সিলেটকে বিদায় করে সুপার ফোরের স্বপ্ন টিকে রাখল রাজশাহী

সিলেটকে বিদায় করে সুপার ফোরের স্বপ্ন টিকে রাখল রাজশাহী

সিলেট সিক্সার্কে ৫ উইকেটে হারিয়ে সুপার ফোরে খেলার স্বপ্ন টিকে রাখল রাজশাহী কিংস। দলের জয়ে ৩৬ বলে ৭৬ রান করেন লরি ইভান্স। এছাড়া ১৮ বলে ৪২ রানের ঝড়ো ইনিংস খেলেন রায়ান টেন ডেসকাট। রাজশাহীর এই জয়ে ১২ ম্যাচে ১২ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের চারে উঠে এল মেহেদী হাসান মিরাজের নেতৃত্বাধীন রাজশাহী কিংস। তবে এই পরাজয়ে টুর্নামেন্ট থেকেই ছিটকে গেল সিলেট সিক্সার্স।

১০ ম্যাচে ১০ পয়েন্ট নিয়ে পাঁচ নম্বর পজিশনে আছে সাকিব আল হাসানের নেতৃত্বাধীন ঢাকা ডায়নামাইটস। নিজেদের পরের দুই ম্যাচে ঢাকা যদি কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স এবং খুলনা টাইটানসের বিপক্ষে হেরে যায়। তাহলে সরাসরি সুপার ফোরে চলে যাবে রাজশাহী।

বিপিএলের চলমান আসরে ইতিমধ্যেই সুপার ফোরে খেলা নিশ্চিত করেছে রংপুর রাইডার্স, কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স এবং চিটাগং ভাইকিংস।

বুধবার চট্টগ্রাম জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে প্রথমে ব্যাট করে ৫ উইকেটে ১৮৯ রান সংগ্রহ করে সিলেট সিক্সার্স। টার্গেট তাড়া করতে নেমে ১২ বল হাতে রেখে দলের জয় নিশ্চিত করে রাজশাহী কিংস।

নিকোলাস পুরানের ঝড়ো ইনিংসে ভর করে ৫ উইকেটে ১৮৯ রানের চ্যালেঞ্জিং স্কোর গড়েছে সিলেট সিক্সার্স। দলের হয়ে সর্বোচ্চ ৩১ বলে ৭৬ রান করেন সিলেটের ক্যারিবীয় তারকা ক্রিকেটার নিকোলাস। এছাড়া ৪৫ রান করেন সাব্বির রহমান রুম্মন।

রাজশাহী কিংস এবং সিলেট সিক্সার্সের সামনে সমীকরণ স্পষ্ট। জিতলে সুপার ফোরে খেলার কিঞ্চিত সম্ভাবনা রয়েছে। তবে হারলেই বিদায়। এমন কঠিন সমীকরণের ম্যাচে বুধবার চট্টগ্রাজ জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে টস জিতে প্রথমে ব্যাট করতে নেমে শুরুতেই বিপাকে সিলেট সিক্সার্স।

ইনিংসের প্রথম ওভারেই আরাফাত সানির বলে এলবিডব্লিউ হয়ে সাজঘরে ফেরেন লিটন কুমার দাস। বিপিএলের চলমান আসরে ১১ ম্যাচ খেলে ১৭.৪৫ গড়ে ১৯২ রান করেন লিটন।

ওয়ান ডাউনে ব্যাটিংয়ে নেমে সুবিধা করতে পারেননি সিলেট সিক্সার্সের ইংলিশ ক্রিকেটার জেসন রয়। মোস্তাফিজুর রহমানের অফ কাটারে শিকার হন রয়। তার ব্যাটে চুমু খেয়ে বলটি জমা হয় উইকেটকিপারের গ্লাভসে। ৮ বলে ১৩ রান করে সাজঘরে জেসন রয়।

তৃতীয় উইকেটে সাব্বির রহমান রুম্মনের সঙ্গে ৪৬ রানের জুটি গড়তেই বিপদে পড়ে যান অন্য ওপেনার আফিফ হোসেন। মেহেদী হাসান মিরাজের বলে ক্যাচ তুলে বিদায় নেয়ার আগে ২৫ বলে ২৯ রান করেন আফিফ।

৮৮ রানে ৩ উইকেটে পতনের পর নিকোলাস পুরানকে সঙ্গে নিয়ে ৫৩ রানের জুটি গড়েন সাব্বির।

ইনিংসের শুরু থেকেই দুর্দান্ত ব্যাটিং করেন সাব্বির রহমান রুম্মন। দলের প্রয়োজনে দায়িত্বশীল ব্যাটিং করে যাওয়া সাব্বির, কামরুল ইসলাম রাব্বির বলে ছক্কা হাঁকাতে গিয়ে রায়ান টেন ডেসকাটের দুর্দান্ত ক্যাচে পরিণত হন। তার আগে ৩৯ বলে ৪৫ রান করেন সাব্বির।

