ক্যাচ মিসে ম্যাচ মিস বাংলাদেশের

ক্যাচ মিসে ম্যাচ মিস বাংলাদেশের

ব্যাট হাতে চমৎকার ইনিংস উপহার দিয়েছেন মোহাম্মদ নাঈম ও মুশফিকুর রহিম। বাংলাদেশকে এনে দেন শক্ত পুঁজি। কিন্তু বাজে ফিল্ডিং আর ক্যাচ মিসের খেসারত দিতে হলো লাল-সবুজের দলকে। গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে দুটি ক্যাচ মিস করে বসেন লিটন দাস। ওই দুটি ক্যাচ মিসই ম্যাচ থেকে ছিটকে দেয় বাংলাদেশকে। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সুপার টুয়েলভে নিজেদের প্রথম ম্যাচে শ্রীলঙ্কার কাছে পাঁচ উইকেটে হেরেছে বাংলাদেশ।

রবিবার টসে হেরে প্রথমে ব্যাট করে নির্ধারিত ২০ ওভারে ১৭১ রান সংগ্রহ গড়ে বাংলাদেশ। দলের হয়ে সর্বোচ্চ ৬২ রান করেন মোহাম্মদ নাঈম। ৩৭ বলে ৫৭ রানের চমৎকার ইনিংস খেলেছেন মুশফিক।

জবাব দিতে নেমে ১৮.৫ ওভারে ১৭২ করে জয় তুলে নেয় শ্রীলঙ্কা। ১৭২ রানের চ্যালেঞ্জিং লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে শুরুতেই হোঁচট খেয়ে বসে লঙ্কানরা। উইকেটের সুবিধা কাজে লাগাতে নাসুম আহমেদকে দলে আনেন মাহমুদউল্লাহ। অধিনায়কের আস্থা রেখেছেন নাসুম। কুশল পেরেরাকে ফিরিয়ে বাংলাদেশকে প্রথম সাফল্য এনে দেন তিনি।

প্রথম ওভারেই নাসুমের বলে সুইপ করার চেষ্টায় ছিলেন পেরেরা। কিন্তু লাইন মিস করেন। বল চলে যায় স্টাম্পে।

শুরুর ধাক্কা দ্রুতই কাটিয়ে ওঠে শ্রীলঙ্কা। দ্বিতীয় উইকেটে প্রতিরোধ গড়ে তোলে তারা। আগ্রাসী ব্যাটিং করেন আসালাঙ্কা। ভয়ংকর এই জুটি ভাঙেন সাকিব আল হাসান। নবম ওভারে সাকিবের বলে পাথুম নিসানকা চেষ্টা করেন সুইপ করতে। কিন্তু ব্যাটে-বলে করতে পারেননি। বল লাগে স্টাম্পে। ভাঙে ৬৯ রানের জুটি। ২১ বলে ২৪ করে ফেরেন নিসানকা।

একই ওভারে আরেকটি উইকেট তুলে নেন সাকিব। দ্বিতীয় শিকার বানান আভিশকা ফার্নান্দোকে। সাকিবের ফুল লেংথের বলে আভিশকা ফ্লিক করার চেষ্টা করেন। কিন্তু বল সোজা হয়ে চলে যায় স্টাম্পে। এক ওভারে দুটি উইকেট নিয়ে বাংলাদেশকে খেলায় ফেরান তিনি।

সাকিবের জোড়া আঘাতের পর উইকেট তুলে নেন সাইফউদ্দিন। দারুণ এক স্লোয়ারে তিনি ফিরিয়ে দিলেন বিপজ্জনক ভানিন্দু হাসারাঙ্গাকে। দ্রুত তিন উইকেট হারানোর পরে অনেকটা ম্যাচের লাগাম বাংলাদেশের হাতে চলে আসে।

কিন্তু উইকেটে জমে যান আসালাঙ্কা। বেশ নির্ভার হয়ে হয়ে ব্যাট করেন তিনি। মাঝে ক্যাচ মিস করে বাংলাদেশকে বিপদে ফেলে দেন লিটন দাস। প্রথমে ভানুকা রাজাপাকসাকে জীবন দেন তিনি। আফিফ হোসেনের অফ স্টাম্পের বাইরের বল উড়িয়ে সুইপ করেন রাজাপাকসা। কিন্তু স্কয়ার লেগে ক্যাচটি নিতে পারেননি লিটন দাস। ক্যাচ মিস করে উল্টো বাউন্ডারি দিলেন তিনি।

