিয়েছে?

সাহা: মৌলবাদি গোষ্ঠীরা। তারা সবসময়ই রাজনৈতিক আশ্রয় পাচ্ছে।

কে এই প্রিয়া সাহা

দেশ নিয়ে বাইরের দেশে এমন ডাহা মিথ্যাচারে এক হয়ে নিন্দা আর প্রতিবাদে সমবেত হয়েছে ধর্ম-বর্ণ-নির্বিশেষে সকল মানুষ। প্রশ্ন উঠেছে কে এই প্রিয়া সাহা। কীভাবে তিনি সুযোগ পেলেন এমন মিথ্যাচারের। আর এর পেছেন কারাই বা কলকাঠি নাড়লো।

জানা গেছে ‘শারি’ নামে বাংলাদেশের দলিত সম্প্রদায় নিয়ে একটি এনজিওর পরিচালক হলেন প্রিয়া সাহা ওরফে প্রিয়া বালা বিশ্বাস। এছাড়া তিনি বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক।

তার বাবার বাড়ি পিরোজপুরের নাজিরপুর উপজেলার চরবানিয়ারী গ্রামে। শ্বশুর বাড়ি বৃহত্তর যশোরে। প্রিয়ার স্বামী মলয় কুমার সাহা দুদকের সদর দফতরে উপপরিচালক পদে কর্মরত রয়েছেন। তার দুই মেয়ে প্রজ্ঞা পারমিতা সাহা ও ঐশ্বর্য লক্ষ্মী সাহা যুক্তরাষ্ট্রে পড়াশুনা করেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চলতি বছরের শুরুতে চরবানিয়ারীতে প্রিয়ার ভাই জগদীশ চন্দ্র বিশ্বাসের একটি অব্যবহৃত ঘরে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। তখন অভিযোগ ওঠে, পাশের বাগেরহাট জেলার চিতলমারী উপজেলার চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা মুজিবুর রহমান শামীম ঘরটি রাতের আঁধারে পুড়িয়ে দিয়েছেন। সঙ্গে একটি মন্দিরে আগুন দেওয়ার চেষ্টা করা হয়। সেখানে শামীমের একটি মাছের ঘের রয়েছে। তখন পাল্টা অভিযোগ ওঠেছিল শামীমেরও তিনটি ঘর আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া হয় চিতলমারী এলাকায়।

পুলিশসহ প্রশাসন এবং পিরোজপুর ও নাজিরপুরের সাংবাদিকরা ঘটনাস্থলে বারবার গিয়ে অনুসন্ধান করে তখন ঘটনার কূলকিনারা পাননি। একপর্যায়ে ঘটনাটি আলোচনার বাইরে চলে যায়। ঘটনাটি নাটক বা সাজানো বলে প্রতিষ্ঠিত হয় পিরোজপুরে। তবে প্রশাসন ও স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তিরা হস্তক্ষেপ করায় পরবর্তীতে ঘটনার বিস্তার ঘটেনি বলে জানান স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা কাজী মোসলেম।

ঘনিষ্ঠ সূত্রে জানা গেছে, হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতি অ্যাডভোকেট রানা দাস গুপ্ত অসুস্থ থাকায় গত মঙ্গলবার রাতে প্রিয়া সাহা সংগঠনের প্রতিনিধি হয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সাক্ষাতের উদ্দেশ্যে ঢাকা ত্যাগ করেন। এরপর গত বুধবার ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে দেখা করেন।

বক্তব্যের প্রতিবাদ

প্রিয়া সাহার এমন বক্তব্যে ক্ষুব্দ হয়েছেন দেশের প্রতিটি মানুষ। সাধারণ মানুষ সামাজিক যোগাযােগমাধ্যমসহ নানানভাবে তাদের প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করছেন। দাবি উঠেছে এমন গুরুতর মিথ্যাচারের জন্য প্রিয়ার সাহার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের।

নির্যাতনের এমন ডাহা মিথ্যা অভিযোগ প্রত্যাখান করে ঢাকায় নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্র দূত রবার্ট মিলার বলেন, "প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কাছে বাংলাদেশি নারী যে বক্তব্য দিয়েছেন তা সঠিক নয়। বাংলাদেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রতি প্রশংসা পাওয়ার যোগ্য।"

এ ব্যাপারে বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রানা দাশ গুপ্ত বলেন, "প্রিয়া সাহা ঐক্য পরিষদের একজন সাংগঠনিক সম্পাদক। কিন্তু তিনি যে বক্তব্য দিয়েছেন তা একান্তই তার নিজের। এ বক্তব্য হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের নয়। তিনি বলেন, প্রিয়া সাহা সংগঠনের পক্ষ থেকেও আমেরিকায় যাননি। এ ব্যাপারে সংগঠন কিছুই জানে না।"

প্রসঙ্গত, স্টেট ডিপার্টমেন্ট কর্তৃক আয়োজিত ধর্মীয় স্বাধীনতা বিষয়ক সম্মেলনে বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের হয়ে ওয়াশিংটন সফর করছেন প্রিয়া সাহা। এই প্রতিনিধি দলের নেতৃত্বে রয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আবদুল মোমেন।

জিএস/