যুক্তরাজ্যের আইনে যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন, একযোগে কাজ করার অঙ্গীকার

অবরোধের মুখোমুখি মানবাধিকার লংঘনকারি ক্ষমতাধররা

অবরোধের মুখোমুখি মানবাধিকার লংঘনকারি ক্ষমতাধররা

বিশেষ সংবাদদাতা

পৃথিবীর নানাপ্রান্তে মানবাধিকার লংঘনকারি ক্ষমতাধররা এবার যুক্তরাজ্যের অবরোধের মুখোমুখি হতে যাচ্ছেন।

যুক্তরাজ্য সরকারের নতুন আইন "গ্লোবাল হিউম্যান রাইটস সেনকশন রেগুলেশন ২০২০" এর আওতায় এই খড়গের মুখোমুখি হতে যাচ্ছেন মানবাধিকার লংঘনকারীরা। দেশটির ইতিহাসে এই প্রথম বারের মতো মানবাধিকার লংঘন এবং অবমাননার দায়ে নতুন এই কড়া আইনটি তৈরি করা হয়েছে। আইনটি বাস্তবায়নে মিত্র শক্তি যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে স্বাধীনভাবে কাজ করবে যুক্তরাজ্য।

নতুন আইনরে খড়গে পড়তে পারে বাংলাদেশের মানবাধিকার লংঘনকারীরা। দেশে চলমান এবং ঘটে যাওয়া বিচারবর্হিভূত হত্যাকান্ড, গুম এবং নির্যাতনকে এর মূল কারণ হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।

যুক্তরাজ্যের নতুন আইন অনুসারে দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী একজন কতগুলো বিষয় বিবেচনা সাপেক্ষে মানবাধিকার লংঘনাকারি হিসেবে বিবেচনা করতে পারেন। যেমন-

-"যিনি এসব (মানবাধিকার লংঘন) কাজের জন্য দায়ী অথবা এসব কর্মকান্ডে সম্পৃক্ত।"
-"সুবিধা দেওয়া, উস্কানো, উৎসাহ যুগানো অথবা এসব কাজে সমর্থন দেয়া।" অথবা

-"এধরণের কর্মকান্ডগুলো গোপন করা।" অথবা
-"ফান্ড গঠন করে সহজে সহায়তা দেয়া, যেটি এই কাজে সহযোগিতা করবে।" অথবা

-"আর্থিকভাবে লাভবান হওয়া কিংবা অন্য কোনোধরণের সুবিধা নেয়া, সুযোগ নেয়া,"অথবা
-"এধরণের কাজে জড়িত থাকার জন্য তদন্তে কিংবা বিচারকার্যের আওতায় আসা এবং উদ্দেশ্যমূলকভাবে এবং দায়সারাভাবে ব্যর্থ প্রমাণিত হওয়া।"

যুক্তরাজ্যের নতুন আইন অনুসারে যদি কোন ব্যক্তি কারো পক্ষে কিংবা নির্দেশনামতে যিনি এ ধরনের (মানবাধিকার লংঘন) কাজে সম্পৃক্ত তার কথামতো কাজ করেন তাকেও দায়ী করা যাবে।

এটা খুবি স্পষ্ট যে বাংলাদেশের একটি উল্লেখযোগ্য সংখ্যা যুক্তরাজ্যের নতুন আইনের আওতায় অভিযুক্ত হতে পারেন। তাতে নাম আসতে পারে বাংলাদেশের ক্ষমতাসীন কর্তাব্যক্তিদের। কারণ তাদের নিদের্শনামতেই আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর সদস্যরা গুম এবং বিচারবর্হিভূত হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটিয়ে থাকে।

আওয়ামী লীগ ২০০৯ সাল থেকে ক্ষমতায় আসীন হবার পর থেকে তাদের শাসনকালীন সময়ের বিভিন্ন মেয়াদে ৫০০ এর অধিক মানুষ জোরপূর্বক গুমের শিকার হয়েছে। তারা কোথায় রয়েছে সে খবর কেউ জানেনা।

নতুন আইন প্রসঙ্গে যুক্তরাজ্যের সেক্রেটারি অব স্টেট ডিমিনিক রাব বলেন, "সাম্প্রতিক সময়ে জঘন্যতম মানবাধিকার লংঘন কর্মকান্ডে সম্পৃক্ত থাকার দায়ে আমরা ৪৯ ব্যক্তি এবং সংগঠনকে এই কড়া আইনের আওতায় এনে অবরোধ আরোপ করেছি।নতুন আইনে তারা এই প্রথম সাজার মুখোমুখি হলো। আগামী মাসগুলোতে আরো অবরোধ আরোপ করা হবে।"

রাশিয়ান নাগরিক সারগেই ম্যাগনিস্কির মৃত্যুর দায়ে দেশটির ২৫ নাগরিক, জামাল খাসোগি হত্যার জন্য ২০ সৌদি নাগরিক, রোহিঙ্গা এবং অন্যান্য নৃগোষ্ঠী জাতির উপর নৃশংস নির্যাতন করায় মিয়ানমারের দুই শীর্ষ কর্মকর্তা, শ্রমিকদের দিয়ে জোরপূর্বক কাজ, নির্যাতন এবং খুনে জড়িত থাকায় উত্তর কোরিয়ার দুই সংগঠনের বিরুদ্ধে যুক্তরাজ্যের প্রথম অবরোধ আরোপ করা হয়েছে।

এদিকে, যুক্তরাজ্যের নতুন এই আইনকে সাধুবাদ জানিয়ে দেশটির পাশে থাকার অঙ্গীকার করেছে যুক্তরাষ্ট্র।

স্টেট ডিপার্টমেন্টের দেয়া এক বিবৃতিতে যুক্তরাষ্ট্র পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও বলেন, "অবরোধ আরোপে যুক্তরাজ্যের এই নীতি দেশটির ইতিহাস এবং দুই দেশের গণতন্ত্রের সহযোগিতায় এক নতুন দিগন্তের সূচনা করেছে।"

তিনি বলেন, "গ্লোবাল হিউম্যান রাইটস সেনকশন রেগুলেশন ২০২০ আইনের মাধ্যমে নতুন এক অর্থনৈতিক শক্তির সন্ধান পাবে যুক্তরাজ্য যেটি বিশ্বে মানবাধিকার লংঘনের ঘটনাগুলোকে জবাবদিহিতার আওতায় নিয়ে আসবে।"

পম্পেও আরো বলেন, "যুক্তরাজ্যের নতুন আইন কানাডা এবং যুক্তরাষ্ট্রের জন্য সহায়ক হবে। আর এটি একত্রে কাজ করার শক্তি আরো বাড়িয়ে দেবে।"

তিনি বলেন, "যুক্তরাষ্ট্র এবং আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রের অর্থ ব্যবস্থায় সকল মানবাধিকার লংঘনকারীদের সুবিধা প্রদানে বাধা আরোপে যেটুকু দ্বিমত রয়েছে তা নিরসনে মিত্র এবং সহযোগি বাড়ানোর প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখবে যুক্তরাষ্ট্র।"

জিএস/