কাঁদলেন মেসি

কাঁদলেন মেসি

অবশেষে সত্যিই বিদায়ের ক্ষণ চলে এলো। ২১ বছর পর বার্সেলোনাকে আনুষ্ঠানিক বিদায় জানিয়ে দিলেন ক্লাবটির ইতিহাসের সেরা খেলোয়াড় লিওনেল মেসি। মাত্র ১৩ বছর বয়সে জন্মভূমি আর্জেন্টিনা ছেড়ে যে ক্লাবে পা রেখেছিলেন, সেই ক্লাব থেকেই আজ চোখের জলে বিদায় নিতে হয়েছে রেকর্ড বর্ষসেরা ফুটবলারকে। বিদায়বেলায় আবেগ ধরে রাখতে পারেননি মেসি। বার্সেলোনায় শেষ সংবাদ সম্মেলনে এসে অঝরে কাঁদলেন মেসি। তাঁর কান্নায় ভারি হয়ে ওঠে ন্যু-ক্যাম্পের প্রেস কনফারেন্স রুম।

ক্লাবের ইতিহাসের সেরা খেলোয়াড়ের এমন বিদায়ের জন্য কেউই প্রস্তুত ছিল না। প্রস্তুত ছিলেন না মেসি নিজেও। বিদায়বেলায় ভরা মাঠে করতালির বন্যায় ভেসে যেতে চেয়েছিলেন হয়তো। কিন্তু মহামারির কালে মেসিকে বিদায় নিতে হলো নীরব কান্নায়।

অবশ্য মহামারি হলেও মেসি ভক্তদের ঘরে আটকে রাখা যায়নি। মেসির শেষ সংবাদ সম্মেলনের দিনে ন্যু-ক্যাম্পে ভিড় জমিয়েছেন ভক্তরা। ন্যু-ক্যাম্পের চারপাশে ভক্তদের আর্তনাদে ভারি হয়ে ওঠে। কেউ প্ল্যাকার্ড হাতে মেসির জন্য ভালোবাসা বার্তা দিচ্ছিলেন, কেউ আবার দাঁড়িয়ে ছিলেন জার্সি-ছবি হাতে। ন্যু-ক্যাম্পের গেট ধরে দাঁড়িয়ে অপেক্ষায় ছিলেন কখন দেখা যাবে প্রিয় মেসিকে।

বার্সা থেকে কখনো বিদায় নিতে হবে এটা ভাবতে পারেননি মেসি। গেল মৌসুমে ক্লাব ছাড়ার চিন্তা করলেও এবার চেয়েছিলেন থেকে যেতে। কান্না জড়িত কণ্ঠে মেসি বললেন, ‘ক্লাবটা ছাড়তে হচ্ছে, এটাতে ভীষণ কষ্ট হচ্ছে। ক্লাবটাকে আমি ভালোবাসি। এমন একটা মুহূর্ত আসবে, এটা আমি কখনো ভাবিনি। মিথ্যা বলছি না, সব সময়ই মনে যা আছে সেটা বলার চেষ্টা করেছি, সত্যিটা বলার চেষ্টা করেছি। গত বছর আমি ক্লাব ছাড়তে চেয়েছিলাম, এই বছর তা নয়। এ কারণেই কষ্টটা বেশি হচ্ছে।’

গেল মৌসুমে বার্সেলোনা ছাড়ার ঘোষণা দিয়ে হইচই ফেলে দিয়েছিলেন লিওনেল মেসি। কিন্তু অনেক নাটকীয়তার পর মেসিকে ন্যু-ক্যাম্পেই রেখে দিয়েছিল বার্সা। মেসিও মনস্থির করে নিয়েছেন, কাতালান শহরে থেকে যাওয়ার। এর মধ্যেই গত বৃহস্পতিবার আসে দুঃসংবাদ। লিগের জটিলতায় মেসির সঙ্গে চুক্তি নবায়ন করতে পারেনি বার্সা।

গত মৌসুমে ক্লাব ছাড়ার ঘোষণা দেওয়ার সময় বিদায়ী ক্ষণে কী বলবেন সব ঠিক করে রেখেছিলেন মেসি। কিন্তু এবার যেতে চাইলেন না তবুও চলে যেতে হলো। মেসির ভাষায়, ‘গত কয়েকদিনে অনেক ভেবেছি কী বলব এখানে। সত্যিটা হচ্ছে কী বলব বুঝে উঠতে পারছিলাম না। জীবনের এতগুলো বছর এখানে কাটানোর পর আমার জন্য দিনটা অনেক বেশি কঠিন। গত বছর বুরোফ্যাক্স নিয়ে নাটকের সময় (ক্লাব ছাড়তে হলে) আমি কী বলব সেটা ঠিক করে রেখেছিলাম। কিন্তু এ বছর সবকিছু অনেক ভিন্ন। এটা আমার ঘর, আমাদের ঘর। আমি এখানে থাকতে চেয়েছিলাম। সেটাই পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু আজ সবকিছু ছেড়ে যেতে হচ্ছে।’

