টি-টোয়েন্টির শিরোপা অস্ট্রেলিয়ার ঘরে

টি-টোয়েন্টির শিরোপা অস্ট্রেলিয়ার ঘরে

গোটা টুর্নামেন্টে দুর্দান্ত খেলা নিউজিল্যান্ডকে ফাইনালে সেভাবে পাত্তা দিল না অস্ট্রেলিয়া। নিউজিল্যান্ডের ছুঁড়ে দেওয়া ১৭২ রানের টার্গেটও হেসেখেলেই পার করে দিল অসি ব্যাটাররা।

ওপেনার ডেভিড ওয়ার্নারের পর ঝড়ো ইনিংস খেললেন ওয়ানডাউনে নামা মিচেল মার্শ।

টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ফাইনালে নিউজিল্যান্ডকে ৮ উইকেটে হারাল অস্ট্রেলিয়া।

প্রথমবারের মতো টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন হলো অসিরা।

অসি ব্যাটারদের সামনে ট্রেন্ট বোল্ট ছাড়া আর কোনো কিউই বোলার সফল হতে পারেননি।

সাউদি, ইশ শোধির মতো বোলারও বেদম পিটুনি খেয়েছে ওয়ার্নার ও মার্শের কাছে।

গত ম্যাচের মতো শুরুতে অস্ট্রেলিয়া অধিনায়ক অ্যারন ফিঞ্চকে (৫ রান) হারালেও সপাটে ব্যাট চালিয়ে গেছেন ওয়ার্নার ও মার্শ।

৪ বাউন্ডারি ও ৩ ছক্বায় ৩৮ বলে ৫৩ রানের ঝড়ো ইনিংস খেলেন ওয়ার্নার। বোল্টের বলে বোল্ড হওয়ার আগে ওয়ার্নার-মার্শ মাত্র ৫৮ বলে ৯২ রানের জুটি গড়েন। মূলত এতেই খেলা হাতছাড়া হয়ে যায় নিউজিল্যান্ডের।

ওয়ার্নারের বিদায়ের পর ব্যাট চালিয়ে যেতে থাকেন মার্শ।

১৬ ওভার শেষে অস্ট্রেলিয়ার স্কোর দাঁড়ায় ২ উইকেট হারিয়ে ১৪৯ রান। অর্থাৎ জয়ের বন্দরে পৌঁছতে ২৪ বলে ২৪ বল করতে হতো অস্ট্রেলিয়াকে। হাতে ৮টি উইকেট।

অনেকটা সহজই বলা চলে। চালকের আসনে অসিরাই। এই ওভারে ১০ রান নেন মার্শ ও ম্যাক্সওয়েল।

শেষ ১২ বলে প্রয়োজন পড়ে ১১ রানের। এ সময় সুযোগ দিয়েছিলেন মার্শ। ১৭তম ওভারে বোল্টের শেষ বলেকট এন্ড বোল্ড হতে পারতেন। কিন্তু বোল্ট তালুতে ক্যাচ জমাতে পারেননি।

১৮তম ওভারটি দুর্দান্ত করেন এডাম মিলনে। মাত্র ৩ রান দেন। কিন্তু ১৯তম ওভারে মার্শ ও ম্যাক্সওয়েল সাউদিকে ২ বাউন্ডারি হাঁকালে ৭ বল বাকি থাকতেই জয়ের বন্দরে পৌঁছে যায় অস্ট্রেলিয়া।

৬ বাউন্ডারি ও ৪ ছক্বায় ৪৮ বলে ৭৫ রানের দুর্দান্ত ইনিংস খেলে জয় নিয়ে মাঠ ছাড়েন মার্শ।

ম্যাক্সওয়েল খেলেন ১৬ বলে ২৩ রানের কেমিও ইনিংস।

এর আগে কেন উইলিয়ামসনের ব্যাটিং তাণ্ডবে বিশ্বকাপ ফাইনালে রানের রেকর্ড গড়ে নিউজিল্যান্ড। উইলিয়ামসনের ৪৮ বলে ১০টি চার ও ৩ ছক্কায় গড়া ৮৫ রানের সুবাদে ৪ উইকেটে ১৭২ রানের চ্যালেঞ্জিং স্কোর গড়ে নিউজিল্যান্ড।

রোববার দুবাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ফাইনালে টস জিতে নিউজিল্যান্ডকে প্রথমে ব্যাটিংয়ে পাঠায় অস্ট্রেলিয়া।

ক্রিকেটের সংক্ষিপ্ত ফরম্যাট তথা টি-টোয়েন্টিতে চ্যালেঞ্জিং স্কোর গড়তে হলে পাওয়ার প্লের ওভারগুলো কাজে লাগতে হয়। কিন্তু সেটা করতে পারেনি নিউজিল্যান্ড।

