আইএসপিআর’র বিবৃতির ব্যাখা চাইলেন ফারজানা ব্রাউনিয়া

‘কিছু বিকৃত রুচির মানসিকতার বহিঃপ্রকাশ’

‘কিছু বিকৃত রুচির মানসিকতার বহিঃপ্রকাশ’

আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) বিবৃতিকে 'সেনাবাহিনীর অভ্যন্তরে কিছু বিকৃত রুচির মানসিকতার বহিঃপ্রকাশ' বলে মন্তব্য করেছেন উপস্থাপিকা ও সংগঠক ফারজানা ব্রাউনিয়া। একইসঙ্গে তিন বাহিনীর মুখপাত্র এই সংগঠনটিকে একজন নারীর প্রতি অবমাননাকর উক্তির কারণ দ্রুত ব্যাখা করার দাবি জানিয়েছেন তিনি।

আইএসপিআর পাঠানো এক বিবৃতির প্রতিক্রিয়ায় সোমবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে এই অভিমত এবং দাবি তুলে ধরেন ফারজানা ব্রাউনিয়া।

ফারজানা ব্রাউনিয়া লে. জে. (অব.) চৌধুরী হাসান সারওয়ার্দীর স্ত্রী। সরকার ও সেনাপ্রধানের সমালোচনা করে ১৪ জুলাই নিউইয়র্ক নির্বাসিত সাংবাদিক কনক সারওয়ারের সাথে ফেসবুকে একটি সাক্ষাতকার দেন সারওয়ার্দী। সাক্ষাতকারে কথা বলেন ক্ষমতাসীন সরকার, সেনাবাহিনী প্রধান, জাতীয় নির্বাচন নিয়ে কেলেংকারি, গুম-খুনের ভয়াবহ সন্ত্রাস আর প্রতিবেশী দেশ ভারতের এদেশের ইস্যুতে সরাসরি হস্তক্ষেপের মতো নানান স্পর্শকাতর বিষয় নিয়ে। আর তার পর থেকেই নিজের জীবন নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।

মূলত এ সাক্ষাতকার প্রকাশের পর রবিবার লে. জে. (অব.) সারওয়ার্দীকে সব সেনানিবাস এলাকায় অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে গণমাধ্যমে একটি বিবৃতি প্রকাশ করে আইএসপিআর। আর তাতে ফারজানা ব্রাউনিয়া প্রসঙ্গ নিয়ে আসা হয়।

বিবৃতিতে ফারজানা ব্রাউনিয়াকে 'বিতর্কিত নারী' হিসেবে মন্তব্য করা হয়।

এ প্রসঙ্গটি টেনে আইএসপিআর-এর দেয়া বিবৃতিতে বলা হয়, "তিনি (সারওয়ার্দী) এনডিসিতে পরিচালিত বিভিন্ন কোর্সের সাথে বিদেশে ভ্রমণকালেও অনেক মেয়েকে নিয়ে চলাফেরা করেন এবং বিভিন্ন মাধ্যমে তার এই অশোভনীয় আচরণ এবং মেলামেশার ছবি কর্তৃপক্ষের গোচরীভূত হলে কর্তৃপক্ষ বিব্রত হয় এবং তাকে বিভিন্নভাবে উপদেশ দেয়া হয়। তিনি এলপিআর এ থাকাকালীন কর্তৃপক্ষের অনুমতি ব্যতিরেকে ১৬ আগস্ট ২০১৮ তারিখে প্রথম স্ত্রীকে তালাক প্রদান করেন এবং সেনা আইন বর্হিভূতভাবে মেসকিট (সামরিক পোষাক) পরে ২১ নভেম্বর ২০১৮ তারিখে কর্তৃপক্ষের অনুমতি ব্যতিত দ্বিতীয় স্ত্রীকে বিবাহ করেন। কিন্তু তিনি বিবাহের পূর্বে ফারজানা ব্রাউনিয়া’কে নিয়ে ০৩ নভেম্বর ২০১৮ থেকে একই বাসায় অনৈতিকভাবে অবস্থান করেন। এমনকি তিনি বিবাহের পূর্বে ফারজানা ব্রাউনিয়া’কে সাথে নিয়ে পহেলা বৈশাখ উদ্যাপন, সাজেক রিসোর্ট, খাগড়াছড়ি’তে অবকাশ যাপন, বিভিন্ন সময় ভারত, থাইল্যান্ড, আইসল্যান্ড, নরওয়ে ও সুইজারল্যান্ডে ভ্রমণ ও অবস্থান করেন, যার সচিত্র আলামত সামরিক ও অসামরিক পরিমন্ডলে এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপকভাবে সমালোচিত হয়। এছাড়াও তিনি যাকে বিয়ে করেন সে একজন বিতর্কিত নারী হিসেবে পরিচিত।"

