পাকিস্তান, নেপাল সীমান্তেও অতিরিক্ত সৈন্য পাঠাচ্ছে ভারত

পাকিস্তান, নেপাল সীমান্তেও অতিরিক্ত সৈন্য পাঠাচ্ছে ভারত

চীন যতক্ষণ না লাদাখ ও উত্তরাখণ্ডের প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা থেকে অতিরিক্ত সেনা সরাচ্ছে এবং বাঙ্কার নির্মাণের অতি সক্রিয়তা থেকে পিছু হটছে, ততক্ষণ ভারতও সীমান্ত থেকে অতিরিক্ত সৈন্য সরাবে না। এমন কড়া বার্তা দিতে শুধু চীন সীমান্তেই নয়, নেপাল ও পাকিস্তান সীমান্তেও ভারত অতিরিক্ত সেনা পাঠাচ্ছে। যেকোনো পরিস্থিতির মোকাবিলায় কার্যত এভাবেই চরম প্রস্তুতি নিচ্ছে দিল্লি। এই তীব্র সংঘাতের আবহেই বুধবার রাজধানীতে সেনাপ্রধান এম এম নারাভানে সব কমান্ডারকে নিয়ে জরুরি বৈঠক করেছেন।

এই বৈঠক চলবে বৃহস্পতিবারও। আলোচনার ভরকেন্দ্র ছিল চীন। ভারত স্থির করেছে, কোনও সীমান্তবর্তী কর্মসূচিই বন্ধ থাকবে না এবং কোনও প্রকল্প বাতিলও করা হবে না। একইসঙ্গে বুধবার উত্তরাখণ্ড প্রশাসন ঘোষণা করেছে, ১ জুন থেকে উত্তরাখণ্ডের লিপুলেখ পাস হয়ে যে সীমান্তবাণিজ্য চীনের সঙ্গে প্রতি বছর শুরু হয়, এবার সেটা বাতিল করা হচ্ছে। সরকারিভাবে কারণ দর্শানো হয়েছে, করোনা সংক্রমণের সমস্যার জন্যই এই বাণিজ্য বাতিল করা হচ্ছে।

এদিকে, ভারত বনাম চীন, দু‌ই পরমাণু শক্তিধর দেশের মধ্যে ঘনিয়ে ওঠা এই ঠান্ডা লড়াই ঘিরে আন্তর্জাতিক মহলও নড়েচড়ে বসেছে। বুধবার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, দুই দেশকেই আমরা জানিয়েছি যে, চীন ও ভারত রাজি থাকলে সীমান্ত বিতর্কের টেনশন কমাতে আমেরিকা মধ্যস্থতা করতে তৈরি আছে। হঠাৎ তৎপর হয়েছে চীনের বন্ধু পাকিস্তানও।

বুধবার পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান বলেছেন, ভারত প্রতিবেশীদের সঙ্গে ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ করে। তাই চীনের সঙ্গে সীমান্ত সমস্যার জন্য দায়ী ভারতই। তবে ভারতের অনড় ও কঠোর মনোভাবের মধ্যেই আজ হঠাৎ চীন সামান্য সুর নরম করেছে। চীনের সরকারি মুখপাত্র বিবৃতি দিয়ে বলেছেন, সীমান্তে যে উত্তপ্ত পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে, তা নিয়ন্ত্রণের মধ্যেই রয়েছে। মুখোমুখি সংঘাতের জায়গায় যায়নি। বরং পরিস্থিতি শান্তই বলা যায়। ভারত ও চীনের মধ্যে যে কোনও মতান্তর অথবা বিতর্কিত ইস্যু আলোচনার মাধ্যমেই সমাধান করা হবে।

তবে চীনের এই বিবৃতি সত্ত্বেও ভারত অবশ্য নিশ্চিন্ত হচ্ছে না। কারণ চীন বিবৃতি দিলেও, লাদাখ ও উত্তরাখণ্ড থেকে এখনও সেনা সদস্যদের সরায়নি। বরং লাদাখ সীমান্তে চীন সম্পূর্ণ যুদ্ধকালীন তৎপরতা দেখাচ্ছে। বাহিনীকে চারটি ভাগে বিভক্ত করে সেনা সদস্যদে মোতায়েন করেছে চীন। তিনটি বাহিনী রয়েছে পূর্ব লাদাখের হট স্প্রিং এলাকায়। আর একটি বাহিনীকে মোতায়েন করা হয়েছে প্যাংগং লেকের ফিঙ্গার এরিয়ায়। গলওয়ান নদী উপত্যকায় ভারতের পোস্ট কে এম ১২০ থেকে মাত্র ১০ কিলোমিটার দূরে অবস্থান করছে চীনের বাহিনী।

গত দু’সপ্তাহ ধরে যখন প্রথমে লাদাখ এবং তারপর উত্তরাখণ্ড সীমান্ত ক্রমেই উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে, তখনই বুধবার চীনের পররাষ্ট্র দফতরের মুখপাত্র ঝাও লিজ্জন বলেছেন, আমরা স্পষ্ট করতে চা‌ই যে, সীমান্ত নিয়ে চীনের অবস্থানের কোনও পরিবর্তন হচ্ছে না। দুই দেশের মধ্যে যে চুক্তি সম্পন্ন হয়েছে অতীতে এবং দুই দেশের রাষ্ট্রপ্রধানরা যে ঐকমত্যে এসেছিলেন, সেই অবস্থানকে মান্যতা দিয়েই চীন চলবে। চীনের এই ‘নরম গরম’ রণকৌশলকে অবশ্য ভারত মোটেই বিশ্বাস করছে না। কারণ, একইসঙ্গে নেপাল ও পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর ভারত বিরোধী বিবৃতি ও চীনের সেনা মোতায়েন সবটাই যেন একটি বৃহত্তর পরিকল্পনারই অঙ্গ! তাই চীন, পাকিস্তান ও নেপাল, তিন সীমান্তেই ভারতীয় সেনা কড়া নজরদারির ব্যবস্থা করছে। সূত্র : বর্তমান

এমজে/