রাখাইনে সেনাবাহিনী ও সশস্ত্র গ্রুপের লড়াইয়ে বাস্তুচ্যুত কমপক্ষে ২৬,০০০ মানুষ

রাখাইনে সেনাবাহিনী ও সশস্ত্র গ্রুপের লড়াইয়ে বাস্তুচ্যুত কমপক্ষে ২৬,০০০ মানুষ

জাতিসংঘ শুক্রবার বলেছে, মিয়ানমারের সেনাবাহিনী এবং একটি জাতিগত সংখ্যালঘু সশস্ত্র গ্রুপের মধ্যে নতুন করে এ সপ্তাহের লড়াইয়ে পশ্চিমাঞ্চলীয় রাখাইন রাজ্যের কমপক্ষে ২৬,০০০ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক সমন্বয়কের অফিস (ইউএনওসিএইচএ) থেকে আপডেট রিপোর্টে বলা হয়েছে, এই লড়াই চলছে আরাকান আর্মি ও মিয়ানমার সেনাবাহিনীর মধ্যে। এতে বাস্তুচ্যুত হয়েছেন কমপক্ষে ২৬,১৭৫ জন মানুষ।

সোমবার রাখাইন এবং প্রতিবেশী চীন প্রদেশে নিরাপত্তা রক্ষাকারীদের বিরুদ্ধে হামলা করে আরাকান আর্মির সদস্যরা। এর মধ্য দিয়ে ভঙ্গুর একটি যুদ্ধবিরতির ইতি ঘটে। ফলে নতুন করে এই সংঘাতের সূত্রপাত হয়। সোমবার থেকে আরাকান আর্মির অবস্থানে সেনাবাহিনীর গোলা বর্ষণে কমপক্ষে ১১ জন নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে ইউএনওসিএইচএ।

স্থানীয় অধিবাসীরা বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেছেন, প্রদেশের রাজধানী সিতওয়ে থেকে ১৬ মাইল পশ্চিমে পাউকতা শহরে বৃহস্পতিবার সামরিক জান্তার সেনারা গোলা নিক্ষেপ করেছে। আরাকান আর্মি অল্প সময়ের জন্য একটি পুলিশ স্টেশনের দখল নেয়ার পর তাদের ওপর হেলিকপ্টার থেকে গুলি করা হয়েছে। দিনের পরের দিকে ওই শহরটির নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে সেনারা। শুক্রবার স্থানীয় অধিবাসীদের উদ্ধৃত করে মিডিয়ার খবরে বলা হয়েছে, প্রায় ৫০ জনকে আটক করেছে তারা।

অজ্ঞাত সংখ্যক মানুষ নিহত হয়েছেন। এতে শুধু পাউকতা থেকে বাস্তুচ্যুত হয়েছেন ১৯০০০ মানুষ।

ইউএনওসিএইচএ বলেছে, কার্যত রাখাইন শহরের সঙ্গে সব সড়ক এবং পানিপথ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। ওই এলাকায় বেশির ভাগ মানবিক কর্মকাণ্ড স্থগিত করা হয়েছে। নতুন এই সহিংসতা শুরুর পর থেকে কমপক্ষে ১০০ মানুষকে আটক করা হয়েছে।

উল্লেখ্য, জাতিগত রাখাইন জনগোষ্ঠীর জন্য প্রদেশটির স্বায়ত্তশাসনের দাবিতে বছরের পর বছর ধরে লড়াই করছে আরাকান আর্মি। অন্য দুটি জাতিগত যোদ্ধাগোষ্ঠী মিয়ানমার ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক এলায়েন্স আর্মি এবং তাং ন্যাশনাল লিবারেশন আর্মি তাদের সঙ্গে যোগ দিয়েছে। সব গ্রুপের সমন্বয়ে গড়ে উঠেছে আরাকান আর্মি জোট।

তারা চীন সীমান্তের কাছে উত্তরের শান রাজ্যজুড়ে সামরিক জান্তার বিরুদ্ধে লড়াই করছে। তারা ওই অঞ্চলে বেশ কিছু শহর দখল করেছে। বন্ধ করে দিয়েছে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক রুট। তাদের এই সফলতার ফলে সেনাবাহিনী বিরোধী অন্য গ্রুপগুলোকে উজ্জীবিত হয়েছে। ফলে মিয়ানমারের পশ্চিম ও পূর্বাঞ্চলীয় সীমান্তে সংঘাত বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, ২০২১ সালে সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা কেড়ে নেয়ার পর এটাই সামরিক জান্তার সামনে সবচেয়ে বড় সামরিক চ্যালেঞ্জ। শুক্রবার পূর্বাঞ্চলীয় কায়া রাজ্যে অভ্যুত্থানবিরোধী যোদ্ধারা বলেছেন, রাজ্যের রাজধানী লোইকাওয়াতে একটি কোর্টহাউসে আগুন দিয়েছেন। শহরের ভিতরে এবং চারপাশে সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে তাদের লড়াই চলছে। এভাবে লড়াই ছড়িয়ে পড়ার ফলে বুধবার গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরাঁ।