স্টেট ডিপার্টমেন্ট ব্রিফ্রিংয়ে সময় টিভির বিকৃত রিপোর্ট, মুখপাত্রের বক্তব্য ভুলভাবে উপস্থাপন প্রসঙ্গ

উদ্বেগ নিয়ে কথা বলা হস্তক্ষেপ নয়: শেখ হাসিনার সমালোচনার জবাবে যুক্তরাষ্ট্র

উদ্বেগ নিয়ে কথা বলা হস্তক্ষেপ নয়: শেখ হাসিনার সমালোচনার জবাবে যুক্তরাষ্ট্র

মুশফিকুল ফজল আনসারী, স্টেট ডিপার্টমেন্ট সংবাদদাতা

উদ্বেগের বিষয়গুলো নিয়ে মিত্র কিংবা অংশীদার দেশগুলোর সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র সত্যিকারের যে সংলাপ করে থাকে সেটা হস্তক্ষেপ নয় বলে মন্তব্য করেছেন স্টেট ডিপার্টমেন্টের প্রধান উপমুখপাত্র ভেদান্ত প্যাটেল।

এদিকে, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে একটি অবাধ এবং নিরপেক্ষ  নির্বাচন চায় বলে জানিয়েছেন এই মুখপাত্র, যেমনটি চাওয়া হয় বিশ্বের অন্যান্য দেশের ক্ষেত্রে।  পাশাপাশি নির্বাচন আয়োজন যেনো নিরপেক্ষ হয় সে প্রত্যাশা দেশটির।

মঙ্গলবার স্টেট ডিপার্টমেন্টের নিয়মিত ব্রিফ্রিংয়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া সমালোচনা করে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সংসদে দেয়া ভাষণ প্রসঙ্গে প্রধান উপমুখপাত্র ভেদান্ত প্যাটেল এসব কথা বলেন।

যুক্তরাষ্ট্রের যেকোনো দেশের ক্ষমতা ওলট-পালট করে দিতে পারে-শেখ হাসিনার এমন মন্তব্যের জবাবে মুখপাত্র ভেদান্ত সরাসরি কোনো জবাব না দিয়ে  বলেন, সার্বিকভাবে বলতে গেলে, আমাদের মিত্র ও অংশীদারদের সঙ্গে অভিন্ন স্বার্থে সংলাপকে হস্তক্ষেপ হিসেবে বিবেচনা করে না যুক্তরাষ্ট্র, যা দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে প্রভাব ফেলতে পারে, আবার নাও ফেলতে পারে। আবার আঞ্চলিক বিষয়াদি ও অগ্রাধিকারে প্রভাব ফেলতে পারে, আবার নাও ফেলতে পারে।

ব্রিফ্রিংয়ে সরকারের মদদপুষ্ট মিডিয়া সময় টিভির ঢাকাস্থ যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাস নিয়ে প্রকাশিত একপেশে রিপোর্টেরও জবাব দেন ভেদান্ত। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ঢাকাস্থ দূতাবাস বাংলাদেশ এবং যুক্তরাষ্ট্রের দূত হিসেবে কাজ করে। যেমনটা বিশ্বের অন্যান্য দেশে যুক্তরাষ্ট্রের দূতরা করে থাকেন।

ব্রিফ্রিংয়ে বাংলাদেশে নির্বাচন ইস্যুতে ভেদান্ত প্যাটেলের সোমবার দেয়া এক মন্তব্য বিভ্রান্তিকরভাবে বিভিন্ন গণমাধ্যমে উপস্থাপনের বিষয়ে তার বক্তব্য এবং অবস্থান জানতে চাওয়া হয়। জবাবে নির্বাচন ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের পূর্বের অবস্থান পুর্নব্যক্ত করে স্টেট ডিপার্টমেন্টের এই মুখপাত্র বলেন, নির্বাচন বিশ্বের যে জায়গাতেই হোক না কেন আমরা চাই সেটা যেন অবাধ এবং সুষ্ঠু হয়। একিসঙ্গে নির্বাচনটা যেন নিরপেক্ষভাবে আয়োজনের ব্যবস্থা করা হয়।

ব্রিফ্রিংয়ে অংশ নিয়ে স্টেট ডিপার্টমেন্ট সংবাদদাতা মুশফিকুল ফজল আনসারী জানতে চান, "পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে সরকারের  পালাবদলে যুক্তরাষ্ট্রের হাত রয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আপনারা কী সেজন্য তাকে আনুষ্ঠানিক ক্ষমা চাইতে বলবেন? শেখ হাসিনা ওয়াশিংটনে আছেন।হতে পারে ব্যক্তিগত সফর তবে  বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে তাঁর কিছু কর্মসূচী রয়েছে বলে জানি। সরকারের মদদপুষ্ট একটি সংবাদ মাধ্যম সময় টিভি, এটি সরকারের একটি অন্যতম মুখপাত্রের ভূমিকা পালন করছে। তাদের এক দীর্ঘ প্রতিবেদনে বলেছে, যুক্তরাষ্ট্র এবং ঢাকাস্থ যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাস একটি রাজনৈতিক দলের মতো আচরণ করছে। আপনি হয়তো জানেন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত ঢাকায় সফর করার সময় বিভিন্ন গ্রুপ তাকে বাধা দিয়েছে। তারা এসব উসকানিমূলক কর্মকান্ড চালিয়ে যাচ্ছে। এধরনের গণমাধ্যম যখন অভিযোগ করে বলে, যুক্তরাষ্ট্র ক্ষমতা বদলের চেষ্টা  করছে এবং টাকা ছড়াচ্ছে। এব্যাপারে আপনার মন্তব্য কী?"

