ইউক্রেন ইস্যুতে রাশিয়ার পক্ষে বাংলাদেশের অবস্থান নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের অসন্তোষ

আমরা দেখছি কারা গণতন্ত্রের পক্ষে আর কারা নয়: কংগ্রেসম্যান মিকস

আমরা দেখছি কারা গণতন্ত্রের পক্ষে আর কারা নয়: কংগ্রেসম্যান মিকস

ইউক্রেন ইস্যুতে জাতিসংঘে আনীত রেজুলশনে বাংলাদেশের ভোটদানে বিরত থাকা প্রসঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র কংগ্রেসের পররাষ্ট্র বিষয়ক কমিটির চেয়ারম্যান কংগ্রেসম্যান গ্রেগরি মিকস বলেন, জাতিসংঘের এ ভোটদানের মাধ্যমে পরিস্কার কারা গণতন্ত্রের পক্ষে আর কারা নয়।আমরা অবশ্যই বিষয়টি নজরে নিয়েছি। 

একিসঙ্গে, বাংলাদেশে গণতন্ত্র, ভোট এবং মানবাধিকার ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্র তার নিজের অবস্থানে অনড় বলে জানিয়েছেন কংগ্রেসম্যান গ্রেগরি মিকস। বাংলাদেশে আসন্ন নির্বাচনকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উল্লেখ করে তিনি বলেন, একটি অবাধ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিষয়ে আমাদের নজর থাকবে।


মঙ্গলবার যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থানরত প্রবাসী বাংলাদেশীদের উদ্যোগে কুইন্সের জ্যামাইকায় একটি রেষ্ট্রুরেন্টে আয়োজিত 'মিট এন্ড গ্রিট’ অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন কংগ্রেসম্যান মিকস।

যুক্তরাষ্ট্রের বাংলাদেশি কমিউনিটি নেতা মিজানুর রহমান ভুইয়া মিল্টনের সভাপতিত্বে এবং কমিউনিটি নেতা শাহনেয়াজের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন ওয়াশিংন ভিত্তিক অধিকার সংস্থা রাইট টু ফ্রিডমের নির্বাহি পরিচালক ও জতিসংঘের স্থায়ী সংবাদদাতা মুশফিকুল ফজল আনসারী, রাজনীতিবিদ জিল্লুর রহমান জিল্লু, গিয়াস আহমেদ,জসীম উদ্দীন ভুইয়া, মোহাম্মদ রশিদ, নাহিদুল খান সাহেল, আব্দুস সবুর, মোশাররফ হোসেন সবুজ, মাকসুদুল হক চৌধুরী,  এবাদ চৌধুরী,  আতিকুল হক আহাদ, সাইফুর খান হারুন, ফয়েজ চৌধুরী এবং বদিউল আলম প্রমুখ।

অনুষ্ঠানে বাংলাদেশসহ আরও কিছু দেশের ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসন সমর্থন প্রসঙ্গে কংগ্রেসম্যান মিকস বলেন, "যুক্তরাষ্ট্র এবং একিসঙ্গে আমি পররাষ্ট্র বিষয়ক কমিটির চেয়ারম্যান হিসেবে বিষয়টা পর্যবেক্ষণ করেছি। সতর্কভাবে এটা দেখেছি যে জাতিসংঘে বিভিন্ন দেশ কীভাবে তাদের ভোট দিয়েছে। ১৪৪ টি দেশ রাশিয়ার বর্বর আগ্রাসনের বিপক্ষে ভোট দিয়েছে। চারটি দেশ রাশিয়ার পক্ষে ভোট দিয়েছে। ৩৬ টি দেশ ভোটদানে বিরত থেকেছে। এ ভোটের মাধ্যমে পরিস্কার কারা গণতন্ত্রের পক্ষে আর কারা নয়। আমরা বিষয়টি নজরে নিয়েছি।" 

