রাস্তা খুঁড়তেই খরচ ৪০০ কোটি টাকা

রাস্তা খুঁড়তেই খরচ ৪০০ কোটি টাকা

৪০০ কোটি টাকা খরচ হবে রাজধানীর পয়ঃনিষ্কাশন উন্নয়নে রাস্তা খুঁড়তেই। একই প্রকল্প বাস্তবায়নে ১৮ ধরনের পরামর্শক থাকছে। যাদের পেছনে ব্যয় হবে ১৩৮ কোটি টাকা। আর শহরের ট্রাঙ্ক মাইন পুনর্নির্মাণে পূর্ব ও পশ্চিম এলাকায় প্রতি কিলোমিটারে খরচের পার্থক্য ১৪ কোটি টাকা। একইভাবে স্যুয়ারেজ লাইন নির্মাণ খরচেও পার্থক্য দেখা গেছে। ঢাকা ওয়াসার ৩৮ শ’ ৫৫ কোটি ৬০ লাখ টাকার এই প্রকল্পটি বাস্তবায়নে বিশ্বব্যাংক ও এআইআইবি থেকে ঋণ নেয়া হচ্ছে। প্রকল্পটির বিভিন্ন খাতে ব্যয়ের আকার নিয়ে পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগের আপত্তিও ছিল। তারপরও বাস্তবায়নের জন্য মঙ্গলবার অনুমোদন দেয়া হয়েছে।

প্রকল্পের প্রেক্ষাপটে ঢাকা ওয়াসা বলছে, ঢাকা শহরের চিহ্নিত এলাকাগুলোয় উন্নত পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা স্থাপন এবং পয়ঃনিষ্কাশন সেবা খাতে ঢাকা ওয়াসার প্রাতিষ্ঠানিক ও পরিচালন সক্ষমতার উন্নয়নে এই প্রকল্প গ্রহণ। বর্তমানে পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থার মাধ্যমে রাজধানীবাসীর মাত্র ২০ শতাংশ জনগণকে সেবা দেয়া সম্ভব হচ্ছে। ৮০ শতাংশ লোক এই সেবা পাচ্ছে না। সম্পদের সীমাবদ্ধতার কারণে অপর্যাপ্ত রক্ষণাবেক্ষণের জন্য বিদ্যমান পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা নাজুক। ঢাকা শহরে মাত্র একটি চলমান পয়ঃশোধনাগার রয়েছে, যা পাগলায় অবস্থিত। স্যুয়ারেজ কালেকশন নেটওয়ার্কের অপ্রতুলতা বা ভঙ্গুরতা বা ব্লকেজের কারণে শোধনাগারটির পরিশোধন ক্ষমতার অর্ধেকের কমে পরিচালিত হচ্ছে।

এ ছাড়া ঢাকা শহরের অধিকাংশ জনগণ তাদের পয়ঃবর্জ্য আশপাশের স্টর্ম ওয়াটার ড্রেনেজ লাইনে বা খাল-বিলে নিষ্কাশন করছে। যাতে নদী ও পরিবেশ দূষিত হচ্ছে। ফলশ্রুতিতে ঢাকা শহরের জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থার অবনতি হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে ঢাকা ওয়াসা স্যুয়ারেজের জন্য মাস্টারপ্ল্যান তৈরি করে। তারই অগ্রাধিকার কাজ হিসেবে ঢাকা দক্ষিণে অবস্থিত পাগলা ক্যাচমেন্টের পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থার উন্নয়ন ও পুনর্বাসনের লক্ষ্যে ঢাকা স্যানিটেশন ইম্প্রুভমেন্ট প্রজেক্ট। এই প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য বিশ্বব্যাংক ২০১৬ সালের এপ্রিলে অর্থায়নে ঋণসহায়তার আগ্রহ প্রকাশ করে।

প্রকল্পের আওতায় কাজগুলো হলো- পরামর্শক সেবা ১ হাজার ৮০৪ জনমাস, পাগলা পয়ঃশোধনাগারটির পুনর্নির্মাণ ও সম্প্রসারণ, পূর্বাঞ্চলে ১২ কিলোমিটার ট্রাঙ্ক মাইন পুনর্নির্মাণ এবং পশ্চিমাঞ্চলে ৬ কিলোমিটার ট্রাঙ্ক মাইন পুনর্নির্মাণ, দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে ৪ কিলোমিটার ট্রাঙ্ক মাইন পুনর্বাসন, ৪৬২ কিলোমিটার স্যুয়ারেজ নেটওয়ার্ক, কমিউনাল সেপটিক ট্যাঙ্ক নির্মাণ, ডিসেন্ট্রালাইজেশন ওয়েস্ট ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টসহ বিভিন্ন কাজ। ৩ হাজার ৮৫৫ কোটি ৬০ লাখ টাকা ব্যয়ের মধ্যে বিদেশী ঋণ হলো ২ হাজার ৮৫৬ কোটি টাকা এবং বাকি ৯৯৯ কোটি ৬০ লাখ টাকা বাংলাদেশ সরকারের। পল্টন, মতিঝিল, রমনা, কলাবাগান, শাহবাগ, খিলগাঁও, সবুজবাগ, কোতোয়ালি, সূত্রাপুর, বংশাল এবং ওয়ারীতে এই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে।

