সুশীল সমাজের অংশগ্রহণে নিরপেক্ষ নির্বাচনে বাংলাদেশের জনগণ পছন্দের সরকার বেছে নিবে: যুক্তরাষ্ট্রের আশাবাদ

আইনের শাসন এবং মানবাধিকারের সুরক্ষা চায় যুক্তরাষ্ট্র: খালেদা জিয়াকে শেখ হাসিনার হুমকি প্রসঙ্গে নেড প্রাইস

আইনের শাসন এবং মানবাধিকারের সুরক্ষা চায় যুক্তরাষ্ট্র: খালেদা জিয়াকে শেখ হাসিনার হুমকি প্রসঙ্গে নেড প্রাইস

স্টেট ডিপার্টমেন্ট থেকে মুশফিকুল ফজল আনসারী

সরকারকে গণতন্ত্র এবং মানবাধিকার সুরক্ষার তাগাদা দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র বলেছে তারা বাংলাদেশে আইনের শাসন এবং সব নাগরিকের মৌলিক অধিকারের বাস্তবায়ন দেখতে চায়।

সোমবার স্টেট ডিপার্টমেন্টের নিয়মিত ব্রিফ্রিংয়ে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলরত বিরোধী দল বিএনপিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হুমকি প্রসঙ্গে এ মন্তব্য করেন মুখপাত্র নেড প্রাইস। সম্প্রতি বিএনপিকে হুমকি দিয়ে শেখ হাসিনা বলেছেন, বিএনপি আন্দোলনের নামে বাড়াবাড়ি করলে খালেদা জিয়াকে আবারো জেলে পাঠানো হবে।

বাংলাদেশের আগামী জাতীয় নির্বাচন প্রসঙ্গে স্টেট ডিপার্টমেন্টের এই মুখপাত্র বলেন, জনগণকে নিজেদের পছন্দের সররকারকে বেছে নেওয়ার সুযোগ তৈরি করে দিতে হবে। আগামী নির্বাচন হতে হবে অবাধ ও নিরপেক্ষ। আমরা আশা করি সুশীল সমাজের ব্যাপক ভিত্তিক অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে একটি অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে বাংলাদেশের জনগণ তাদের পছন্দের সরকার বেছে নিতে পারবে।

একিসঙ্গে বিরোধীদলের আন্দোলনে কোনো ধরনের ভীতি প্রদর্শন কিংবা বাধা প্রাদান না করে শান্তিপূর্ণ পন্থায় হাঁটতে সরকারকে যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসনের পররাষ্ট্রনীতির বার্তার কথা মনে করিয়ে দিয়েছেন নেড প্রাইস।

ব্রিফ্রিংয়ে বাংলাদেশের চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর হুমকি দেবার প্রসঙ্গ উত্থাপন করে স্টেট ডিপার্টমেন্ট সংবাদদাতা মুশফিকুল ফজল আনসারী জানতে চান, "বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্তে লাখো মানুষ নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে বিক্ষোভ করছে। ক্ষমতাসীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইতিমধ্যে হুমকি দিয়ে বলেছেন বিএনপি যদি আন্দোলনের নামে বেশী বাড়াবাড়ি করে তাহলে বিরোধী দলীয় নেত্রী খালেদা জিয়াকে আবার জেলে পাঠানো হবে। ৭৭ বছর বয়সী সাবেক এ প্রধানমন্ত্রীকে শর্তারোপ করে বাসায় থাকার অনুমতি দেয়া হয়েছে। স্টেট ডিপার্টমেন্টের মানবাধিকার রিপোর্টেও বলা হয়েছে যে, খালেদা জিয়াকে রাজনীতি থেকে দূরে রাখতে এ মামলাটা এক ধরনের ষড়যন্ত্র। এবিষয়ে আপনার মন্তব্য কী?"

জবাবে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতির অবস্থান স্পষ্ট করে নেড প্রাইস বলেন, "বিশ্বজুড়ে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতির কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে গণতন্ত্র এবং মানবাধিকার। এবিষয়গুলো নিয়ে আমরা সবসময় প্রকাশ্যে কথা বলে আসছি।"

বাংলাদেশের ক্ষমতাসীন সরকারকে আইনের শাসন এবং মানবাধিকারের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হবার আহবান জানিয়ে স্টেট ডিপার্টমেন্টের এই মুখপাত্র বলেন, "যেসব দেশের সরকারের সঙ্গে আমরা এ ইস্যুতে কথা বলেছি তার মধ‌্যে বাংলাদেশ রয়েছে। এর মাধ্যমে আমরা গণতন্ত্র, সংবিধানকে শক্তিশালী করা, আইনের শাসন এবং সকল বাংলাদেশিদের মানবাধিকারের সুরক্ষায় গুরুত্ব দিচ্ছি। এর আগেও আমি একি বিষয়ে আমাদের অবস্থান তুলে ধরেছি।আমি এখানেও বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক অধিকার নিয়ে কথা বলেছি। আবার দ্বিপক্ষীয় পর্যায়ের সরকারের সাথে আলোচনার সময়ও এ বিষয়গুলো উত্থাপন করা হয়েছে। "

তিনি বলেন, "আমাদের এই আহবান জানানোর উদ্দেশ্য হলো যাতে করে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া শক্তিশালী হয়। যার মধ্যে রয়েছে সংবিধান, আইনের শাসনের বাস্তবায়ন, মানবাধিকারের সুরক্ষা এবং বাংলাদেশের সব মানুষের মৌলিক অধিকারের বাস্তবায়ন।"

নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের বার্তার জানান দিতে নেড প্রাইস বলেন, "বাংলাদেশে রাজনৈতিক প্রক্রিয়া এবং পরবর্তী নির্বাচনের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে, আমরা একটি শক্তিশালী নাগরিক অংশগ্রহণের প্রত্যাশা করি এবং আশা করি, বাংলাদেশের জনগণ শেষ পর্যন্ত অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে তাদের নিজস্ব সরকার নির্বাচন করতে সক্ষম হবে। বাংলাদেশ সরকারকে সে বিষয়টির দিকেই আহবান জানাচ্ছি।"

বিরোধী দলের ওপর চলমান নিপীড়ন থামানোর আহবান জানিয়ে নেড প্রাইস বলেন, "আমরা বাংলাদেশের সরকারকে বলবো বিরোধীদলের উপর বলপ্রয়োগ বন্ধ করা এবং বাধা ছাড়া মুক্তসমাবেশের সুযোগ করে দিতে যেনো তারা তাদের উদ্বেগের কথা স্বাধীনভাবে প্রকাশ করতে পারে।"

এমএন/