টক অব দ্য কান্ট্রি

কম ভোট

কম ভোট

ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে কে হয়েছেন মেয়র আর কেইবা কাউন্সিলর। ভোটানুষ্ঠানের পর নগরবাসী তথা দেশবাসীর কাছে এর চেয়েও বড় আলোচনার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে এত কম সংখ্যক ভোটারের ভোটাধিকার প্রয়োগ!

গত শনিবার দুই সিটিতে গড়ে ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন ২৭ শতাংশ ভোটার। ভোটগ্রহণ শেষ হওয়ার পর থেকে শুরু করে গতকাল রবিবারও এটি ছিল রাজনীতিবিদ, সুশীল সমাজসহ সাধারণ মানুষের আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও চলছে বিস্তর ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ।

এর কারণ ব্যাখ্যা করেছেন বিজয়ী দুই মেয়রপ্রার্থী; আওয়ামী লীগ ও বিএনপিও দলীয় দৃষ্টিতে কারণ তুলে ধরেছে। এ নিয়ে কথা বলেছেন ইসির শীর্ষপর্যায়ের কর্মকর্তারা; সরকারের মন্ত্রীসহ অনেকেই। তাদের ব্যাখ্যায় উঠে এসেছে নানা কারণ। কারণ যা-ই হোক, কম ভোটারের উপস্থিতি গণতন্ত্রের জন্য মোটেও শুভ বার্তা নয় বলেই মনে করছেন রাজনীতিবিষয়ক বিশ্লেষকরা।

দৈনিক প্রথম আলোর অনলাইন সংস্করণে কমসংখ্যক ভোটারের উপস্থিতি সংক্রান্ত প্রতিবেদন ছাপা হয়েছে ‘আ.লীগের ভোটারও মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন’ শিরোনামে। এতে রাজনীতি বিশ্লেষক ও রাজনীতিবিদদের বরাতে বলা হয়েছে, কয়েক বছর ধরে ভোটের যে সংস্কৃতি তৈরি হয়েছে, তাতে ভোটাররা ভোটবি গতকাল কমসংখ্যক ভোটারের উপস্থিতি সংক্রান্ত প্রতিবেদন ছাপা হয়েছে ‘আ.লীগের ভোটারও মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন’ শিরোনামে। এতে রাজনীতি বিশ্লেষক ও রাজনীতিবিদদের বরাতে বলা হয়েছে, কয়েক বছর ধরে ভোটের যে সংস্কৃতি তৈরি হয়েছে, তাতে ভোটাররা ভোটবিমুখ হচ্ছেন। গতকাল দৈনিক সমকালে একটি বিশেষ প্রতিবেদন তুলে ধরা হয়েছে ‘এত কম ভোট!’ শিরোনামে।

এতে নির্বাচন বিশ্লেষকদের বরাতে বলা হয়েছে, অতীতে নির্বাচনে নানা অনিয়ম, প্রচারে পাল্টাপাল্টি হুমকি-ধমকিসহ নানা কারণে ভোট নিয়ে ভোটারদের মধ্যে নেতিবাচক মনোভাব দেখা দিয়েছে।

এবারের নির্বাচন শুরু থেকে উৎসবমুখর এবং প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ থাকলেও ভোটারদের মধ্যে ‘আস্থা’ ফেরাতে পারেনি। দৈনিক যুগান্তর গতকাল ছাপা সংস্করণে শীর্ষ প্রতিবেদন করেছে ‘কম ভোটে নৌকার বড় জয়’ শিরোনামে।

এদিন দৈনিক কালের কণ্ঠের প্রধান প্রতিবেদনের শিরোনাম ছিল ‘তাপস-আতিকের হাতে ঢাকা: শান্তিপূর্ণ ভোট, উপস্থিতি কম’।

