নির্বাচনে হারার ভয়ে ট্রাম্পের ইউটার্ন!

নির্বাচনে হারার ভয়ে ট্রাম্পের ইউটার্ন!

মুশফিকুল ফজল আনসারী

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনকে সামনে রেখে চলছে ১০০ দিনের কাউন্টডাউন। রাজনৈতিক প্রচারণা, বাকযুদ্ধ যাই হয়েছে এতোদিন এখন সাবধানে পা ফেলার সময়। নির্বাচন সামনে রেখে এখন অনেকটাই কৌশলী ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। চেষ্টা করছেন পুননির্বাচিত হয়ে আবারো গদিতে বসতে। কিন্তু জনমত জরিপ, বিশ্লেষক, আর দর্শক সারির পর্যবেক্ষকরা বলছেন গদিতে বসতে ট্রাম্পের বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে করোনাভাইরাস মহামারির ধাক্কা। পারবেন নাকি ধরাশয়ী হবেন, এ নিয়েই চলছে যুক্তরাষ্ট্র নির্বাচনের যোগ-বিয়োগ!

৭৪ বছর বয়সী এই প্রেসিডেন্ট নানা ইস্যুতে যেমন আলোচিত-সমালোচিত তেমনি বিতর্কের বাইরে যেতে পারেননি করোনা ভাইরাস মহামারির মতো বিপদের এসময়টাতেও। বিষয়টাতে অনেকটা খাম খেয়ালির পরিচয় দিয়ে আবারো বিতর্ক উসকে দিয়েছেন ট্রাম্প নিজেই। অনকেটা তীরে এসে তরী ডুবিয়েছেন। আর এই ইস্যুসহ ট্রাম্প প্রশাসনের ব্যর্থতার খতিয়ান মাঠে তুলে ধরে জোর প্রচারণা চালাচ্ছেন তার বিরোধী ডেমোক্রেট দলীয় প্রার্থী জো বাইডেন।

যুক্তরাষ্ট্রে যেসব জনমত জরিপ হচ্ছে তাতে শুধু অবনতির চিত্রই দেখা যাচ্ছে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের জনপ্রিয়তা এখন তলানিতে। প্রত্যেকটি জরিপে ভাইস প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের চেয়ে ডাবল ডিজিট পেছনে পড়ে আছেন তিনি। এমনকি তার প্রিয় টিভি নেটওয়ার্ক ফক্স নিউজের জরিপেও উঠে এসেছি একই চিত্র।

করোনাভাইরাসে এ পর্যন্ত ৪১ লাখের মতো লোক আক্রান্ত হয়েছে। প্রতিদিন মারা যাচ্ছে ১,০০০ এর বেশী লোক। এখন পর্যন্ত মৃত্যুর সংখ্যা ছাড়িয়েছে ১ লাখ ৫০ হাজার। প্রতিদিন নতুন নতুন এলাকা সংক্রমিত হচ্ছে। আর এ অবস্থাতে এখন আগের সুর পাল্টেছেন ট্রাম্প।

সম্প্রতি এক সংবাদ সম্মেলনে ট্রাম্প বলেছেন, ‘ভালো অবস্থায় যাবার পূর্বে, সম্ভবত এবং দুর্ভাগ্যজনকভাবে আমরা একটা খারাপ পরিস্থিতির মুখোমুখি হচ্ছি। বিষয়টা নিয়ে আমি কথা বলতে চাইনা কিন্তু আসলে তাই ঘটছে।’

গত ২১ জুলাই নিজের প্রচারণা শিবিরের লোকজনের পরামর্শেই ট্রাম্প অবস্থান পরিবর্তন করেছেন। যুক্তরাষ্ট্রের গণমাধ্যমগুলো তা ফলাও করে প্রচার করছে এখন। খবরে বলা হচ্ছে, নিজের প্রচারণা শিবিরের সঙ্গে জরুরি বৈঠক করেছেন ট্রাম্প। তাদের পরামর্শেই ট্রাম্প করোনা মোকাবিলায় নিজেকে সিরিয়াস দেখানোর প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন। অথচ একসময় মাস্ক পরার দরকার নেই, করোনাভাইরাস সিরিয়াস কিছুনা-এমন একটা গা-ভাসা ভাব ছিলো তার।

৩ নভেম্বরের নির্বাচনে খুব একটা লম্বা সময় হাতে নেই ট্রাম্পের। ইলেকটোরাল কলেজের হিসেবেও পিছিয়ে ট্রাম্প। আবারো নির্বাচিত হতে হলে পেনসিলভানিয়া, মিশিগান, মিনেসোটাসহ কিছু অঙ্গরাজ্যে ট্রাম্পকে অবশ্যই জয় পেতে হবে। সেসব রাজ্যেও তার অবস্থান ভালো নেই।