এরপর ব্যাটিংয়ে নেমে কামরুল ইসলামের দ্বিতীয় শিকারে পরিণত হন মোহাম্মদ নওয়াজ।

শেষ দিকে একের পর এক বাউন্ডারি হাঁকাতে থাকেন নিকোলাস পুরান। ২১ বলে ফিফটির রেকড গেড়েন সিলেটের এই ক্যারিবীয় ক্রিকেটার। বিপিএলের চলতি আসরে দ্রুততম ফিফটির রেকর্ড গড়েন নিকোলাস।

অবশ্য তার আগে চলমান আসরে ২০ বলে ফিফটি করেন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের শ্রীলংকান অলরাউন্ডার থিসেরা পেরেরা।

আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে ১২ বলে ফিফটির রেকর্ড আছে ভারতের অলরাউন্ডার যুবরাজ সিং এবং ওয়েস্ট ইন্ডিজের তারকা ক্রিকেটার ক্রিস গেইলের।

শেষ দিকে নিকোলাস পুরানের ৩১ বলে ছয়টি চার ও সমান ছক্কায় গড়া অপরাজিত ৭৬ রানে ভর করে ৫ উইকেটে ১৮৯ রান সংগ্রহ করে সিলেট সিক্সার্স।

জিতলে সুপার ফোরে খেলার কিঞ্চিত সম্ভাবনা থাকবে। তবে হারলেই বিদায়। এমন কঠিন সমীকরণের ম্যাচে সিলেট সিক্সার্সের বিপক্ষে ১৯০ রানের টার্গেট তাড়া করতে নেমে শুরুতেই বিপদে পড়ে রাজশাহী কিংস।

ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারে বোলিংয়ে এসেই জাকির হাসানের উইকেটে তুলে নেন চলতি বিপিএলের সেরা বোলার তাসকিন আহমেদ। তার বলে ক্যাচ তুলে দিয়ে সাজঘরে ফেরেন জাকির হাসান। এনিয়ে ১১ ম্যাচে ২১ উইকেট শিকার করলেন তাসকিন আহমেদ।

অলক কাপালির বলে ওয়াইড লং অনের ওপর দিয়ে বাউন্ডারি হাঁকাতে সজোরে ব্যাট চালান জনসন চার্লস। হাওয়ায় ভাসা বলটিকে তালুবন্দি করতে ছুটে যান সাব্বির রহমান রুম্মন ও নিকোলাস পুরান। দুইজনেই চেষ্টা করেন ক্যাচটি লুফে নিতে।

দূর থেকে দৌড়ে আসা নিকোলাসের সঙ্গে সাব্বিরের হাতের ঘর্ষণ হয়। নিজেকে কন্ট্রোল করতে বাউন্ডারির বাইরে চলে যান তিনি। মাঠের সাইড লাইনে চলে যাওয়া নিকোলাস তখন হয়ত আফসোসই করেন, তিনি হয়ত ভেবেছেন সাব্বিরের কারণেই ক্যাচটি তালুবন্দি করা গেল না। কারণ তখনও তিনি নিশ্চিত নন ক্যাচটি যে সাব্বির ধরেছেন।

সাব্বির ক্যাচ নিয়ে বলটি লুকিয়ে অবাক দৃষ্টিতে নিকোলাসের দিকে কিছু সময় তাকিয়ে থাকেন।নিকোলাস সাব্বিরের দিকে তাকিয়ে থেকে হতাশা প্রকাশ করেন। রোমাঞ্চকর কিছু মুহূর্ত পর দুই হাতের মুটোয় লুকিয়ে রাখা বলটি বের করে নিকোলাসের সামনে প্রদর্শন করেন সাব্বির। নিকোলাসের চাহনিতেই খুশির ভাব ফুটে উঠে।

১ উইকেটে ৫৬ রান করা রাজশাহী কিংস। এরপর ২ রানের ব্যবধানে হারায় শাহরিয়ার নাফীস ও নিকোলাসের উইকেট। ১৩ বলে ৯ রান করে ফেরেন নাফীস। ২৬ বলে ৩৯ রান করেন নিকোলাস।

শেষ দিকে অসাধারণ ব্যাটিং করে দলকে জয়ের বন্দরে পৌঁছে দিতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন লরি ইভান্স ও রায়ান টেন ডেসকাট। ৩৬ বলে ১০ চার ও দুই ছক্কায় ৭৬ রান করেন ইভান্স। মাত্র ১৮ বল খেলে তিন চার ও দুই ছক্কায় ৪২ রানের ঝড়ো ইনিংস খেলে জয় নিশ্চিত করে মাঠ ছাড়েন রায়ান টেন।

একে/