জবাবে ভেদান্ত প্যাটেল বলেন, "বিষয়টার আমি একটু করে জবাব দেবার চেষ্টা করবো। প্রথমত, প্রধানমন্ত্রীর মন্তব্য নিয়ে জবাব দেবার মতো তথ্য আমার হাতে নেই। সার্বিকভাবে বলতে গেলে, আমাদের মিত্র ও অংশীদারদের সঙ্গে অভিন্ন স্বার্থে সংলাপকে হস্তক্ষেপ হিসেবে বিবেচনা করে না যুক্তরাষ্ট্র, যা দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে প্রভাব ফেলতে পারে, আবার নাও ফেলতে পারে। আবার আঞ্চলিক বিষয়াদি ও অগ্রাধিকারে প্রভাব ফেলতে পারে, আবার নাও ফেলতে পারে।"

তিনি বলেন, "আমরা ইতিমধ্যে বলেছি- যুক্তরাষ্ট্র চায় বাংলাদেশে একটি অবাধ এবং সুষ্ঠু নির্বাচন হোক। পৃথিবীর অন্যান্য দেশেও এমন নির্বাচন চাই। কোনো একটি দল এবং তার প্রার্থীর ওপর অন্যদলকে আমরা প্রাধান্য দেইনা।"

ঢাকাস্থ দূতাবাস নিয়ে সময়টিভির একতরফা প্রতিবেদন সম্পর্কে এই মুখপাত্র বলেন, "যুক্তরাষ্ট্রের ঢাকাস্থ দূতাবাস বাংলাদেশ এবং যুক্তরাষ্ট্রের দূত হিসেবে কাজ করে। যেমনটা বিশ্বের অন্যান্য দেশে যুক্তরাষ্ট্রের দূতরা করে থাকেন।"

তিনি বলেন, "আমি গতকালকে ব্রিফ্রিংয়ে যেটা বলেছি সেটাই এখানে উল্লেখ করবো। বাংলাদেশকে আমরা খুবি গুরুত্ব দেই। ২০২২ সালে আমরা দুই দেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তি পালন করেছি। আমি মনে করি দ্বিপাক্ষিক অনেক বিষয় রয়েছে সেগুলোতে সহযোগিতা আরও বৃদ্ধি করা যেতে পারে।  শুধু বাংলাদেশের সরকার নয় বরং দেশটির জনগণের সঙ্গে এ সহযোগিতা ক্ষেত্র বৃদ্ধি করতে আমরা অগ্রসর হচ্ছি।  দ্বিপাক্ষিক ইস্যুর মধ্যে জলবায়ু পরিবর্তনের হুমকি, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বৃদ্ধি, ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে নিরাপত্তা উদ্বেগ এবং আপনি (সাংবাদিক) যেসকল বিষয়ের কথা বলেছেন সেগুলোর কথা বলা যেতে পারে।"

নির্বাচন নিয়ে ভেদান্তের বক্তব্য মিডিয়ায় ভুলভাবে প্রচারের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করে মুশফিক জানতে চান, "গতকাল বাংলাদেশে সরকার নিয়ন্ত্রিত মিডিয়াসহ অনান্য গণমাধ্যমে আপনার একটি বক্তব্য ভুলভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। সেক্রেটারি ব্লিংকেন খুব স্পষ্ট করেই বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে বলেছেন,  শুধু যুক্তরাষ্ট্র নয় বাংলাদেশের নির্বাচনের দিকে পুরো বিশ্ব তাকিয়ে আছে। বাংলাদেশে এর আগে ২০১৪ এবং ২০১৮ সালে দুটি প্রহসনের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। আপনি নিজেও অবাধ এবং নিরপেক্ষ  নির্বাচনের কথা বলে আসছেন।"

এ প্রশ্নের জবাবে স্টেট ডিপার্টমেন্টের মুখপাত্র জানান, "নির্বাচন আয়োজন নিয়ে আপনি যেমনটা বলেছেন (অবাধ এবং সুষ্ঠু নির্বাচনের কথা) সেটাই আমাদের প্রত্যাশা। বিশ্বের যে দেশেই নির্বাচন হোক সেটা যেন হয় অবাধ এবং নিরপেক্ষ। এর বাইরে যেমনটা আপনি বলেছেন নিরপেক্ষ নির্বাচনের কথা। আমিও যেটা এখানে যোগ করতে পারি সেটা হলো-নিবার্চন যেন নিরপেক্ষভাবে আয়োজন করা হয়।"

সময় টিভির পরিচয়ে দস্তগির চৌধুরী নামে একজন বাংলাদেশ ক্ষমতাসীন সরকারের হয়ে জানতে চান-বিশ্বব্যাংক এবং আইএমএফ সরকারের প্রশংসা করেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যুক্তরাষ্ট্র সফর করছেন। ফলে সরকারের  সাথে সম্পর্কের ব্যাপক উন্নয়নে যুক্তরাষ্ট্র কী ধরনের পদক্ষেপ নিবে? জবাবে মুখপাত্র ভেদান্ত বলেন, আমি ইতোমধ্যে আপনার সহকর্মী (মুশফিকুল ফজল আনসারীর) জবাবে বলেছি। এবং আপনি গতকালও একই প্রশ্ন করছেন। তবে আমি আবারও বলছি যে বাংলাদেশ এমন একটি দেশ যার সাথে আমরা আমাদের অংশীদারিত্ব এবং সম্পর্ক আরও গভীর করতে চাই। আমি যেমন বলেছি, এ বছর হবে যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ৫১তম বছর। বেশ কিছু ক্ষেত্র রয়েছে – অর্থনৈতিক সম্পর্ক গভীর করা, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলা করা, নিরাপত্তা সহযোগিতা – যা আমরা বিশ্বাস করি এই অংশীদারিত্বকে আরও গভীর করার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

এমএন/