দৈনিক বাংলাদেশ প্রতিদিনে ‘নজিরবিহীন কম ভোটারের নির্বাচন’ শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন নির্বাচনে কেন্দ্রগুলোয় ভোটার উপস্থিতি ছিল খুবই কম। এমন কম ভোটারের নির্বাচনের নজির অতীতে দেখা যায়নি বলে মন্তব্য করেছেন নির্বাচন পর্যবেক্ষকরা। দেশের প্রতিটি দৈনিকেই কম ভোটারের উপস্থিতি নিয়ে প্রতিবেদন গুরুত্ব পেয়েছে।

বিভিন্ন দেশের দৈনিকের অনলাইন সংস্করণেও ঢাকার সিটি নির্বাচনে কম ভোটারের উপস্থিতির বিষয়টি গুরুত্বসহ তুলে ধরা হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও বিষয়টি নিয়ে আলোচনার ঝড় উঠেছে।

ফেসবুকে কম ভোটারের উপস্থিতি নিয়ে প্রচুর স্ট্যাটাস ছিল গতকাল। আলী রিয়াজ নামে একজন ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছেন, ‘যে দেশের মানুষের কাছে নির্বাচন ছিল উৎসব, ভোট দেওয়া ছিল একই সঙ্গে সামাজিক ও রাজনৈতিক দায়িত্ব ৬০ শতাংশ ভোট কোনো বিষয় ছিল না, সে দেশের মানুষকে ভোটকেন্দ্রবিমুখ করতে পারার এ ঐতিহাসিক কাজ যে বা যারা সুচারুভাবে সম্পাদন করতে পেরেছেন, তাদের নোবেল পুরস্কার না পারেন, জাতীয় একটা পুরস্কার দিন। তার বা তাদের এ ইতিহাস তো ১০০ বছরেও ঘটেনি।’

পথে-ঘাটে, আলোচনায়, আড্ডায়, হোটেলে চায়ের কাপে এখন সাধারণ মানুষের আলোচনার প্রধান বিষয় ঢাকার দুই নগরীর নির্বাচনে কম ভোটারের উপস্থিতি। এতে স্থান পাচ্ছে অনেক কারণই।

নির্বাচন ভবনে ভোটের ফল নিয়ে সাংবাদিকদের কাছে প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে নির্বাচন কমিশন সচিব মো. আলমগীর বলেছেন, কম ভোট পড়ায় আমরা অসন্তুষ্ট না। প্রচার ছিল ব্যাপক। আমাদের ধারণা ছিল, শতকরা ন্যূনতম ৫০ শতাংশ ভোট পড়বে। কিন্তু এ ধারণার চেয়েও কম পড়েছে। ভোট সংগ্রহের দিক থেকে আমরা পুরোপুরি সন্তুষ্ট না।

সাবেক নির্বাচন কমিশনার এম সাখাওয়াত হোসেন গতকাল গণমাধ্যমে দেওয়া প্রতিক্রিয়ায় জানান, ভোটারের উপস্থিতির হার খুবই নৈরাশ্যজনক। এ হার তো ৭৫ শতাংশও হতে পারত। গত আট বছরে বাংলাদেশে ভোটার যে হারে বাড়ছে, তার সঙ্গে তাল মিলিয়ে ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে যাওয়ার বিষয়ে উৎসাহ হারানোর কারণগুলো খুঁজে বের করার সময় এসেছে।

ভোটার উপস্থিতি কম হওয়ার কারণ সম্পর্কে সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, নিকট-অতীতে ভোট ছাড়া জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হওয়ার ঘটনা, বর্তমান কমিশনের ওপর ভোটারদের আস্থাহীনতা, প্রচারে বড় দুই রাজনৈতিক দলের কেন্দ্র দখলের পাল্টাপাল্টি হুমকি ইত্যাদি ভোটারের কেন্দ্রবিমুখ হওয়ার অন্যতম কারণ। তিনি বলেন, ভোটাররা মনে করছেন, তাদের ভোটে কোনো পরিবর্তন ঘটবে না; যা হওয়ার তা-ই হবে।