এরপর আরেকটি ক্যাচ মিস করেন ওই লিটন। সেটিও খুব সহজ ক্যাচ ছিল। কিন্তু এবারও ব্যর্থ হলেন লিটন। সেটি ছিল আসালাঙ্কার উইকেট। মুস্তাফিজের অফ স্টাম্পের বাইরের লেংথ বল উড়িয়ে মারেন আসালাঙ্কা। লিটন ডিপ কাভার থেকে ছুটে বলের নিচে চলে আসেন। কিন্তু পারলেন না ক্যাচ ধরতে। এমন গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ ঘুরে যাওয়ার জন্য ওই দুটি ক্যাচ মিসই যথেষ্ট। জীবন পেয়ে শ্রীলঙ্কাকে জয়ের বন্দরে পৌঁছে দেন আসালাঙ্কা ও রাজাপাকসা। ৪৯ বলে ৮০ রানের দারুণ খেলেন আসালাঙ্কা।

এর আগে শারজাহতে ব্যাটিংয়ের শুরুটা বেশ সাবধানী করে বাংলাদেশ। প্রথম ওভারে বাংলাদেশি ওপেনাররা নিতে পেরেছেন কেবল দুই রান। প্রথম বাউন্ডারি আসে দ্বিতীয় ওভারে, লিটন দাসের ব্যাট থেকে। এরপর থেকে হাতখুলে খেলার চেষ্টা করে লাল-সবুজের দল।

লম্বা সময় ধরে ওপেনিংয়ের ব্যর্থতা কিছুটা হলেও মিটেছে। ওপেনিং জুটিতে আসে ৪০ রান। ষষ্ঠ ওভারে ওপেনিং জুটি ভাঙেন লাহিরু কুমারা। লঙ্কান পেসারের বল ক্রিজ থেকে বেরিয়ে জায়গা বানিয়ে অফ ড্রাইভ খেলেন লিটন। কিন্তু তেমন জোর দিয়ে মারতে পারেননি। একটু লাফিয়ে উঠে ক্যাচ নিয়ে ফেলেন লঙ্কান অধিনায়ক দাসুন শানাকা। দুই বাইন্ডারিতে ১৬ বলে ১৬ রান করে আউট হন লিটন।

ওয়ানডাউনে নেমে থিতু হতে পারেননি সাকিব আল হাসান। অষ্টম ওভারে তাঁকে বোল্ড করেন চামিকা করুনারত্নে। লঙ্কান বোলারের লেংথ বরাবর ডেলিভারিতে পুল শট খেলতে চেষ্টা করেছিলেন সাকিব। কিন্তু পারলেন না। বল গিয়ে আঘাত করে স্টাম্পে। দুই বাউন্ডারিতে সাত বলে ১০ রান করেন বিদায় নেন বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার।

তবে দুই সতীর্থ ফিরলেও ততক্ষণে উইকেটে থিতু হয়ে যান নাঈম। তৃতীয় উইকেটে মুশফিকুর রহিমের সঙ্গে জুটি বাধেন নাঈম। এই উইকেটে রানের গতি বাড়িয়েছে বাংলাদেশ।

এর মধ্যে বাউন্ডারি হাঁকিয়ে ৪৪ বলে ব্যক্তিগত হাফসেঞ্চুরি স্পর্শ করেন নাঈম। বিশ্বকাপে নিজের তৃতীয় ম্যাচ খেলেই দ্বিতীয় হাফসেঞ্চুরির দেখা পেয়ে গেলেন তরুণ এই ওপেনার। ভয়ংকর হয়ে ওঠা নাঈমের প্রতিরোধ ভাঙেন ফার্নান্দো। ১৬.১তম ওভারে সহজ ক্যাচ তুলে দেন নাঈম। নিজের বলে নিজেই ক্যাচ নিয়ে নাঈমকে সাজঘরের পথ দেখান ফার্নান্দো। ছয় বাউন্ডারিতে ৫২ বলে ৬২ রান করে ফেরেন নাঈম।

নাঈম ফিরলেও উইকেটে দারুণ ছন্দে ছিলেন মুশফিক। ৩২ বলে তুলে নেন ব্যক্তিগত হাফসেঞ্চুরি। টি-টোয়েন্টিতে এটি তাঁর ষষ্ঠ হাফসেঞ্চুরি আর টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে প্রথম। ইনিংস শেষে ৫৭ রানে অপরাজিত ছিলেন অভিজ্ঞ এই ব্যাটার।