রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে: অ্যামনেস্টি

রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে: অ্যামনেস্টি

কক্সবাজারের কুতুপালং রোহিঙ্গা শিবিরে মাদক ব্যবসার নিয়ন্ত্রণকে কেন্দ্র করে দুই প্রতিপক্ষ সংগঠনের মধ্যে সহিংস সংঘাতের পর কমপক্ষে ২,০০০ শরণার্থী অন্যান্য শিবিরে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছেন। ওই ঘটনায় ৭ই অক্টোবর কুতুপালং শরণার্থী শিবিরের প্রায় ১ ডজন আশ্রয়কেন্দ্র পুড়িয়ে ফেলা হয়। এই সহিংস সংঘাতের প্রেক্ষিতে শরণার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতের আহবান জানিয়েছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল।

এক বিজ্ঞপ্তিতে সংগঠনটির দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক ক্যাম্পেইনার সাদ হামাদি বলেন, ‘শিবিরের ভেতরের পরিস্থিতি অত্যন্ত বিপজ্জনক। কর্তৃপক্ষ যদি অবিলম্বে সহিংসতা নিরসন ও শরণার্থীদের সুরক্ষায় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ না নেয়, তাহলে আরো রক্তপাতের গুরুতর আশঙ্কা রয়েছে।’

তিনি আরো বলেন, ‘সবচেয়ে ভুক্তভোগী হলেন সংঘাতে দুই পক্ষের মধ্যে আটকা পড়া রোহিঙ্গা শরণার্থীরা। বাংলাদেশ সরকারকে অবশ্যই যতদিন প্রয়োজন ততদিন শিবিরে নিরাপত্তা বৃদ্ধি করতে হবে। পাশাপাশি জড়িতদের বিচারের আওতায় আনতে অবিলম্বে সহিংসতার বিষয়ে পক্ষপাতহীন তদন্ত শুরু করতে হবে।’

রোহিঙ্গা শরণার্থীরা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালকে বলেছেন যে, শরণার্থী শিবিরে মাদক চোরাচালানের সঙ্গে জড়িত একটি দল ও আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভ্যাশন আর্মি (আরসা) নামে আরেকটি সশস্ত্র গোষ্ঠীর মধ্যে শিবিরের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে সংঘাত বাধে।

খবরে এসেছে যে, দুই দলের মধ্যে আংশীদারিত্ব নিয়ে চলা একটি আলোচনা থেমে গেলে এই সংঘাত শুরু হয়।

স্থানীয় সংবাদ মাধ্যমে বলা হয়, উভয় দল একে অপরের বিরুদ্ধে বন্দুক ও লোহার তৈরি দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র ব্যবহার করেছে।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ৬ই অক্টোবর শিবিরে অতিরিক্ত নিরাপত্তা বাহিনী মোতায়েন করেছে বাংলাদেশি কর্তৃপক্ষ। তবে তারপরও সশস্ত্র সংঘাত অব্যাহত ছিল। গত মাসে বাংলাদেশ সরকারের মন্ত্রী এ কে এম মোজাম্মেল হক বলেছিলেন, শিবিরে নজরদাড়ি বাড়াতে প্রহরীদুর্গ ও সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন করা হবে।

অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের সঙ্গে যেসব রোহিঙ্গা কথা বলেছেন, তাদের মতে, মেথাফেটামিন ট্যাবলেট নামে একটি মাদকের বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টাই মূলত সংঘাত শুরু হওয়ার অন্যতম কারণ। মিয়ানমারে উৎপাদিত ওই মাদক বাংলাদেশে পাচার হয়।

অবৈধ মাদক বাণিজ্যের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ সরকারের সহিংস দমনপীড়ন (যার মধ্যে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের অভিযোগও রয়েছে) অব্যাহত থাকায়, শরণার্থীদের মধ্যে আশঙ্কা রয়েছে যে, এসব সহিংস সংঘাতের কারণে শিবিরের প্রত্যেকে আরো বেশি ঝুঁকিতে পড়েছে।

এ প্রসঙ্গে সাদ হামাদি বলেন, ‘কর্তৃপক্ষের এমন কোনো পদক্ষেপ নেয়া উচিত হবে না যার কারণে শরণার্থীদের মানবাধিকার লঙ্ঘন হয়। এই সহিংসতা করছে অপরাধী চক্রের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। তাদেরকে এসব সহিংস অপরাধের জন্য সুষ্ঠু বিচারের আওতায় আনা উচিত।’

রোহিঙ্গা শরণার্থীরা আরো চিন্তিত যে এই অব্যাহত সহিংসতাকে পুঁজি করে শরণার্থীদের ভাষানচরে স্থানান্তরিত করতে পারে সরকার। বঙ্গোপসাগরের প্রত্যন্ত দ্বীপ ভাষানচর মানুষের নিরাপদ বসবাসের উপযোগী কিনা, সেই বিষয়ে জাতিসংঘের মূল্যায়নের সুযোগ দেয়া হয়নি। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালসহ বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠনকে শরণার্থীরা জানিয়েছেন যে, দ্বীপটির অনিরাপদ অবস্থা ও বিচ্ছিন্নবস্থার কারণে তারা সেখানে যেতে চান না।

সাদ হামাদি বলেন, ‘ভাষানচরে শরণার্থীদের পুনর্বাসন করা হলে তাদের বিদ্যমান নিরাপত্তাহীনতা বন্ধ হবে না, শরণার্থী সংকটেরও কোনো দীর্ঘস্থায়ী সমাধান আসবে না। বরং কর্তৃপক্ষকে অবশ্যই রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সঙ্গে কথা বলতে হবে, তাদের উদ্বেগগুলো আমলে নিতে হবে এবং যেসব সিদ্ধান্ত তাদেরকে প্রভাবিত করে, সেসব সিদ্ধান্তে তাদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে।’