জামালপুরে ডিসির কক্ষে সেই নারী আকুতি করে যা বললেন!

জামালপুরে ডিসির কক্ষে সেই নারী আকুতি করে যা বললেন!

‘আমি সত্য কথা বলছি, আমি কিছুই জানি না, এগুলা কে করছে। আপনারা তদন্ত করে বের করে বিচার করুন। আমি বিচার চাই কিন্তু স্যারের কোনো দোষ নাই এর মাঝে। স্যার আমার কোনো ক্ষতি করে নাই। আপনারা একটা কথা শুনে রাখেন, আমার বাঁচার কোনো ইচ্ছা নাই। আমি শুধু আমার একমাত্র সন্তানের দিকে তাকিয়ে বেঁচে আছি। এভাবে ধিক্কার না দিয়ে, আপনারা আমার বাঁচার ব্যবস্থা করে দিয়েন।’

আপত্তিকর ভিডিও ফেসবুকে ভাইরাল এবং এ বিষয়ে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হওয়ায় আত্মগোপনে থাকা সমালোচিত জামালপুর জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের অফিস সহায়ক সানজিদা ইয়াসমিন সাধনা আজ সোমবার সকালে কর্মস্থলে উপস্থিত হয়ে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন।

তবে কিছুক্ষণ পর তিন দিনের জন্য জেলা প্রশাসক বরাবর ছুটির আবেদন করে দ্রুত জেলা প্রশাসক কার্যালয় থেকে বেড়িয়ে যান তিনি।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানান, জেলা প্রশাসকের গোপনীয় শাখার অফিস সহায়ক সানজিদা ইয়াসমিন সাধনা আজ সোমবার সকালে অফিসে আসার পর শারীরিক অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে ছুটির আবেদন করেন। ওই ছুটির আবেদন পত্র জমা দেওয়ার পূর্ব মূহুর্তে অসুস্থ হওয়ার অভিনয় করে দরজার সামনে হঠাৎ মেঝেতে শুনে পড়েন ‘সাধনা’।

এ সময় অনেকে বলছিলেন ‘সাধনা’ জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছে। এর কিছুক্ষণের মধ্যেই কেউ কোন কিছু বুঝে উঠার আগেই আবেদনপত্র জমা দিয়ে দ্বিতীয় তলা থেকে সিড়ি দিয়ে দ্রুত নিচে নামেন এবং জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের প্রধান গেইট দিয়ে বেড়িয়ে রাস্তার বিপরীত পাশে গিয়ে রিকশায় উঠে চলে যান ‘সাধনা’।

এ ব্যাপারে জামালপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক(সার্বিক) রাজীব কুমার সরকার সাংবাদিকদের বলেন, অফিস সহায়ক সানজিদা ইয়াসমিন সাধনার আগামী তিন দিনের ছুটির আবেদন পত্র পেয়েছি।

এ বিষয়ে নতুন জেলা প্রশাসক কর্মস্থলে যোগদান করে সিদ্ধান্ত নিবেন। অন্য এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, মন্ত্রী পরিষদ বিভাগের গঠিত পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটির তদন্ত সাপেক্ষে অফিস সহায়ক সানজিদা ইয়াসমিন সাধনার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

একাধিক সূত্র জানায়, সানজিদা ইয়াসমিন সাধনা জামালপুর জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের অফিস সহায়ক পদে চাকরি করলেও একই সাথে তিনি আদর্শ মহিলা উন্নয়ন সমিতির সভানেত্রী। তার বাড়ি জামালপুর জেলার মাদারগঞ্জ উপজেলার বালিজুড়ি ইউনিয়নের সুখননগরী গ্রামে। ওই গ্রামের নিঃসন্তান খাজু মিয়া ও কুমকুম বেগমের দত্তক নেওয়া মেয়ে সানজিদা ইয়াসমিন সাধনা। ২০০৯ সালে তার স্বামী জাহিদুল ইসলাম ফরহাদ মারা যান। তার একজন পুত্র সন্তান রয়েছে। এরপর টাঙ্গাইলের এক পুলিশ কনস্টেবলের সাথে তার দ্বিতীয় বিয়ে হয়। দাম্পত্য জীবনে মিল না হওয়ায় কিছুদিন পর তাদের মধ্যে বিবাদ বিচ্ছেদ ঘটে। এরপর তিনি আবার পিত্রালয়ে ফিরে আসেন। বর্তমানে তিনি জামালপুর শহরের বগাবাইদ বোর্ডঘর এলাকায় বাসা ভাড়া নিয়ে বসবাস করছেন। সাধনার মাথায় চুল নেই। অল্প বয়সে একটা রোগের কারণে তার মাথার চুল ও ভ্রু উঠে যায়। জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের অফিস সহায়ক পদে চাকরি পেতে সার্বিক সহযোগিতা করেছেন বিদায়ী জেলা প্রশাসক আহমেদ কবীর।

প্রসঙ্গত, নিজ অফিস কক্ষে জামালপুরের জেলা প্রশাসক আহমেদ কবীরের সাথে একই অফিসের অফিস সহায়ক সানজিদা ইয়াসমিন সাধনা নামে এক নারী কর্মচারীর সাথে আপত্তিকর দুইটি ভিডিও (৪ মিনিট ৫৭ সেকেন্ড ও ২৪ মিনিট ৫৯ সেকেন্ড) সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়। এরপর থেকে সমালোচনার ঝড় উঠে বিভিন্ন মহলে। তবে গত শুক্রবার দুপুরে সার্কিট হাউজে সংবাদ সম্মেলনে ওই ভিডিওটি সাজানো বলে দাবি করেছেন জেলা প্রশাসক আহমেদ কবীর।

এমআই