ইউএনওর ওপর হামলাকে কেউ কেউ ‘চুরির ঘটনা’ বলে অপপ্রচার চালাচ্ছে

ইউএনওর ওপর হামলাকে কেউ কেউ ‘চুরির ঘটনা’ বলে অপপ্রচার চালাচ্ছে

বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন সভাপতি হেলালুদ্দীন আহমদ

দিনাজপুরের ঘোড়াঘাটের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ওয়াহিদা খানমের ওপর হামলার উদ্দেশ্য চুরি নয়, হত্যার উদ্দেশে তাঁর ওপর আক্রমণ করা হয়েছে। কিন্তু কোনো কোনো মহল ঘটনাটি ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার লক্ষ্যে ‘বিচ্ছিন্ন ও চুরির ঘটনা’ বলে চালিয়ে দেওয়ার অপপ্রচার চালাচ্ছে।

এই অভিযোগ করেছে বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন (বিএএসএ)।

শনিবার বিকালে রাজধানীর ইস্কাটনের বিয়াম ফাউন্ডেশন মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলন করে সংগঠনটি বলছে বিষয়টি আরও গভীরভাবে তদন্ত হলে প্রকৃত ঘটনা বেরিয়ে আসবে।

গত বুধবার গভীর রাতে ইউএনও ওয়াহিদা খানম ও তাঁর বাবা ওমর আলীর ওপর হামলা করে দুর্বৃত্তরা। এই ঘটনায় আটক তিনজন র‍্যাবের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে হামলায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন। ‘চুরির অভিপ্রায়’ থেকেই নৃশংস এই হামলার ঘটনা ঘটে বলেও আটককৃতরা র‍্যাবকে জানিয়েছে বলে উল্লেখ করেছে র‍্যাব। অবশ্য র‍্যাব বলছে, প্রকৃত ঘটনা জানার জন্য আরও সময় দিতে হবে, আরও তদন্ত করতে হবে, প্রয়োজনে সম্পৃক্তদের রিমান্ডে নিতে হবে।

সংবাদ সম্মেলনে অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ও স্থানীয় সরকার বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ বলেন, অ্যাসোসিয়েশন মনে করে এটি কোনো চুরির ঘটনা নয়, হত্যাকাণ্ডের অভিপ্রায় নিয়ে ইউএনওকে আক্রমণ করা হয়েছে। কারণ যখন ইউএনও এবং তাঁর বাবাকে আঘাত করা হয়, তখন দুর্বৃত্তরা ইউএনওর কোনো সম্পদ চুরি করেনি বা বাসা থেকে কোনো জিনিস খোয়াও যায়নি। এমনকি তাঁর বিছানার ওপর পড়ে থাকা মোবাইলটিও নেয়নি। এটি একটি পরিকল্পিত আক্রমণের ঘটনা। এই ঘটনার সঙ্গে আরও অনেক ব্যক্তি সম্পৃক্ত থাকতে পারে।

অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি বলেন, ইউএনও ওয়াহিদা খানম একজন সৎ ও নির্ভীক কর্মকর্তা। তিনি কোনো দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দিতেন না। বিভিন্ন স্বার্থান্বেষী মহল তাঁর ওপর বেআইনি তদবিরে ব্যর্থ হয়ে প্রতিহিংসা চরিতার্থ করার জন্য এই ঘটনা ঘটিয়ে থাকতে পারে। এই ঘটনার প্রকৃত রহস্য উদ্‌ঘাটন করে দুর্বৃত্তদের আইনের আওতায় আনতে হবে।

এ সময় সংগঠনের মহাসচিব ও জনপ্রশাসন সচিব শেখ ইউসুফ হারুন বলেন, ইউএনও ওয়াহিদা খানম ইদানীং কিছু অবৈধ উচ্ছেদ করেছেন। আরও কিছু উচ্ছেদ করার কথা। এ জন্য কিছু লোক তাঁর ওপর সংক্ষুব্ধ হয়েছে। সেখানকার বালুমহাল থেকে যারা অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে তাদেরও বাধা দিয়েছেন ইউএনও। এসব কারণে হয়তো প্রভাবশালী কেউ ক্ষিপ্ত হতে পারে। এই ঘটনা সেটিরও বহিঃপ্রকাশ হতে পারে বলে তাঁরা মনে করেন। তবে তদন্তের স্বার্থে এখন সুনির্দিষ্টভাবে কাউকে উদ্দেশ্যে করে কিছু বলতে চান না তাঁরা।

সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি হেলালুদ্দীন আহমদ বলেন, যেহেতু পুলিশ, র‍্যাব ও সিআইডি এই ঘটনাটি তদন্ত করছে তাই অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক কোনো তদন্ত কমিটি গঠন করা যায় না। তবে তদন্তকাজে সহযোগিতা করার জন্য রংপুরের বিভাগীয় কমিশনারের নেতৃত্বে একটি দল গঠন করে দেওয়া হয়েছে। তারা প্রয়োজনে যারা তদন্ত করছে তাদের সঙ্গে সময়ে সময়ে মত বিনিময় করবেন এবং তদন্তকাজের গতিবিধি পর্যালোচনা করবেন।

ইউএনওদের নিরাপত্তার ওপর গুরুত্বারোপ করে হেলালুদ্দীন আহমদ বলেন, সশস্ত্র আনসার সংযুক্ত করা হয়েছে। কিন্তু ইউএনওদের দাবি ব্যাটালিয়ন আনসার মোতায়েন করা হোক। সব জায়গায় হয়তো ব্যাটালিয়ন আনসার পাওয়া যাবে না। তাই যেখানে ব্যাটালিয়ন আনসার পর্যাপ্ত থাকবে সেখানে যেন ব্যাটালিয়ন নিয়োগ করা হয়, সেই দাবি তাঁরাও জানাচ্ছেন।

সম্প্রতি মাদারীপুরের নতুন জেলা প্রশাসক রহিমা খাতুনের বিরুদ্ধে কিছু অবৈধ বালু উত্তোলনকারী ও একজন প্রভাবশালী ব্যক্তির প্ররোচনায় ফৌজদারি আদালতে মামলা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন হেলালুদ্দীন আহমদ। তিনি বলেন, ‘অসংলগ্ন কথাবার্তায়’ ভরা একটি আরজির ভিত্তিতে একজন জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের বিরুদ্ধে মামলা নজিরবিহীন এবং দুর্ভাগ্যজনকও বটে। এভাবে মামলা গ্রহণ করা হলে জেলা প্রশাসন কি করে তাঁর দায়িত্ব পালন করবেন? এ জন্য অবিলম্বে এই মামলাটি সম্পূর্ণভাবে প্রত্যাহারসহ ‘মিথ্যা মামলা’ দায়েরকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।

সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন ঢাকা অফিসার্স ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মেজবাহ উদ্দিন, বিয়াম ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক মিজানুর রহমান।