মাত্র ১৩ বছর বয়সে জন্মভূমি আর্জেন্টিনা ছেড়ে স্পেনে পাড়ি জমান মেসি। দিনে দিনে ক্লাবটির প্রাণভোমরা হয়ে ওঠেন তিনি। সেই ক্লাব ছাড়তে আজ গলা ধরে যাচ্ছিল তাঁর, ‘মাত্র ১৩ বছর বয়সে এখানে এসেছিলাম আমি। আজ ২১ বছর পর ক্লাবটা ছেড়ে যাচ্ছি। আমি, আমার স্ত্রী, আমার তিন কাতালান-আর্জেন্টাইন সন্তান। ক্লাবটাতে যা করেছি, তা নিয়ে আমি গর্বিত।’

বিদায়বেলায় ন্যু-ক্যাম্পে ভক্তদের অনুপস্থিতিই বেশি পোড়াচ্ছে মেসিকে, ‘দেড় বছর ধরে মাঠে আমাদের সমর্থকদের দেখতে পাইনি। তাঁদের না দেখে বিদায় নিতে হচ্ছে, এই ব্যাপারটাই বেশি কষ্ট দিচ্ছে। তবে আমি এখানে আবার ফিরব, এটা আমার ঘর। আমার সন্তানদেরও আমি কথা দিয়েছি, আমি আবার এখানে ফিরে আসব। বিনয়ী থেকে, সবাইকে সম্মান দেখিয়েই এই ক্লাবে বেড়ে উঠেছি আমি, চাইব মানুষ আমাকে সেভাবেই মনে রাখুক। পাশাপাশি মাঠে যা করেছি সেটাও মনে রাখুক।’

বার্সেলোনার সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক শেষ হয়ে যাওয়ার পর থেকেই মেসির ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে। এতদিন মেসিকে দলে ভেড়ানোর তালিকায় সবার আগে ছিল ম্যানচেস্টার সিটির নাম। গত আসরে বুরোফ্যাক্সে বার্সাকে মেসি মেইল করার পর থেকেই ক্লাবটি লেগে ছিল। কিন্তু, এখন ম্যানসিটির নয়, ঘুরে ফিরে বেশি আসছে পিএসজির নাম।

স্প্যানিশ ও ফরাসি সংবাদমাধ্যমগুলো জানাচ্ছে, প্যারিসের ক্লাবেই যাচ্ছেন মেসি। কিন্তু আজ সংবাদ সম্মেলনে মেসি জানালেন কিছুই এখনো চূড়ান্ত নয়। তিনি বলেন, ‘পিএসজি একটা সম্ভাবনা। তবে সত্যি বলতে আজ পর্যন্ত কারও সঙ্গেই কিছু চূড়ান্ত হয়নি। (বার্সার পক্ষ থেকে মেসির চুক্তি নবায়ন না হওয়ার) বিবৃতি যখন এসেছে, এরপর থেকে অনেক ফোন এসেছে, অনেক ক্লাবই আগ্রহ দেখিয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত কোনো কিছুই চূড়ান্ত হয়নি। আমরা এ নিয়ে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছি।’

সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে মেসি বলেন, ‘আমি এই বছরগুলোয় পাওয়া ভালোবাসার জন্য ধন্যবাদ দিতে চাই। আমার প্রতি সবার ভালোবাসা সব সময় একই রকম ছিল এবং আমি ক্লাবের ভালোবাসা সব সময় উপলব্ধি করেছি। যখন আমি বাড়ি ফিরব, সব কিছু আরও খারাপ লাগবে। তবে এই মুহূর্তটাতে আমার পরিবারের আরও কাছে থাকা দরকার, যাঁদের ভালোবাসি তাঁদের সঙ্গ দরকার। ফুটবল খেলে যাওয়া দরকার, যে কাজটা আমি সবচেয়ে বেশি ভালোবাসি। একবার ফুটবল খেলতে শুরু করলে সব কিছু আস্তে আস্তে স্বাভাবিক হয়ে যাবে।’