জেনে বুঝেই আমার সঙ্গে এমনটা করা হয়েছে: তামিম

জেনে বুঝেই আমার সঙ্গে এমনটা করা হয়েছে: তামিম

তামিম ইকবালকে ছাড়াই বিশ্বকাপে গেছে বাংলাদেশ দল। এক সপ্তাহ আগে এমন কিছু  ছিল কল্পনাতীত। কিন্তু বাস্তবেই সেটা হয়েছে। পুরো ফিট নন—এমন অজুহাতে তামিমকে বিশ্বকাপ দলে রাখেননি নির্বাচক কমিটি। যদিও তামিম জানিয়েছেন, ইনজুরি সংক্রান্ত কোনও ইস্যু ছিল না। ইচ্ছা করেই নাকি তার সঙ্গে এমনটা প্রতিনিয়ত করা হয়েছে।

বাংলাদেশের বিশ্বকাপ দল ঘোষণার পর তামিম মুখে কুলুপ দিয়ে বসে ছিলেন। তাকে দলে নেওয়া, না নেওয়া নিয়ে মঙ্গলবার দিনভর নাটক হয়েছে মিরপুরে। অনেক প্রশ্নের জন্ম নিয়েছে। তবে কোনও কিছুই স্পষ্ট ছিল না। ঘোষণা দিয়ে অনেক অপেক্ষার পর বুধবার বিকালে তামিম এক ভিডিও বার্তা নিয়ে হাজির হন। সেখানেই অনেক কিছু পরিষ্কার করেছেন তিনি।

কয়েক মাস ধরেই নানা ইস্যুতে তামিম বিরক্ত ছিলেন। একই ড্রেসিংরুমে নানা সময় কানকথা ভেসে এসেছে তার কাছে। নিজ চোখেই পরোক্ষ অবহেলার শিকার হচ্ছিলেন তিনি। সুনির্দিষ্ট কিছু না জানালেও এই কারণেই যে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসর নিয়েছিলেন—সেটি বলার আর অপেক্ষা রাখে না।

বুধবার বিকালে ভিডিও বার্তায় বলা তামিমের কণ্ঠে ইঙ্গিতও ছিল তেমন। তামিম মনে করেন, তার সঙ্গে বারবার এসব ঘটানো হচ্ছে ইচ্ছাকৃত, ‘একটা ঘটনা হতে পারে, দুইটা ঘটনা ভুল বোঝাবুঝি হতে পারে। কিন্তু গত ৩-৪ মাসে একজনের সঙ্গে ৭-৮টা ঘটনা যদি হয়; তাহলে এটাকে ইচ্ছাকৃত বলতে হবে। আমার উপলব্ধি অন্তত সেটাই। আপাতত এর চেয়ে বেশি আমার আর কিছু বলার নাই।’

কয়েক দিন ধরেই তামিমকে কেন্দ্র করে নানারকম ঘটনা চাউর হয়েছে। সাকিব-তামিম দ্বন্দ্ব নিয়েও খবর এসেছে। খবর রটেছে তামিম পাঁচ ম্যাচের বেশি খেলতে চান না! কিন্তু এসব মোটেও সত্য নয় বলে জানিয়েছেন তামিম। ঘটনার প্রেক্ষাপট তুলে বিসিবির এক পরিচালকের দিকে ইঙ্গিত করে সাবেক অধিনায়ক বলেছেন, ‘বিশ্বকাপ দল থেকে বাদ পড়ার পর মনে হয় না ইনজুরি কিংবা পাঁচ ম্যাচ, যা যা মিডিয়াতে আসছে সেগুলো কোনও কারণ। ব্যথা থাকতে পারে, কিন্তু আমি তো ইনজুরড না।’

