কাতার এয়ারওয়েজের টিকিট নেই, কার্যালয়ে দীর্ঘ লাইন-ক্ষোভ

কাতার এয়ারওয়েজের টিকিট নেই, কার্যালয়ে দীর্ঘ লাইন-ক্ষোভ

দীর্ঘদিন পর আন্তর্জাতিক ফ্লাইট চলাচলে বাংলাদেশের বেসামরিক ফ্লাইট চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার পর কাতার এয়ারওয়েজকে ফ্লাইট চলাচলের অনুমতি দেয়া হয়। কাতারের দোহায় বাংলাদেশিদের প্রবেশ করতে না দেয়া হলেও দেশটি থেকে ট্রানজিট সুবিধা নিয়ে ইউরোপের দেশগুলোতে যেতে পারবেন প্রবাসীরা। তবে ইউরোপ-আমেরিকাসহ কাতার এয়ারওয়েজের কোনো দেশের টিকিটই পাচ্ছেন না প্রবাসীরা।

টিকিটের জন্য মঙ্গলবার ভোর থেকে কাতার এয়ারওয়েজের ১৮৬ তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল এলাকার এসপিএল ওয়েস্টার্ন টাওয়ারের কার্যালয়ের বাইরে দীর্ঘ লাইন ধরেছেন।

মো. শামীম হোসেন নামে এক ইতালি প্রবাসী বলেন, আমি ভোর ৬টা থেকে এসে কার্যালয়ের বাইরে অবস্থান করছি। তারা টিকিট দেয়নি। তাদের সবকয়টি ফোন নম্বরে ফোন দিলে কেউ ধরেনি। হঠাৎ অফিসের ভেতর থেকে একজন এসে বললেন ১৭ জুলাইয়ের আগ পর্যন্ত সব ফ্লাইটের সিটের বুকিং শেষ। এরপরের টিকিটের জন্য আবেদনের প্রক্রিয়া পরবর্তীতে জানিয়ে দেয়া হবে।

সেলিম হাসান নামে জার্মানি প্রবাসী বলেন, গত ৫ দিন ধরে তাদের সবকয়টি নম্বরে ফোন দিয়েছি, কেউ রিসিভ করেনি। আমার ছুটি শেষ হয়ে গেছে জুনের ১ তারিখ। এখন জার্মানি ফিরতে না পারলে চাকরি থাকবে না। দেশে থেকেও সরকারের কোনো প্রণোদনা পেলাম না। এসে দেখি টিকিট নেই। একজন কর্মকর্তা এসে বললেন, সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত না করতে পারায় অফিস বন্ধ করা হয়েছে। এখন আমরা কী করবো বুঝতে পারছি না।

জাহাঙ্গীর আলম নামে আরেক প্রবাসী বলেন, আমি ইতালির রোম থেকে ১০ ফেব্রুয়ারি দেশে ফিরি। আগামী ২২ জুন আমার রিটার্ন টিকিট। তবে গতকাল কাতার এয়ারওয়েজের অফিসে গেলে তারা জানায়, আমার ওই রিটার্ন টিকিট দিয়ে আমি ফিরতে পারবো না। রোমে যেতে হলে আমাকে নতুন করে টিকিট কাটতে হবে। সেদেশে গিয়ে আগের রিটার্ন টিকিটের জন্য রিফান্ড আবেদন করতে হবে।

প্রবাসীদের এসব সমস্যা নিয়ে জানতে চাইলে কাতার এয়ারওয়েজের হটলাইন নম্বর ০৯৬১০-৮০০৮০০ নম্বরে গত ৪ দিন ৯ বার ফোন দিয়ে সংযোগ পাওয়া যায়নি। তাদের বিমানবন্দরের ও মূল কার্যালয়ের ল্যান্ডলাইনে কমপক্ষে ১০ বার ফোন দিলেও কেউ ধরেনি। কাতার এয়ারওয়েজের বাংলাদেশের জেনারেল সেলস এজেন্ট গ্ল্যালাক্সি হলিডেজের নম্বরে গত ৩ দিন ধরে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তাদের কেউ ফোন ধরেনি।

এর আগে কাতার এয়ারওয়েজের আবেদনের ভিত্তিতে তাদের বাংলাদেশে ফ্লাইট পরিচালনার অনুমতি দেয় বেবিচক। ১৬ জুন থেকে সপ্তাহে ৩টি ফ্লাইট পরিচালনার সিদ্ধান্ত নেয় কাতার এয়ারওয়েজ। বাংলাদেশের ফ্লাইটের ক্ষেত্রে তারা বোয়িং৭৭৭-৩০০ইআর মডেলের প্লেন ব্যবহার করছে। এই প্লেনে বিজনেস ও ইকোনমি ক্লাসের মোট ৩৫৮টি সিট রয়েছে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে তারা কেবল ২৫০ থেকে সর্বোচ্চ ২৭৫ জন যাত্রী বহন করতে পারবে। এক্ষেত্রে সপ্তাহে ৭৫০ থেকে ৮০০ জন প্রবাসী দেশ ছাড়তে পারবেন। অথচ দেশে প্রায় অর্ধলক্ষ প্রবাসী প্রবাসে কাজে ফেরার অপেক্ষায় আছেন।

এর আগে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে গত ২১ মার্চ থেকে ৩১ মার্চ পর্যন্ত যুক্তরাজ্য, চীন, হংকং, থাইল্যান্ড ছাড়া সব দেশের সঙ্গে এবং অভ্যন্তরীণ রুটে যাত্রীবাহী ফ্লাইট চলাচল বন্ধের ঘোষণা দিয়েছিল বেবিচক। এরপর আরেকটি আদেশে চীন বাদে সব দেশের সাথে ৭ এপ্রিল পর্যন্ত বিমান চলাচলে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। এই নিষেধাজ্ঞা সরকারি সাধারণ ছুটির সাথে সমন্বয় করে পর্যায়ক্রমে ১৪ এপ্রিল, ৩০ এপ্রিল, ৭ মে, ১৬ মে, ৩০ মে এবং ১৫ জুন পর্যন্ত বাড়ানো হয়।

১৬ জুন থেকে ঢাকা থেকে লন্ডন রুটে এবং কাতার রুটে ফ্লাইট চলাচল করার অনুমতি দেয় বেবিচক। তবে কাতারে বাংলাদেশি প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। তাই যাত্রীরা শুধুমাত্র ট্রানজিট হিসেবে কাতার ব্যবহার করে অন্যান্য দেশে যেতে পারবেন।

দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর অভ্যন্তরীণ রুটে ঢাকা, সিলেট, চট্টগ্রাম, সৈয়দপুর ও যশোরে রুটে ফ্লাইট চলাচলের অনুমতি দেয় বেবিচক।

এমজে/