মিকস তার বক্তব্যে প্রবাসি বাংলাদেশিদের উদ্দেশ্যে বলেন, "আমি সবসময়ই বলে থাকি যুক্তরাষ্ট্র হল গণতন্ত্রের দেশ। আপনারা যারা বাংলাদেশিরা আছেন তারা যুক্তরাষ্ট্রে ইতিহাস এবং সংস্কৃতি সমৃদ্ধ করতে অবদান রাখছেন। এটি যুক্তরাষ্ট্রকে তার অবস্থান দৃঢ় করতে সহায়তা করছে।" 

শক্তিশালী গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় গুরুত্বারোপ করে কংগ্রেসম্যান মিকস বলেন, "সবাই যেটা প্রত্যাশা করে সেটা হচ্ছে শক্তিশালী গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা। এটাই পরিবর্তনের সূচনা বয়ে নিয়ে আসে, নিয়ে আসে মানবাধিকারের মুক্তি। আপনারা যদি পৃথিবীর দিকে তাকান তাহলে দেখবেন মানবাধিকার লংঘনের ঘটনা চলমান। এ অভিযোগগুলো নিয়ে আমাদের কথা বলতে হবে।"

ইউক্রেন প্রসঙ্গে মিকস বলেন, "ইউক্রেনে এখন যা ঘটছে তা আমার বিচারে মানবাধিকারের লংঘন। নিরীহ মহিলা, শিশুসহ মানুষদের নির্বিচারে হত্যা করা হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র এক্ষেত্রে ইউক্রেনকে আত্মরক্ষায় সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছে।"



বাংলাদেশে মানবাধিকার প্রসঙ্গে মিকস বলেন, "বাংলাদেশে আমরা দেখছি একটি পক্ষ মানবাধিকার লংঘনের ঘটনা চালিয়ে যাচ্ছে। একি চিত্র আমরা দেখতে পাই দক্ষিণ আফ্রিকাসহ অন্যান্য দেশের ক্ষেত্রে। যেসমস্ত ব্যক্তিরা এসব মানবাধিকার লংঘনের পেছেন রয়েছেন তাদের বিপক্ষে যুক্তরাষ্ট্রের কিছু সুস্পস্ট বার্তা রয়েছে।"

তিনি বলেন, "বিশ্বের প্রতিটি প্রান্তেই আমরা চাই অবাধ এবং নিরপেক্ষ নির্বাচন হউক। নিরপেক্ষ নির্বাচনের বিষয়টা আসলেই গুরুত্বপূর্ণ। আপনারা বলেছেন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে বিনিয়োগের বড় অংশীদার।এরি ধারাবাহিকতায় দেশটির অর্থনীতি গতিশীল রয়েছে, নিম্ন আয় থেকে মধ্য আয়ের দেশে উন্নীত হয়েছে।"

বাংলাদেশে আরোপ করা যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা নিয়ে মিকস বলেন, "বাইডেন প্রশাসন যখন দেখতে পেলো বাংলাদেশে কিছু অংশ ভুল কাজে জড়িয়ে পড়েছে। তখনি মানবাধিকার লংঘনের দায়ে বিশেষায়িত বাহিনীর উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। গণতন্ত্রে বাংলাদেশ কিছু ক্ষেত্রে অধঃপতনের বৈশিষ্ট্য পরিলক্ষিত হয়েছে।"



বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্র নিরপেক্ষ নির্বাচন চায় উল্লেখ করে মিকস বলেন, "আমরা জানি সামনে একটি জাতীয় নির্বাচন আসন্ন (বাংলাদেশে)। এ নির্বাচনে জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে।"



"গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় কিছু চ্যালেঞ্জ থেকেই যায়। আমি রাজনৈতিক ক্যারিয়ারের শুরু থেকে যুক্তরাষ্ট্রেও এ চ্যালেঞ্জ দেখেছি। বাংলাদেশেও গণতন্ত্রের উত্তরণে চ্যালেঞ্জ রয়েছে। আমাদেরকে নিশ্চিত করতে হবে যে মত প্রকাশের স্বাধীনতা থাকবে, ভোট গ্রহণ হবে অবাধ এবং নিরপেক্ষ। এটি আমরা যুক্তরাষ্ট্রে যেমন চাই তেমনি বাংলাদেশসহ পৃথিবীর সব জায়গায় তা দেখতে চাই।"

এনকে/