রাজশাহীতে শৈত্যপ্রবাহে পানচাষি ও ব্যবসায়ীদের ক্ষতি কোটি টাকা

রাজশাহীতে শৈত্যপ্রবাহে পানচাষি ও ব্যবসায়ীদের ক্ষতি কোটি টাকা

রাজশাহী, ১২ জানুয়ারি (জাস্ট নিউজ) : তীব্র শীত, ঘন কুয়াশা আর অব্যাহত শৈত্যপ্রবাহে রাজশাহীর পানচাষি এবং ব্যবসায়ীদের মাথায় হাত। ঠাণ্ডাজনিত রোগের কারণে পানগাছে দাগ, শিকড় পচা ও পাতা ঝরাসহ বিভিন্ন ধরনের রোগ দেখা দিয়েছে। এর ফলে পানের বাজারে ধস নেমেছে। কমেছে দাম।

মাত্র পাঁচ দিনের মধ্যেই পানচাষি এবং এ অঞ্চলের ব্যবসায়ীরা কোটি টাকার ক্ষতির মুখে পড়েছেন।

পানচাষিদের সূত্রে জানা গেছে, গত এক বছর থেকে বাজারে পানের দাম বেশি। কিন্তু আকস্মিক শৈত্যপ্রবাহের কারণে পানের পাতায় কালো দাগ দেখা দিয়েছে। পচে যাচ্ছে পান পাতা। ১ পোয়া (৩২ বিড়াই ১ পোয়া এবং ৬৪ পানে এক বিড়া) বড় পানের দাম ৩ হাজার থেকে নেমে ২৮ টাকা, মধ্যম পান প্রতি পোয়া ১ হাজার ৬০০ থেকে নেমে ৫০০ এবং ছোট পান প্রতি পোয়া ৫০০ থেকে নেমে ৩০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এদিকে জেলার বিভিন্ন মোকামে কম দামে পান কিনেও স্থানীয় ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।

তারা বলছেন, পানের পাতায় কালো দাগ থাকায় এবং পচে যাওয়ার কারণে ব্যবসায়ীরা দেশের বিভিন্ন স্থানের মোকামে আরও কম দামে পান বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন। পান পরিবহন এবং বিক্রিতে দুই দিন সময় লাগে। আর এ সময়ের মধ্যে পানপাতা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এর ফলে এ অঞ্চলের ব্যবসায়ীরা দেশের বিভিন্ন বাজারে পানির দামে পান বিক্রি করছেন।

জেলার বড় মোকাম মোহনপুরের মৌগাছি পানহাটের ব্যবসায়ী রফিকুল ইসলাম। তিনি গত মঙ্গলবার ১২ লাখ টাকার পান কেনেন। তিনি জানান, মৌগাছি হাট থেকে সেদিনই তিনি ঢাকা, মুন্সিগঞ্জ, ঠাকুরগাঁ, নীলফামারীসহ বিভিন্ন মোকামে পান সরবরাহ করেন। তীব্র শীত, ঘন কুয়াশা ও শৈত্যপ্রবাহে প্রচণ্ড ঠাণ্ডায় পানের পাতার ওপর কালো দাগ পড়া ও পচে নষ্ট হয়ে যাওয়ায় সরবরাহকৃত পান মাত্র তিন ৩ লাখ ৬০ হাজার টাকায় বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছেন।

একই ধরনের তথ্য দেন পান ব্যবসায়ী আতকার এবং আলতাফ। তারা জানান, রোববার হাটে দুজন মিলে ৩ লাখ ৮০ হাজার টাকার পান কিনেছিলেন। নীলফামারী ও পীরগঞ্জে পাঠিয়ে মাত্র ৬০ হাজার টাকায় তা বিক্রি হয়েছে। এ বছরে কোনোমতেই এই লোকসান উঠানো সম্ভব নয় বলে এ দুই ব্যবসায়ী মন্তব্য করেন।

একই হাটের আরেক ব্যবসায়ী কুরবান আলী বলেন, ভাগ্য টলে গেছে। মাত্র পাঁচ দিনের ব্যবধানে ১২ বছরের সাধনা ও রোজগার চোখের সামনে হারিয়ে গেল। ১০ লাখ টাকার পানে লোকসান হয়েছে সাড়ে ৭ লাখ টাকা।

বুধবার মৌগাছি বাজারে পানচাষি ইব্রাহীম খন্দকার, ফজলুর রহমান ও মাহবুব আলমের সঙ্গে কথা হয়। তারা বলেন, বরজ থেকে যখন পান সংগ্রহ করা হচ্ছে তখন পাতায় কোনো দাগ থাকছে না। বাজারজাত করার জন্য পান গাদি করার সময় দেখা যাচ্ছে পাতায় কালো দাগ। আবার পচা পাতাও পাওয়া যাচ্ছে। এর ফলে পানের বাজরে ধস নেমেছে। এক বিঘা বরজ করতে খরচ হয় ছয় লাখ টাকা। এবার লাভ তো দূরের কথা, উৎপাদন ব্যয় উঠবে কিনা তা নিয়ে সন্দেহ আছে। সংশ্লিষ্ট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, জেলার পবা, মোহনপুর, বাগমারা, পুঠিয়া, দুর্গাপুর এবং চারঘাট এই ছয় উপজেলায় এবার ২ হাজার ১৯৬ হেক্টর (১৬ হাজার ৩৪০ বিঘা) জমিতে পানের আবাদ রয়েছে।

এ ব্যাপারে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর রাজশাহীর উপপরিচালক দেব দুলাল ঢালী পানের রোগবালাই সম্পর্কে বলেন, চাষিদের সর্বাত্মক সহযোগিতা করা হচ্ছে। তাদের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। পান বরজ বর্তমানে যেসব রোগবালাইয়ে সংক্রমিত হয়েছে সে ব্যাপারে আমাদের মাঠকর্মীরা প্রতিনিয়ত চাষিদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন। অতিরিক্ত শীতের কারণে এ ধরনের রোগবালাই হচ্ছে। আমরা আশা করছি, পান বরজের পরিচর্যা করলে এবং শীত কমে গেলে এক সপ্তাহের মধ্যে এ পরিস্থিতির উন্নতি ঘটবে।