এরপরই বড় বোমা ফাটান তামিম। বলেছেন, ‘‘দুই দিন আগে বোর্ডের টপ লেভেল থেকে, যিনি বোর্ডে খুব ইনভলব, আমাকে ফোন করলেন, ‘তুমি তো বিশ্বকাপে যাবা, তোমাকে তো ম্যানেজ করে খেলাতে হবে। তুমি এক কাজ করো, প্রথম ম্যাচ খেলো না।’ আমি বললাম, এটা তো ১২-১৩ দিন পরের কথা। এরমধ্যে আমি ভালো কন্ডিশনে থাকবো, কী কারণে খেলবো না? তারপর উনি বলেছেন, ‘ঠিক আছে, তুমি যদি খেলো তাহলে তোমাকে নিচের দিকে ব্যাটিং করতে হবে।’ আমি একটা মাইন্ডসেট থেকে আসছি, ভালো ইনিংস খেলেছি, আমি হ্যাপি ছিলাম। হুট করেই যখন এসব কথা শুনছিলাম, আমার পক্ষে নেওয়া আসলে সম্ভব হয়নি। আমি ১৭ বছর ধরে এক পজিশনে ব্যাটিং করেছি। আমি জীবনে কোনোদিন তিন চারে ব্যাটিংই করিনি। স্বাভাবিকভাবেই কথাটা মোটেও ভালোভাবে নেইনি। আমি উত্তেজিত হয়েছিলাম।’’

এরপরই সেই পরিচালককে তামিম উত্তেজিত অবস্থায় জানিয়ে দেন এসব নোংরামির মধ্যে তিনি থাকবেন না, ‘আমাকে জোর করে অনেক জায়গায় বাধা দেওয়া হচ্ছিল। এটা ঠিক হলো।’ তখন বললাম, ‘আপনাদের এমন চিন্তাভাবনা থাকলে আমাকে বিশ্বকাপে পাঠাইয়েন না। এমন নোংরামির মধ্যে থাকতে চাই না। প্রতিদিন নতুন জিনিস আমাকে ঠেলে দিবেন। পরে ওই লোকের সঙ্গে আমার ব্যক্তিগতভাবে অনেক কথাবার্তা হয়। সেসব মনে হয় না এই প্ল্যাটফর্মেই বলা উচিত। এটা আমার আর তার মধ্যেই থাকুক।’

তামিমের দাবি, মূল ঘটনা আড়াল করতেই চারদিকে ভুল কিছু তথ্য ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে, ‘‘আমি ব্যক্তিগতভাবে যে জিনিসটা উপলব্ধি করেছি, মিডিয়াকে কিছু ফিক্সড করে দেওয়া হচ্ছিল। ‘সে পাঁচ ম্যাচ খেলবে, কিংবা তাকে কেমনে নির্বাচন করবো।’ আমি বলতে চাই, এটা পুরোপুরি মিথ্যা। ওখানে ফিজিও ছিল, ট্রেনারও ছিল, অনেকেই ছিল।’’

ফিজিও রিপোর্টে থাকা কথাগুলোর কিছুটা ব্যাখ্যাও দিয়েছেন তিনি, ‘রিপোর্টে আমার কন্ডিশনটা বলা ছিল। প্রথম ম্যাচ পর এমন পেইন, দ্বিতীয় ম্যাচের পরও এমন পেইন হয়েছিল। আজকের ম্যাচের পর আমি ২৬ তারিখে খেলতে পারবো। কিন্তু মেডিক্যাল বিভাগ মনে করে আমি বিশ্রাম নিই, তাহলে ২৮ তারিখ আমাদের একটা প্রস্তুতি এবং তারপর ১/২ তারিখে আরেকটা প্রস্তুতি ম্যাচ। যদি দ্বিতীয় প্রস্তুতি ম্যাচটা খেলি, তাহলে আমি অনেক সময় পাবো, এই সময় আমার দুই সপ্তাহের রিহ্যাবও হয়ে যাবে। ওভারঅল দশ সপ্তাহের রিহ্যাবও হয়ে যাবে। তো আমি প্রথম ম্যাচের জন্য ভালো একটা অবস্থানে থাকতে পারবো। এটাই রিপোর্টে ছিল। কোনও জায়গায়, কোনও সময় বলা হয়নি পাঁচ ম্যাচ খেলতে পারবো–এইসব কিছু্ না। হ্যাঁ, আমার বডিতে পেইন ছিল, আমি অস্বীকার করছি না।’