বিবৃতি নিয়ে নিজের ক্ষোভ প্রকাশ করে ফারজানা ব্রাউনিয়া বলেন, "আইএসপিআর থেকে দেয়া বিবৃতিটি দেখে আমি ভীষণভাবে মর্মাহত, যেখানে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে প্রকৃত বিষয়েক ভিন্নভাবে প্রকাশ এবং ব্যক্তিগতভাবে একজন নারী হিসেবে আমাকে অবমাননা করা হয়েছে।"

বিবৃতিতে আনা অভিযোগ খন্ডন করে এবং নিজেকে একজন সাবেক সেনাকর্মকর্তার সন্তান উল্লেখ করে বিবৃতিতে তিনি আরো বলেন, "উক্ত বিবৃতির একাংশে বলা হয়েছে এছাড়াও তিনি (লে. জে. চৌধুরী হাসান সারওয়ার্দী (অব.), বীর বিক্রম) যাকে (ফারজানা ব্রাউনিয়া) বিয়ে করেন সে একজন বিতর্কিত নারী হিসেবে পরিচিত। আমি ফারজানা ব্রাউনিয়া একজন সাবেক সেনা কর্মকর্তার সন্তান, একজন নারী সংগঠক হিসেবে দেশের লক্ষ লক্ষ নারীর অধিকার, সুস্বাস্থ্য তথা মানবাধিকার উন্নয়নে সুনামের সাথে কাজ করছি। আমি লে. জে. চৌধুরী হাসান সারওয়ার্দী (অব.), বীর বিক্রম-এর ধর্ম ও আইনসম্মত সহধর্মিনী। ২০১৮ সালের নভেম্বর মাসে উভয় পরিবারের সম্মতি ও সামরিক, বেসামরিক সকলের উপস্থিতিতে সামাজিক আচার অনুষ্ঠানের মাধ্যমে আমাদের বিবাহ অনুষ্ঠিত হয়। সেনাবাহিনীর নিয়ম মোতাবেক সংশ্লিষ্ট সকল বিভাগকে যথাসময়ে এ বিষয়ে জানানো হয়েছে।"

বিবৃতির কড়া প্রতিবাদ জানিয়ে ফারজানা বলেন, "আইএসপিআর- এর এই বিবৃতি দেখে সেনাবাহিনীর অভ্যন্তরে কিছু বিকৃত রুচির মানসিকতার বহিঃপ্রকাশ ঘটে যা নারীর জন্য অবমাননাকর। নারীর প্রতি অবমাননাকর আচরণ প্রতিহত করতে বিশ্বের বহু দেশের পাশাপাশি বাংলাদেশও সাক্ষর করেছে সিডর সনদে। তাহলে আমার এই বীর সেনা বোনেরা কতটুকু সম্মান পাবেন তা নিয়ে প্রশ্ন উত্থাপিত হতে পারে।"

তিনি বলেন, "বাংলাদেশ সেনাবাহিনী এদেশের গর্ব যার জন্ম হয়েছে মহান মুক্তিযুদ্ধের যুদ্ধক্ষেত্রে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান-এর আদর্শ বক্তব্যে জেনেছি যে- সেনাবাহিনী হচ্ছে জনগণের বন্ধু।"

আইএসপিআর- এর এরকম বিবৃতি প্রত্যাশিত নয় উল্লেখ করে তিনি বিবৃতিতে বলেন, "আইএসপিআর সম্মানসূচক তিনটি বাহিনীর মুখপাত্র বলে তাদের কার্যক্রম খুবই স্পর্শকাতর। এই সংগঠন কখনই নারীর প্রতি অবমাননাকর, সহিংস এই বক্তব্য দিতে পারেনা।"

ফারজানা বলেন, এদেশের একজন নাগরিক হিসেবে আমার সাংবিধানিক অধিকারের ভিত্তিতে এই বিবৃতির বিশেষ অংশে উল্লেখিত "বিতর্কিত নারী" শব্দের ব্যবহারের মাধ্যমে নারীর প্রতি অবমাননা, সহিংসা প্রকাশের তীব্র নিন্দা, ঘৃণা ও প্রতিবাদ জানাই।

বিবৃতিটির ব্যাখা দাবি করে ফারজানা বলেন, "আইএসপিআর একটি সম্মানজনক সংগঠন এবং তার সম্মান অক্ষুন্ন রাখতে নারী জাতির প্রতি শ্রদ্ধা প্রকাশ করে তাদেরকে অনতিবিলম্বে উপর্যুক্ত ব্যাখা প্রদানের জন্য অনুরোধ করা হলো।"

এসএস/