ট্রাম্পকে নিজের অবস্থান নিয়ে ঐ প্রচারণা মিটিংয়ে সতর্ক করেছেন তার উপদেষ্টারা। বলেছেন একি ভুলের পুনরাবৃত্তি না ঘটাতে। গত জুন মাসেও যুক্তরাষ্ট্রের স্বাস্থ্য খাতের বেহালদশা যে শতাব্দির সবচাইতে বাজে রেকর্ড তা মানতে নারাজ ছিলেন প্রেসিডেন্ট। বরং প্রচার করেছেন অতিরিক্ত টেস্ট করার কারণেই নাকি করোনা সংক্রমণ সংখ্যা কৃত্রিমভাবে বাড়ছে! অথচ এ সপ্তাহেই জরিপে ধস আর সতীর্থদরে সতর্কবার্তা পেয়ে করোনাভাইরাস নিয়ে নিজের প্রাণপণ চেষ্টার বিষয়টি জনগণকে বুঝাতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন ট্রাম্প।

মাস্ক ব্যবহার নিয়ে পূর্বের কথা থেকে সরে এসে যুক্তরাষ্ট্রবাসীকে আহবান জানাচ্ছেন মাস্ক পরিধান করতে আর নিজের সঙ্গে রাখছেন নেভী-ব্লু রংয়ের মাস্ক।বৃহস্পতিবার বললেন স্কুলগুলো চালু করতে আরো সময়ের প্রয়োজন আছে। ফ্লোরিডার জ্যাকসনভিলে রিপাবলিকান পার্টির কনভেনশন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিলো কিন্তু উপদেষ্টাদের না যাবার পরামর্শ আমলে নিয়ে তিনি তা বাতিল করেন।

ট্রাম্পের একজন উপদেষ্টা সিএনএনকে বলেন, ‘আমি মনেকরি প্রেসিডেন্ট মূল বিষয়টি অনুধাবন করতে শুরু করেছেন। আগামী ১০০ দিন তিনি যদি এ অবস্থান ধরে রাখেন। আমি মনে করি তিনি জিতবেন।’

প্রতিটি জরিপেই মহামারি মোকাবিলায় ট্রাম্পের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকদের অসন্তোষের কথা উঠে আসছে। হোয়াইট হাউসের টাস্ক ফোর্সের সদস্য শীর্ষ সংক্রামকবিশেষজ্ঞ অ্যান্থনি ফাউচির সঙ্গেও তার সম্পর্কের অবনতি হয়েছে বেশ আগে থেকেই। ফাউচি শুরু থেকেই করোনাভাইরাস নিয়ে জনগণকে সতর্ক করে দিচ্ছিলেন। আর প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প উল্টো কথা বলে আসছেন সব সময়। করোনা পরিস্থিতি নিয়ে এপ্রিল মাসেই নিয়মিত প্রেস ব্রিফিংবন্ধ করে দেন ট্রাম্প। এখন মত বদল করে ২১ জুলাই ট্রাম্প বলেছেন, আবার এ নিয়ে নিয়মিত ব্রিফিং করবেন।

এ সপ্তাহে ফক্স নিজের করা কয়েকটি জরিপে দেখা গেছে পেনসিলভানিয়া, মিশিগান, মিনেসোটা অঙ্গরাজ্যে ট্রাম্পের চেয়ে এগিয়ে আছেন বাইডেন। এছাড়া আরেকটি জরিপ চালিয়েছে ওয়াশিংটন পোস্ট-এবিসি নিউজ পোল। জরিপ মতে মহামারি নিয়ে ট্রাম্পের কার্যক্রমে সন্তোষ প্রকাশ করেছে ৩৮ শতাংশ আর অসন্তোষ দেখিয়েছে ৬০শতাংশ মানুষ।

দেশের অভ্যন্তরে পরিচালিত এসব জরিপ আর অন্যান্য হিসেব-নিকেশ কষেই ট্রাম্পের উপদেষ্টারা বলে দিয়েছেন সামনের দিনগুলোতে করোনা ইস্যুকে খুব গুরুত্বের সঙ্গে নিতে। করোনাকে কী ভাবে নিচ্ছেন এর ভিত্তিতেই ট্রাম্পের সামনের দিনগুলোর হিসেব-নিকেষ নির্ভর করছে। মহামারির সময়টাতেই নিজেকে 'যুদ্ধকালীন প্রেসিডেন্ট' ঘােষণা দেয়া ট্রাম্পে উপদেষ্টাদের প্রচারণা বৈঠকে নিজের ব্যর্থতার জায়গাটুকু আঁচ করেত পেরেছেন। করোনা নিয়ে তার অবস্থান পরিবর্তন সেই দিকেই ইঙ্গিত দেয়।

জিএস/