ইউনিসেফের তথ্যচিত্র মারিয়ার জীবনী নিয়ে

ইউনিসেফের তথ্যচিত্র মারিয়ার জীবনী নিয়ে

সংসারে অভাব ছিল নিত্যসঙ্গী। অন্যের বাড়িতে কাজ করে কোনোরকমে সন্তানদের লালন-পালন করতেন মা। বাবা নেই। মায়ের কষ্ট লাঘবে পনেরো পেরোনোর আগেই কাজে নেমে পড়ে মারিয়া মান্ডা। নিদারুণ কষ্টের সেই দিনগুলোতে তার জন্য সুযোগের দরজা খুলে দেয় ফুটবল।

২০১০ সালে দেশে বঙ্গমাতা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় গোল্ডকাপ ফুটবল টুর্নামেন্টের আসর বসে। মারিয়া তখন ময়মনসিংহের ধোবাউড়ার কলসিন্দুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। নিজের স্কুলের হয়ে ফুটবলে প্রথম হাতেখড়ি তার। বছরদুয়েক পর ওই আসরে চ্যাম্পিয়ন হয় মারিয়ার স্কুল।

মেয়েটি দারুণ ফুটবল খেলে দৃষ্টি কাড়ে সবার। এরপর আর তাকে পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। ২০১৪ সালে মারিয়া ডাক পায় বাংলাদেশ মেয়েদের অনূর্ধ্ব-১৪ দলে। সে বছরই তাজিকিস্তানে এএফসি অনূর্ধ্ব-১৪ আঞ্চলিক চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপা জেতে বাংলাদেশ। মারিয়া সেই দলের সহ-অধিনায়ক।

২০১৭ সালে অধিনায়ক হয়েই ভারতকে প্রথম হারিয়ে মেয়েদের অনূর্ধ্ব-১৫ সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের ট্রফি সে উপহার দেয় বাংলাদেশকে। ফুটবল বদলে দিয়েছে মারিয়ার পৃথিবী। এখন আর তার মা অন্যের বাড়িতে গৃহপরিচারিকার কাজ করেন না। ফুটবল মারিয়ার জীবনে এনে দিয়েছে সুখের দিন-রাত্রি।

দরিদ্র পরাভূত হয়েছে তার প্রবল ইচ্ছাশক্তি আর ফুটবল-প্রতিভার সহায়তায়। মারিয়ার এমন লড়াকু মনোভাবে মোহিত জাতিসংঘের শিশুবিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফ। তারা বাংলাদেশের এই ফুটবলকন্যাকে নিয়ে একটি তথ্যচিত্র তৈরি করছে।

লাল-সবুজের এই মেয়েটির সাফল্যগাথা তারা ছড়িয়ে দিতে চায় এই গ্রহের অগুণতি কিশোরীর কাছে। যাতে মারিয়ার সাহসী ও সংগ্রামী জীবনের গল্প তাদের অনুপ্রাণিত করে। আর বিশ্ব পায় আরও অসংখ্য মারিয়া।

তথ্যচিত্র নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে ইতিমধ্যে। একদিন শুটিং হয়েছে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) অ্যাস্ট্রোটার্ফে। আরও কয়েকদিন শুটিং হবে মিয়ানমার থেকে মারিয়া খেলে আসার পর। যাকে নিয়ে তৈরি হচ্ছে তথ্যচিত্র সেই মারিয়া স্বাভাবিকভাবেই ভীষণ উচ্ছ্বসিত ইউনিসেফের এই উদ্যোগে।

উচ্ছ্বাস ঝরে পড়ে তার কণ্ঠে, ‘আমার খুবই ভালো লাগছে। ইউনিসেফ আমার জীবনের গল্প জানতে চেয়েছিল। আমি বলেছি। আমার ফুটবলার হিসেবে উঠে আসার কাহিনী নিয়ে এই তথ্যচিত্র। সারা বিশ্ব জানতে পারবে আমার সাফল্যের গল্প।’

এমজে/