আইসিইউ যেন সোনার হরিণ

আইসিইউ যেন সোনার হরিণ

করোনা রোগীর সংখ্যা উদ্বেগজনক হারে বেড়ে যাওয়ায় বেড়েছে আইসিইউর চাহিদা। রাজধানীসহ সারাদেশের সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালেই একই চিত্র। কোথাও নেই আইসিইউ বেড। একটি আইসিইউ বেডের জন্য অপেক্ষা করতে হচ্ছে ২০ থেকে ৩০ জন রোগীকে।

তবে করুণ বাস্তবতা হচ্ছে, একজন রোগীর মৃত্যুর পরই কেবল আইসিইউ বেড পাচ্ছে অপেক্ষারত রোগীদের কেউ কেউ।এ ছাড়া রাজধানীর কোডিভ ডেডিকেটেড কয়েকটি হাসপাতালে সাধারণ বেডও খালি পাচ্ছেন না করোনা রোগীরা।

কিশোরগঞ্জের নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে অক্সিজেন বেডে ভর্তি ছিলেন মাসুদা আক্তার (৪০) নামে নারী কোভিড রোগী। অবস্থা অবনতি হওয়ায় চিকিৎসকরা তাকে ঢাকায় নিয়ে আসার পরামর্শ দেন। বুধবার থেকে তাদের স্বজনরা ঢাকার কোনো হাসপাতালে অক্সিজেনসহ বেডের ব্যবস্থা করতে পারেননি। রোগীর স্বজন মামুন জানান, কুর্মিটোলা হাসপাতালে কোনো বেড ফাঁকা পাওয়া যায়নি। সেখানে সিটের চেয়ে রোগী বেশি। সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে যোযোযোগ করা হলে সেখান থেকে জানানো হয়, বেডের ব্যবস্থা হলেও আইসিসিইউ দিতে পারবে না। তাদের ১০টি আইসিইউ রয়েছে। তবে এর জন্য দীর্ঘ সিরিয়াল রয়েছে। এর এক দিন পর কোনোভাবে মহাখালীর ডিএনসিসি হাসপাতালে অক্সিজেনসহ বেডের ব্যবস্থা করতে পেরেছেন। তার জন্য বহু কাঠখড় পোড়াতে হয়েছে। পরে কর্তৃপক্ষ রোগীর অবস্থা খারাপ দেখে আইসিইউতে নেন। তিনি বলেন, আইসিইউর অবস্থা এমন যে, এখানে একটি বেডের জন্য চার-পাঁচজন দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছেন। কখন বেড খালি হবে।আমি দুই দিন ধরে পথে পথে ঘুরে ক্লান্ত হয়ে পড়েছি।

কুর্মিটোলা হাসপাতালের দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা বুধবার জানান, হাসপাতালটিতে রোগী ধারণ ক্ষমতার চেয়ে ২৫০ জন বেশি রয়েছে। তাই নতুন রোগী ভর্তি নেওয়া যাচ্ছে না।আর এখানে কোনো আইসিইউ ফাঁকা নেই।এমন চিত্র রাজধানীর প্রায় সব কোভিড ডেডিকেটেড হাসপাতালগুলোতে।

এদিকে বৃহস্পতিবার মহাখালীর ডিএসিসি হাসপাতালে গিয়ে দেখা গেছে, দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে অ্যাম্বুলেন্সে করে আসছেন করোনা রোগীরা। তাদেরকে অ্যাম্বুলেন্সের ভেতরে অপেক্ষা করতে হচ্ছে। বেড খালি হলেই তাদেরকে ভর্তি করানো হচ্ছে।

ব্রাক্ষ্মণবাড়িয়া থেকে আসা এক কোভিড রোগীর স্বজন ইউসুফ জানান, জেলা সদর হাসপাতালে পর্যাপ্ত চিকিৎসার ব্যবস্থা না থাকায় রোগীকে ডিএনসিসি হাসপাতালে আনা হয়েছে। তবে রোগীর চাপ বেশি থাকায় রোগীকে অ্যাম্বুলেন্সেই রাখা হয়েছে। চাপ কমলেই তাকে ভর্তি করানো হবে।রোগীর অবস্থা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার রোগীর আইসিইউ দরকার। কিন্তু ভর্তি হতেই তো ঝামেলায় পড়েছি। হাসপাতাল থেকে বলা হয়েছে, খালি হলেই আইসিইউ দিতে পারবে। এমন রোগীকে তার নিজ দায়িত্বেই ভর্তি হতে হবে।

রাজধানীর সবচেয়ে এ বড় হাসপাতালটিতে দুপুর ১টা দিকে দেখা গেছে, একে একে সাইরেন বাজিয়ে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে করোনা রোগী আসছে। আবার এখানে থেকে বের হয়েও যেতে দেখা গেছে। অনেককে আবার চিকিৎসা শেষে মৃত স্বজনকে নিয়ে হতাশ হয়ে বাড়ি ফিরে যেতে হয়েছে।

হাসপাতালে কর্তব্যরত এক চিকিৎসক জানান, কোভিড রোগীর চাপ বাড়ায় আইসিইউ সংকট দেখা দিয়েছে। ফলে সুস্থ বা রোগী মারা গেলেই আইসিইউ দেওয়া যাচ্ছে।