গার্মেন্টস খোলার খবরে দৌলতদিয়া ঘাটে যাত্রীদের ভিড়

গার্মেন্টস খোলার খবরে দৌলতদিয়া ঘাটে যাত্রীদের ভিড়

করোনাভাইরাসের সংক্রমণরোধে চলমান কঠোর বিধিনিষেধের মধ্যে আগামীকাল রোববার থেকে রফতানিমুখী শিল্প-কারখানা খুলে দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে সরকার। এ খবরে রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া ফেরিঘাটে ঢাকামুখী যাত্রীদের ভিড় ব্যাপকভাবে বেড়েছে। কঠোর বিধিনিষিধে ঘাটে লঞ্চ ও ট্রলার চলাচল বন্ধ থাকায় গত এক মাস ধরে ফেরিই হচ্ছে যাত্রীদের পারাপারের একমাত্র ভরসা।

তাই শনিবার সকাল থেকেই দৌলতদিয়া ঘাট থেকে ছেড়ে যাওয়া প্রতিটি ফেরিতে যাত্রীদের প্রচণ্ড ভিড় ছিল। তবে ফেরি পারাপারের সময় স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দূরত্ব মানছেন না যাত্রীরা। অনেক যাত্রীর মুখেই নেই মাস্কও।

এদিকে গণপরিবহন বন্ধ থাকায় যে যেভাবে পাড়ছেন ফেরিঘাটে আসছেন। আর গাদাগাদি করে ফেরি পার হয়ে ঢাকা পৌঁছাতে যানবহনের অভাবে দুর্ভোগের সীমা নেই কর্মজীবী মানুষের। অনেকেই এসেছেন স্ত্রী-সন্তানদের সাথে নিয়ে। যানবাহন না পেয়ে রোদ-বৃষ্টিতে তারা পড়েছেন সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে। আবার যারা যানবাহন পাচ্ছেন তাদেরকে গুণতে হচ্ছে অতিরিক্ত কয়েকগুণ ভাড়া। পাটুরিয়া ঘাট থেকে গাবতলী পর্যন্ত পৌঁছাতে একেকজনকে ১৫ শ’ পর্যন্ত টাকা খরচ করতে হচ্ছে বলেও তথ্য পাওয়া গেছে।

ঘাট সংশ্লিষ্টরা বলছে, শুক্রবার কারখানা খোলার ঘোষণার পর পরই রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া ফেরিঘাটে ঢাকামুখী মানুষের চাপ বেড়েছে। শনিবার সকাল থেকে ঘাটে কর্মজীবী মানুষের এই উপচেপড়া ভিড় প্রচণ্ড রূপ নিয়েছে।

এ দিকে গণপরিবহন বন্ধ থাকায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে ভেঙে ভেঙে দৌলতদিয়া ঘাটে এসে ফেরিতে উঠছেন যাত্রীরা। দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বিভিন্ন জেলা থেকে যাত্রীরা অতিরিক্ত ভাড়া দিয়ে মাইক্রোবাস, প্রাইভেটকার, মাহেন্দ্র, মোটরসাইকেল বা অটোরিকশায় যে যেভাবে পাড়ছেন ঘাটে আসছেন।

ঢাকামুখী যাত্রীরা জানিয়েছেন, রোববার থেকে তাদের কর্মস্থল খুলছে। এ জন্য ভোগান্তি সত্ত্বও ঢাকায় যেতে হচ্ছে। দূরপাল্লার বাস বন্ধ থাকায় ভেঙে ভেঙে আসতে হচ্ছে তাদের। একইসাথে কয়েকগুণ বেশি ভাড়া গুণতে হচ্ছে নিম্ন আয়ের মানুষদের।

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন করপোরেশনের (বিআইডব্লিউটিসি) দৌলতদিয়া ঘাটের ব্যবস্থাপক শিহাব উদ্দিন বলেন, বর্তমানে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটে ছোট-বড় মিলিয়ে আটটি ফেরি চলাচল করছে। তবে ঘাটে পারের অপেক্ষায় কোনো গাড়ির সিরিয়াল নেই। বিআইডব্লিউটিসি কর্তৃপক্ষ জানায়, লকডাউনের কারণে সীমিত পরিসরে ফেরি চলাচল করছে। সেই সুযোগে গত ২৩ জুলাই থেকেই শত শত যাত্রী পারাপার হচ্ছে এই রুটে। তবে এই সংখ্যা শুক্রবার থেকে ব্যাপকভাবে বাড়তে শুরু করেছে।

করোনার সংক্রমণরোধে গত ২৩ জুলাই সকাল ৬টা থেকে কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়। এ বিধিনিষেধ চলবে আগামী ৫ আগস্ট মধ্যরাত পর্যন্ত। বিধিনিষেধে সব ধরনের গণপরিবহন, জরুরি সেবার সাথে জড়িত ছাড়া সরকারি-বেসরকারি অফিস বন্ধ আছে। তবে গত সপ্তাহে রোববার থেকে সরকারি-বেসরকারি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান খুলে দেয়া হয়। একইসাথে খাদ্যপণ্য উৎপাদন-প্রক্রিয়াকরণ, চামড়া পরিবহন,সংরক্ষণ ও ওষুধ খাতের প্রতিষ্ঠানগুলো খোলা রাখা হয়।

এর মধ্যে গার্মেন্টসসহ সব ধরনের শিল্প-কারখানা খুলে দিতে সরকারের কাছে অনুরোধ জানান মালিকরা। বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলামের সাথে বৈঠক করে বিভিন্ন ব্যবসায়ী সংগঠনের নেতারা এ দাবি জানান। ওই দিন দাবি নাকোচ করার কথা বলা হলেও এরপর শুক্রবার রফতানিমুখী শিল্প-কারখানা খুলে দেয়ার ঘোষণা দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।

প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় আগামী ১ আগস্ট সকাল ৬টা থেকে রফতানিমুখী সব শিল্প ও কলকারখানা আরোপিত বিধিনিষেধের আওতা বহির্ভূত রাখা হলো। এরপরই সারাদেশ থেকে রাজধানীমুখী জনস্রোত শুরু হয়। যদিও বন্ধ রয়েছে গণপরিবহন।

এমজে/