ব্যাটিংয়ের একি হাল?

ব্যাটিংয়ের একি হাল?

এমন একাদশ বাংলাদেশ সবশেষ কবে সাজিয়েছে, তা বড় প্রশ্ন। বিশেষজ্ঞ ব্যাটসম্যান আটজন। মিরাজকে ধরলে এই সংখ্যা দাঁড়ায় নয়ে। বাকি থাকে তাসকিন ও এবাদত হোসেন। জিম্বাবুয়ের সাথে একমাত্র টেস্টে এমনই স্কোয়াড বাংলাদেশের। তার মানে, বড় সংগ্রহ দাঁড় করাবে বাংলাদেশ, ব্যাটিংয়ে তেমনই আশা।

কিন্তু চিত্র ভিন্ন। জিম্বাবুয়েন পেসারদের বাউন্স তোপে অসহায় সবাই। রীতিমতো উইকেটে থাকার লড়াইয়ে প্রাণ ওষ্ঠাগত মুমিনুল হকদের। দিনের খেলা বাকি এখনো ৪৮ ওভার। কিন্তু বাংলাদেশের রান ১৪০। উইকেট পড়েছে ৬টি। ওভার ৪০। তাহলে ব্যাটিং সমৃদ্ধ এমন স্কোয়াড সাজিয়ে লাভ টা কী হলো!

হারারেতে একমাত্র টেস্টে টস পর্বে খুশি দুই দলের অধিনায়কই। টস জিতে বাংলাদেশ অধিনায়ক মুমিনুল হক নিলেন ব্যাটিং। অন্য দিকে খুশি জিম্বাবুয়ের অধিনায়ক ব্রেন্ডন টেইলর। কারণ টস জিতলে তিনি নিতেন বোলিং। আর তাই টস হেরেও জিতেছেন তিনি। বল হাতে পরে তার মুখটা আরো উজ্জ্বল করেছে পেসাররা।

সাইফ হাসান ও নাজমুল হোসেন শান্ত বিদায় নেন পাঁচ ওভারের মধ্যেই। এরপর অর্ধশত রানের জুটিতে মুমিনুলকে সঙ্গ দেন সাদমান ইসলাম। তবে সাদমানও বড় করতে পারেননি ইনিংস।

দুর্দান্ত বোলিং করা মুজারাবানির প্রথম স্পেল ৫-২-৫-২। বিস্ময়রকরভাবে প্রথম সেশনে আর তাকে দেখা যায়নি বোলিংয়ে। তাতে কিছুটা স্বস্তি পায় বাংলাদেশের ব্যাটিং লাইন আপ।

ম্যাচের প্রথম বলেই সাইফ হাসানকে কাঁপিয়ে দেন মুজারাবানি। বাউন্সার ঠিকমতো খেলতে না পেরে অল্পের জন্য ক্যাচ দেননি সাইফ। ওই ওভারেই মেলে সাফল্য। ভেতরে ঢোকা বলের লাইন পুরোপুরি মিস করেন সাইফ। বল তার ব্যাটের পাশ দিয়ে ছোবল দেয় স্টাম্পে। পাঁচ টেস্টের ক্যারিয়ারে এই নিয়ে পাঁচবার দুই অঙ্ক ছোঁয়ার আগেই আউট হলেন এই ওপেনার, এর মধ্যে তিনটিই শূন্য।

নিজের তৃতীয় ওভারে মুজারাবানি ফেরান শান্তকে। অ্যাঙ্গেলে বেরিয়ে যাওয়া বল বাঁহাতি ব্যাটসম্যানের ব্যাট ছুঁয়ে আশ্রয় নেয় তৃতীয় স্লিপে অভিষিক্ত ডিওন মায়ার্সের হাতে। বাংলাদেশের রান তখন ২ উইকেটে ৮।

মুমিনুল দায়িত্ব নেন নড়বড়ে দলের ভিত শক্ত করার। শুরু থেকে বেশ আস্থায় খেলতে থাকেন। প্রথম ঘণ্টায় দলের তিনটি বাউন্ডারিই আসে তার ব্যাট থেকে। তিনটিই লেগ সাইডে, একটি গ্ল্যান্স করে, দু’টি ফ্লিকে।

সাদমান শুরুটা স্বস্তিতে করতে না পারলেও লড়াই করে টিকে থাকেন। প্রথম ঘণ্টায় তার রান ৩৪। পরে একটু ফিরে পান নিজেকে। কয়েকটি বাউন্ডারিও আদায় করেন।

মুমিনুলের সাথে তার জুটি পেরিয়ে যায় ফিফটি। এই জুটি যখন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে বলেই মনে হচ্ছিল, তখন সাদমানের বিদায়। বাঁহাতি পেসার রিচার্ড এনগারাভার অফ স্টাম্পের বাইরের বল ছেড়ে না দিয়ে ডিফেন্স করার চেষ্টা করলেন বাঁহাতি ব্যাটসম্যান, স্লিপে ক্যাচ নিলেন ব্রেন্ডন টেইলর। সাদমানের সংগ্রহ ৬৪ বলে ২৩।

লাঞ্চের ঠিক আগে এনাগাভার বল লাফিয়ে উঠে ছোবল দেল মুশফিকুর রহিমের আঙুলে। ডান হাতের তর্জনির নখের দিকটা রক্তাক্ত হয় তার। হাল ছাড়েননি। কিন্তু শেষ পর্যন্ত বেশি দূর আগাতেও পারেননি। দলীয় ১০৬ রানে বিদায় নেন তিনি। ৩০ বলে ১১ রান করে তিনি মুজারাবানির শিকার।

এর কিছুক্ষণ পর বিদায় নেন সাকিব আল হাসান। খুব বেশি বল তিনি খেলার চেষ্টাই করেননি। ৫ বলে তিন রান করে নাউচির শিকার তিনি। ১০৯ রানে বাংলাদেশের নেই ৫ উইকেট। এক প্রান্ত আগলে রেখে খেলা মুমিনুল হক ততক্ষনে পেয়ে গেছেন টেস্ট ক্যারিয়ারের ১৪তম ফিফটি। ৬৪ বলে ১০ চারে পঞ্চাশ স্পর্শ করেন তিনি।

লিটনকে সাথে নিয়ে মুমিনুলের চলাটা ছিল বেশ দৃঢ়তায় পূর্ণ। দলের এমন মুহূর্তে তার সেঞ্চুরিটা খুব দরকার ছিল। কিন্তু পারেননি। নাওচির বলে মেয়ার্সের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন তিনি। ৯২ বলে ১৩ চারে ৭০ রান করেন মুমিনুল হক।
৬ উইকেট নেই। বাকি চার উইকেটে কতদূর যেতে পারবে বাংলাদেশ? তা সময়ই বলে দেবে।