ইসরাইলের সাথে সম্পর্ক করবে না সুদান-বাহরাইন

ইসরাইলের সাথে সম্পর্ক করবে না সুদান-বাহরাইন

ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার বিষয়ে বাহরাইন প্রতিশ্রুতিবদ্ধ থাকার কথা সফররত মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেওকে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন উপসাগরীয় দেশটির বাদশাহ হামাদ বিন ইসা আল খলিফা। গত বুধবার দুই নেতার বৈঠকের পর বাহরাইনের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা ছাড়া ইসরাইলের সাথে সম্পর্ক স্বাভাবিক করা কোনো অর্থ বহন করবে না। এর আগে গত মঙ্গলবার সুদানের অন্তর্বর্তীকালীন প্রধানমন্ত্রী আবদুল্লাহ হামদাকও পম্পেওকে জানিয়ে দেন, ইসরাইলের সাথে শান্তি প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত নেয়ার এখতিয়ার তার সরকারের নেই।

১৯৭৯ সালে মিসর ও ১৯৯৪ সালে জর্দানের পর তৃতীয় আরব রাষ্ট্র হিসেবে গত ১৩ আগস্ট যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্ততায় ইসরাইলের সালে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার চুক্তি স্বাক্ষরের ঘোষণা দেয় সংযুক্ত আরব আমিরাত। এরপরই ইসরাইল ও মার্কিন কর্মকর্তারা প্রকাশ্যেই বলতে শুরু করেন, অচিরেই আরো কয়েকটি আরব রাষ্ট্র একই পথ অনুসরণ করবে বলে আশা করছেন তারা। আর এতে রাজি করাতে মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকার কয়েকটি দেশে পাঁচ দিনের সফরে রয়েছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। সফরের শুরুতেই ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনজামিন নেতানিয়াহুর সাথে সাক্ষাতের পর গত মঙ্গলবার সুদান পৌঁছান তিনি।

সুদানের অন্তর্বর্তীকালীন প্রধানমন্ত্রী আবদুল্লাহ হামদাক জানিয়েছেন, ইসরাইলের সাথে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার সিদ্ধান্ত নেয়ার এখতিয়ার তার সরকারের নেই। খার্তুম সফরে যাওয়া মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেওকে এ কথা জানিয়ে দিয়েছেন তিনি। দুই নেতার এক বৈঠকের পর সুদানের প্রধানমন্ত্রীর এক মুখপাত্র বলেছেন, কেবলমাত্র সরকারের অন্তর্বর্তী সময় পার হলেই এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারবে খাতুম।

বৈঠকের পর সুদান সরকারের মুখপাত্র ফয়সাল সালেহ এক বিবৃতিতে জানান, মঙ্গলবারের আলোচনায় হামদাক মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে স্পষ্ট করে জানিয়ে দিয়েছেন তার দেশের অন্তর্বর্তী সময়ের নেতৃত্ব দিচ্ছে একটি বিশাল জোট তাদের সুনির্দিষ্ট কর্মসূচি রয়েছে। এই কর্মসূচি হলো, সরকার পরিবর্তন সম্পন্ন করা, দেশের শান্তি ও স্থিতিশীলতা অর্জন এবং অবাধ নির্বাচন অনুষ্ঠান। এর বাইরে কোনো বিষয়ের কিংবা ইসরাইলের সাথে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার সিদ্ধান্ত নেয়ার কোনো এখতিয়ার এই সরকারের নেই। উল্লেখ্য, ২০০৫ সালে কনডোলিসা রাইসের পর প্রথম মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে সুদান সফর করেছেন মাইক পম্পেও।

সুদান থেকে ফিরে গত বুধবার মানামায় বাহরাইনের বাদশাহ হামাদ বিন ইসা আল খলিফার সাথে বৈঠক করেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও। ওই বৈঠকে বাহরাইনের বাদশাহ তাদের মিত্র এবং আঞ্চলিক শক্তি সৌদি আরবের অবস্থানের প্রতিধ্বনি করেন। আমিরাত-ইসরাইল চুক্তিকে স্বাগত জানালেও রিয়াদ স্পষ্ট করে জানিয়ে দিয়েছে, স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা ছাড়া ইসরাইলের সাথে চুক্তি স্বাক্ষর কোনো কাজে আসবে না। বাহরাইনের রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থার খবরে বলা হয়েছে, বাদশাহ হামাদ বিন ইসা আল খলিফা মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে জানিয়েছেন যে, তার দেশ এখনো আরব শান্তি উদ্যোগের প্রতি প্রতিশ্রুতিশীল। মানামা সফর শেষে পাঁচ দিনের সফরের শেষ গন্তব্য সংযুক্ত আরব আমিরাতে যাওয়ার কথা রয়েছে পম্পেওর।

উল্লেখ্য, স্বাভাবিক কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা না করলেও ১৯৯০-এর দশক থেকেই ইসরাইলের সাথে নানাভাবে যোগাযোগ বজায় রেখেছে বাহরাইন। প্রথম আরব দেশ হিসেবে আমিরাত-ইসরাইল চুক্তিকে স্বাগত জানায় তারা। ফলে অনেক পর্যবেক্ষকই মনে করতে থাকেন আমিরাতকে অনুসরণ করবে মানামা। এ দিকে অন্য অনেক উপসাগরীয় দেশের মতো বাহরাইন ও ইসরাইলের সাধারণ শত্রু ইরান। মানামার অভিযোগ, বাহরাইনের শিয়া জনগোষ্ঠীকে শাসক সুন্নি আল খলিফা রাজবংশের বিরুদ্ধে উসকে দিচ্ছে ইরান। সূত্র : আলজাজিরা

এমজে/