ব্যয় বিভাজনে দেখা যায়, প্রকল্পে রাস্তা কাটা বা খোঁড়ার জন্য চার্জ ধরা হয়েছে ৩৯৯ কোটি ৮৪ লাখ টাকা; যা প্রকল্প ব্যয়ের ৯ দশমিক ৮৬ শতাংশ। কিন্তু কত কিলোমিটার রাস্তা খুঁড়তে হবে এখানে তা উল্লেখ করা হয়নি। ফলে প্রতি কিলোমিটার রাস্তা খুঁড়তে কত টাকা ব্যয় হবে তা স্পষ্ট নয়। প্রকল্পে ১৮টি খাত বা ধরনের পরামর্শক নিয়োগ দেয়া হবে। তাদের জন্য ব্যয় হবে ১৩৭ কোটি ৬৮ লাখ টাকা।

এখানে পরামর্শক খাতগুলো হলো, ডিজাইন রিভিউ ও সুপারভিশন, প্রকল্প ব্যবস্থাপনা, উত্তরা ক্যাচমেন্ট এলাকার জন্য স্থানীয় সিনিয়র ক্রয় পরামর্শক, আর্থিক ব্যবস্থাপনা পরামর্শক, অডিট ফার্ম, প্রস্তুতিমূলক রিসেটেলমেন্ট অ্যাকশন প্ল্যান, রিসেটেলমেন্ট অ্যাকশন প্ল্যান বাস্তবায়ন পরামর্শক, আন্তর্জাতিক কারিগরি পরামর্শক বা ইঞ্জিনিয়ার, আন্তর্জাতিক ক্রয় পরামর্শক, স্টেকহোল্ডারদের সাথে যোগাযোগের জন্য কারিগরি সহায়তা পরামর্শক, ঢাকা ওয়াসার জিআইএস শক্তিশালীকরণে পরামর্শক সেবা, এমআইএস শক্তিশালীকরণে পরামর্শক সেবা, নাগরিক ফিডব্যাক সেবার জন্য পরামর্শক সেবা, ড্রেনেজসহ অন্যান্য স্যানিটেশনের মাধ্যমে পবিবেশ উন্নয়ন, অগ্রিম অর্থায়নে কারিগরি সহায়তা সেবা, এনজিওদের জন্য, বিলিং ও হিসাব সফটওয়্যার আধুনিকায়নে পরামর্শক সেবা।

পাগলা পয়ঃশোধনাগারটি পুনর্নির্মাণ ও সম্প্রসারণে ব্যয় হবে ৮৮৯ কোটি ৫ লাখ টাকা। পূর্বাঞ্চলে ১২ কিলোমিটার ট্রাঙ্ক মাইন পুনর্নির্মাণে খরচ ধরা হয়েছে ৬১৪ কোটি ৮৮ লাখ টাকা। এখানে প্রতি কিলোমিটারে ব্যয় হবে ৫১ কোটি ২৪ লাখ টাকা। আর একই শহরের পশ্চিমাঞ্চলে ৬ কিলোমিটার ট্রাঙ্ক মাইন পুনর্নির্মাণে ব্যয় হবে ২২৬ কোটি ৮০ লাখ টাকা।

এখানে ব্যয় হবে প্রতি কিলোমিটারে ৩৭ কোটি ৮০ লাখ টাকা। ফলে এই কাজে এই শহরে প্রতি কিলোমিটারে খরচের ব্যবধান প্রায় ১৪ কোটি টাকা। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে ৪ কিলোমিটার ট্রাঙ্ক মাইন পুনর্বাসনে ৪৫ কোটি টাকা। প্রতি কিলোমিটারে ব্যয় সোয়া ১১ কোটি টাকা। ২০৫ কিলোমিটার স্যুয়ারেজ নেটওয়াক পুনর্নির্মাণে ব্যয় ৫৭৯ কোটি ১৪ লাখ টাকা। এখানে কিলোমিটারে ব্যয় হবে ২ কোটি ৮২ লাখ ৫০ হাজার টাকা। আর ১৮৭ কিলোমিটার স্যুয়ারেজ নেটওয়ার্ক পুনর্নির্মাণে ব্যয় ৪৭৭ কোটি ১০ লাখ টাকা। এখানে ব্যয় হবে কিলোমিটারে ২ কোটি ৫৫ লাখ ১৩ হাজার টাকা। আর ৭০ কিলোমিটার স্যুয়ারেজ নেটওয়ার্ক পুনর্নির্মাণে ব্যয় হবে ২১ কোটি টাকা। এখানে কিলোমিটারে ব্যয় ৩ কোটি টাকা। তিন ধরনের খরচ প্রতি কিলোমিটারে।

পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগ বলছে, এখানে এত সংখ্যক পরামর্শকের প্রয়োজন নেই। ডিজাইন পর্যালোচনা সুপারভিশন পরামর্শক ও প্রকল্প ব্যবস্থাপনা পরামর্শকের কোনো যৌক্তিকতা কি আছে। পাশাপাশি জেন্ডার অ্যাকশন প্ল্যানে পরামর্শক ও কারিগরি পরামর্শক বাদ দিতে হবে। আর বিদেশ প্রশিক্ষণ খাতে ট্যুর ব্যয় কমাতে হবে। স্থানীয় প্রশিক্ষণের বিস্তারিত উল্লেখ করা দরকার। এখানে ঋণের সুদহার হলো লাইবোরের সাথে ২ শতাংশ সুদ দিতে হবে বাংলাদেশকে। পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, এই ব্যয় নিয়ে একটা সংশয় ছিল। এখানে চার হাজার কোটি টাকা ধরা হয়েছিল। পরে ২০০ কোটি টাকা বাদ দেয়া হয়েছে; যা পয়ঃশোধনাগার পরিচালনার জন্য জিওবি খাত থেকে ধরা হয়।

এমজে/