টস হেরে ব্যাট করতে নেমে প্রথম ৬ ওভারে ১ উইকেট হারিয়ে মাত্র ৩২ রান স্কোর বোর্ডে যোগ করে নিউজিল্যান্ড। পরের চার ওভারেও সেভাবে রান জমা করতে পারেনি নিউজিল্যান্ড। ১০ ওভার শেষে কিউইদের সংগ্রহ দাঁড়ায় ১ উইকেটে ৫৭ রান।

দলের স্কোর মোটাতাজা করতে গিয়ে এরপর অস্ট্রেলিয়ার বোলারদের ওপর রীতিমতো চড়াও হন নিউজিল্যান্ড অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসন। মিচেল স্টার্কের করা ১১তম ওভারে তিন বাউন্ডারিতে ১৯ রান আদায় করে নেন তিনি।

১২তম ওভারে লেগ স্পিনার অ্যাডাম জাম্পা এসে তুলে নেন ওপেনার মার্টিন গাপটিলের উইকেট। সেই ওভারে ১ উইকেট হারিয়ে মাত্র ৫ রান করার সুযোগ পায় নিউজিল্যান্ড। তবে ১৩তম ওভারে গ্লেন ম্যাক্সওয়েলকে পরপর দুটি ছক্কা হাঁকিয়ে ১৬ রান আদায় করে নেন উইলিয়ামসন।

১৪তম ওভারে প্যাট কামিন্সের নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে মাত্র ৫ রান আদায় করতে পারেন উইলিয়ামসন- গ্লেন ফিলিপস। ১৫তম ওভারে অ্যাডাম জাম্পাকে এক চার ও একটি ছক্কা হাঁকিয়ে ১২ রান আদায় করে নেন ফিলিপস।

১৬তম ওভারে মিচেল স্টার্কের ওপর ফের চড়াও হন কেন উইলিয়ামসন। সেই ওভারে ৪টি চার ও এক ছক্কা হাঁকিয়ে সর্বোচ্চ ২২ রান আদায় করে নেন নিউজিল্যান্ড অধিনায়ক। ১৭তম ওভারে প্যাট কামিন্স মাত্র ৮ রান খরচ করেন।

জশ হ্যাজলউডের করা ১৮তম ওভারের প্রথম বলটি ডট দেন ফিলিপস। দ্বিতীয় বলে বাউন্ডারি হাঁকাতে গিয়ে ক্যাচ তুলে দেন তিনি। ১৭.২ ওভারে দলীয় ১৪৪ রানে তৃতীয় ব্যাটসম্যান হিসেবে সাজঘরে ফেরার আগে ১৭ বলে এক চার ও এক ছক্কায় ১৮ রান করেন ফিলিপস।

ফিলিপস আউট হওয়র পর সেই ওভারেই জশ হ্যাজলউডের বলে বাউন্ডারি হাঁকাতে গিয়ে ক্যাচ তুলে দেন কেন উইলিয়ামসন। দলীয় ১৪৪ রানে ৪৮ বলে ৮৫ রান করে ফেরেন তিনি।

উইলিয়ামসন আউট হওয়ার পর জেমস নিশাম ও টিম সিপার্ট স্কোর বোর্ডে সেভাবে রান জমা করতে পারেননি। যে কারণে ৪ উইকেটে ১৭২ রানে ইনিংস গুটাতে হয় নিউজিল্যান্ডকে।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

নিউজিল্যান্ড : ২০ ওভারে ১৭২/৪ ( গাপটিল ২৮, মিচেল ১১, উইলিয়ামসন ৮৫, ফিলিপস ১৮, জিমি নিশাম ১৩, সেইফার্ট ৮; হেইজেলউড ৪-০-১৬-৩, স্টার্ক ৪-০-৬০-০, জাম্পা ৪-০-২৬-১, কামিন্স ৪-০-২৭-০, ম্যাক্সওয়েল ৩-০-২৮-০, মার্শ ১-০-১১-০)।

অস্ট্রেলিয়া : ১৮.৫ ওভারে ১৭৩/৪(ওয়ার্নার ৫৩, মার্শ ৭৭ , ফিঞ্চ ৫, ম্যাক্সওয়েল ২; বোল্ট ৪-০-১৮-২, টিম সাউদি ৩.৫-০-৪৩-০, মিলনে ৪-০-৩০-০, ইশ শোধি ৩-০-৪০-০, নিশাম ১-০-১৫-০)।

ফল : আট উইকেটে জয়ী অস্ট্রেলিয়া।